তালেবান সরকার থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে এখন বেশ কিছু সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে (যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স) নির্দিষ্ট ধরনের পোস্ট বা কনটেন্ট সংকুচিত বা সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আসে এমন এক সপ্তাহ পর, যখন দেশব্যাপী ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবা দুই দিন বন্ধ রাখা হয়েছিল।
নতুন নিয়ন্ত্রণ: ফিল্টার আর সীমাবদ্ধতা
- যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্সের মতো সাইটে কিছু ধরনের পোস্ট ফিল্টার করা হচ্ছে।
- তবে তারা স্পষ্ট করে জানায়নি ঠিক কী ধরনের পোস্ট ফিল্টার করা হচ্ছে।
- কাবুলের কিছু ব্যবহারকারীর বক্তব্য, তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থাকা ভিডিওগুলো আর দেখা যাচ্ছে না, আর ইনস্টাগ্রামে প্রবেশ করলেও কার্যকর সীমাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
- মন্ত্রণালয়ের সূত্র আশা করেছে, ইন্টারনেট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে না।
- বর্তমানে, এই ফিল্টারিং প্রায় দেশব্যাপী প্রয়োগ করা হয়েছে এবং অধিকাংশ প্রদেশে এটি কার্যকর হচ্ছে।
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট: দুই দিনের বন্ধ
- সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ এক সপ্তাহ পর আসে, যখন পুরো দেশজুড়ে দুই দিনের জন্য ইন্টারনেট ও যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ ছিল।
- এই দুই দিনের ব্ল্যাকআউট সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজ, ব্যবসা, বিমান চলাচল ও জরুরি সেবায় প্রবল বিঘ্ন ঘটায়।
- বিশেষ করে, ব্ল্যাকআউট নারীদের এবং মেয়েদের ওপর আরও বেশি প্রভাব ফেলে, যাদের অধিকার ইতিমধ্যে কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে।
ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা
- কাবুল ও বিভিন্ন প্রদেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, ধাপে ধাপে কিছু সাইটের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে যাচ্ছে।
- নানগরহার প্রদেশে এক সরকারি অফিসকর্মী বলেছেন, তিনি ফেসবুক খুলতে পারছেন, তবে ছবি দেখতে বা ভিডিও চালাতে পারছেন না।
- তিনি আরও বলেন, “ইন্টারনেট সার্বিকভাবে খুব ধীর।”
- দক্ষিণ কান্দাহারে এক বেসরকারি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার থেকে তার ফাইবার-অপটিক ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে; মোবাইল ডেটা কাজ করছে, তবে ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম খুব ধীর গতির।
সরকারি প্রতিক্রিয়া ও প্রেক্ষাপট
- তালেবান সরকার এখনো এই সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ নীতি সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি।
- গত মাসে, উত্তর প্রদেশ বালখে তালেবানের গভর্নরের মুখপাত্র বলেছিলেন, “অপকর্ম প্রতিরোধের জন্য ইন্টারনেট প্রবেশাধিকার ব্লক করা হচ্ছে।”
- ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকেই তারা ইসলামী শরীয়াহর ব্যাখ্যার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
- আফগান নারীরা বিবিসিকে বলেছেন, ইন্টারনেট ছিল একমাত্র পথ বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার, বিশেষ করে তখন থেকে যখন ১২ বছর বয়সের বেশি মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
- নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগও কঠোরভাবে সীমিত করা হয়েছে এবং সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নারীদের লেখা বইগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
- সাইবার সিকিউরিটি সংগঠন নেটব্লকস জানিয়েছে, “বিভিন্ন পরিষেবাদাতার ওপর এখন নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত; ধরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি ইচ্ছাকৃত।”
- এএফপি সংবাদসংস্থা জানায়, স্মার্টফোন থেকে কখনো কখনো সাইট প্রবেশযোগ্য হলেও তা অনিয়মিত।
- যে ধরনের ফিল্টার এবং সীমিত প্রবেশাধিকার চালু হয়েছে, তা ইন্টারনেট ব্যবহারে স্বায়ত্তশাসন ও তথ্যপ্রবাহের স্বাধীনতাকে জোরালোভাবে সীমিত করতে পারে।
- এই পদক্ষেপ বিশেষ করে তরুণ, নারী এবং শহরজীবীদের জীবনে আরও সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
# আফগানিস্তান, #তালেবান, #সামাজিক_মাধ্যম, #ইন্টারনেট_নিয়ন্ত্রণ,# বিবিসি, #নেটব্লকস, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট