১২:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫
“বাজারে গেলে এখন মনে হয় যুদ্ধ করতে এসেছি” চীন থেকে ২০টি জে-১০ সিই যুদ্ধবিমান কেন কিনতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার? জেন-জি প্রজন্মের আন্দোলন: সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিবাদ কি স্থায়ী পরিবর্তন আনতে পারবে? অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নতুন করে দমন-পীড়ন করছে: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ হাঙ্গেরির ‘প্রলয়ের গুরু’ ক্রাস্নাহরকাই জিতলেন ২০২৫ সালের নোবেল সাহিত্য পুরস্কার স্যাটানট্যাঙ্গো: এক অন্ধকার নৃত্য ‘আইস ব্যাটারি’ প্রযুক্তি: পরিবেশবান্ধব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে নতুন দিগন্ত টেবিলের নিচে: পাকিস্তানে মেধাকেন্দ্রিক ব্যবস্থার ব্যর্থতার গল্প পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১০৪) এক মিনিটে শেখা খাদ্য উৎপাদনের কৌশল: নিউজিল্যান্ডের গার্ডেনার অ্যাড্রিয়ান সাদারল্যান্ডের অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা

জাপানে প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন যুগ: স্টার্টআপের উত্থান ভাঙছে পুরোনো নিষেধাজ্ঞার প্রাচীর

প্রযুক্তির নতুন যোদ্ধারা

নাগোয়া শহরের উপকণ্ঠে তাকুমি ইয়ামাগুচি মাথায় মোটরসাইকেলের হেলমেট পরে একটি লম্বা কাগজের ড্রোন ছুড়ে দেন আকাশে। প্রথম পরীক্ষায় সেটি ভেঙে পড়ে, কিন্তু দ্বিতীয়বার উড়ান সফল হয়। এই ড্রোনটি তৈরি হয়েছে কার্ডবোর্ড দিয়ে—যা সস্তা, হালকা ও গণউৎপাদনযোগ্য। ইয়ামাগুচির কোম্পানি ‘এয়ার কামুই’ এমনই স্বল্পমূল্যের ড্রোন তৈরি করছে, যা নজরদারি বা ক্ষুদ্র বিস্ফোরক বহন করে স্বর্ম (swarm) আক্রমণে ব্যবহৃত হতে পারে।

ইয়ামাগুচি বলেন, “আমরা চারপাশে নানা সমস্যায় ঘেরা। এখন দেশের নিরাপত্তায় আমাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।”

চীনের তাইওয়ান দখলের আশঙ্কা, উত্তর কোরিয়ার অস্থিতিশীলতা ও রাশিয়ার আক্রমণাত্মক অবস্থান—এই তিন দিক থেকেই জাপানের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এসব কারণেই নতুন প্রজন্ম প্রতিরক্ষা শিল্পে যুক্ত হচ্ছে আগ্রহ নিয়ে।

শান্তিবাদের দেশ থেকে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে উত্থান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান সংবিধানে যুদ্ধ ত্যাগের অঙ্গীকার করে এবং “শান্তির সংবিধান” গ্রহণ করে। তবে ১৯৭০-এর দশক নাগাদ দেশটি গড়ে তোলে আত্মরক্ষা বাহিনী (Self-Defense Forces বা SDF), যা মূলত ভূমিকম্প ও দুর্যোগে সাহায্যকারীরূপে পরিচিত।

Japan's push for a dual-use defence startup ecosystem | East Asia Forum

যুদ্ধোত্তর নীতির কারণে প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ, বিশেষ করে অস্ত্র রপ্তানিতে, ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞার আওতায়। এমনকি ২০১৭ সালেও জাপানের বিজ্ঞান কাউন্সিল সামরিক গবেষণার বিপক্ষে অভিমত দেয়।

কিন্তু এখন জনমত পাল্টেছে। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ নাগরিক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে। ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন নেতা সানায়ে তাকাইচি প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দ্বিগুণ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন এবং সংবিধান সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—যাতে জাপানের সামরিক অধিকারকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।

ব্যয়ের বিপুল বৃদ্ধি ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ

২০২২ সালে সরকার ঘোষণা দেয়, আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশে নেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রও জাপানকে দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিচ্ছে—নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে, যেন মার্কিন সুরক্ষার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা না থাকে।

এই বাজেটের মাধ্যমে জাপান দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সামরিক স্যাটেলাইট ও দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে।

20240610N Japan VC 1

স্টার্টআপ ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত

সরকারের প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত গবেষণা অনুদান কর্মসূচিতে আগ্রহ বাড়ছে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১৩৪টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে ২০২১ সালে সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৯।

২০২৪ সালে গঠিত হয় ‘ডিফেন্স ইনোভেশন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থাগুলির আদলে পরিচালিত। এর লক্ষ্য, উদীয়মান প্রযুক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তায় কাজে লাগানো।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রুমিকো ইচিকাওয়া বলেন, “স্টার্টআপগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক গড়ে তোলা এখন অত্যন্ত জরুরি।”

আন্তর্জাতিক বাজারে জাপানের প্রত্যাবর্তন

অস্ট্রেলিয়া ২০২৫ সালে ঘোষণা দিয়েছে, তারা মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ নেতৃত্বাধীন জাপানি কনসোর্টিয়াম থেকে যুদ্ধজাহাজ কিনবে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের মাত্র দ্বিতীয় বড় রপ্তানি চুক্তি।

তবে অস্ত্র রপ্তানিতে নানা আইনি বাধার কারণে জাপানি বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো সীমিত। গত বছর জাপানের সব স্টার্টআপে মোট বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৫.৩ বিলিয়ন ডলার—যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় মাত্র ২.৫ শতাংশ।

Japan turns to dual-use technologies

দ্বৈত ব্যবহারের প্রযুক্তি: বেসামরিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োগ

সরকার এখন এমন প্রযুক্তিতে জোর দিচ্ছে যা বেসামরিক ও সামরিক উভয় প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য—যেমন স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন ব্যবস্থা বা উচ্চ-শক্তির ফাইবার যা গাড়ি থেকে যুদ্ধবিমান পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহার করা যায়।

টোকিওভিত্তিক ভেঞ্চার কোম্পানি ‘কোরাল ক্যাপিটাল’ ইতিমধ্যে দুটি এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে—‘ওশেনিক কনস্টেলেশনস’ (সমুদ্র ড্রোন নির্মাতা) এবং ‘ওকুমা ডায়মন্ড ডিভাইস’ (হীরক-নির্ভর শক্তি-সাশ্রয়ী সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারক)। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জেমস রিনি বলেন, “জাপানের প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রতিরক্ষা স্টার্টআপ খাতে বড় সুবিধা এনে দেবে।”

মহাকাশ ও ড্রোন প্রযুক্তিতে নতুন উদ্যোগ

স্টার্টআপ ‘এলিভেশনস্পেস’ এমন পুনর্ব্যবহারযোগ্য মডিউল তৈরি করছে, যা মহাকাশ স্টেশনে পে-লোড বহনে সক্ষম হবে এবং হাইপারসনিক অস্ত্র প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। প্রতিষ্ঠাতা কাজুনারি মিয়ামারু বলেন, “জাপান ও তার মিত্রদের নতুন ধরনের আকাশ হুমকির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

অন্যদিকে ইয়ামাগুচির ‘এয়ার কামুই’ প্রথমে নিখোঁজ মানুষ উদ্ধারের জন্য ড্রোন তৈরি করছিল। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারা জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে ড্রোন উন্নয়নে মনোনিবেশ করে।

Japan hunts for dual-use goods makers to aid military expansion | Reuters

২০২৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১০ কোটি ইয়েন তহবিল সংগ্রহ করে। তবে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিনিয়োগকারী প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে বিনিয়োগ প্রত্যাখ্যান করে।

এয়ার কামুইয়ের মূল ড্রোন ‘AirKamuy 150’ বৃষ্টিনিরোধক কার্ডবোর্ডে তৈরি এবং কম খরচে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনযোগ্য। একটির দাম প্রায় ২ হাজার ডলার—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নজরদারি ড্রোনের দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।

একটি সাধারণ কনটেইনারে ৫০০ ড্রোন ফ্ল্যাট প্যাক করা যায় এবং প্রতিটি ড্রোন দুই ঘণ্টারও বেশি সময় উড়তে পারে।

জাপানের প্রতিরক্ষা খাতে নতুন বাস্তবতা

২০২৫ সালের বাজেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ চেয়েছে, আকাশ, সমুদ্রপৃষ্ঠ ও পানির নিচে ব্যবহারের জন্য ড্রোন সংগ্রহে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিদেশি নির্মাতারাও বিবেচনায় রয়েছে।

ইয়ামাগুচি বলেন, “আমাদের পথে নানা ব্যর্থতা এসেছে, কিন্তু প্রতিটি ভুলই আমাদের শেখায়।”

এই মন্তব্য যেন আজকের জাপানের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রতিচ্ছবি—দীর্ঘদিনের শান্তিবাদের আবরণ ভেদ করে এক নতুন বাস্তবতায় প্রবেশ করছে দেশটি, যেখানে প্রযুক্তি, জাতীয় নিরাপত্তা ও উদ্যোক্তা মানসিকতা একসঙ্গে পথ দেখাচ্ছে ভবিষ্যতের দিকে।

জনপ্রিয় সংবাদ

“বাজারে গেলে এখন মনে হয় যুদ্ধ করতে এসেছি”

জাপানে প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন যুগ: স্টার্টআপের উত্থান ভাঙছে পুরোনো নিষেধাজ্ঞার প্রাচীর

০১:০০:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

প্রযুক্তির নতুন যোদ্ধারা

নাগোয়া শহরের উপকণ্ঠে তাকুমি ইয়ামাগুচি মাথায় মোটরসাইকেলের হেলমেট পরে একটি লম্বা কাগজের ড্রোন ছুড়ে দেন আকাশে। প্রথম পরীক্ষায় সেটি ভেঙে পড়ে, কিন্তু দ্বিতীয়বার উড়ান সফল হয়। এই ড্রোনটি তৈরি হয়েছে কার্ডবোর্ড দিয়ে—যা সস্তা, হালকা ও গণউৎপাদনযোগ্য। ইয়ামাগুচির কোম্পানি ‘এয়ার কামুই’ এমনই স্বল্পমূল্যের ড্রোন তৈরি করছে, যা নজরদারি বা ক্ষুদ্র বিস্ফোরক বহন করে স্বর্ম (swarm) আক্রমণে ব্যবহৃত হতে পারে।

ইয়ামাগুচি বলেন, “আমরা চারপাশে নানা সমস্যায় ঘেরা। এখন দেশের নিরাপত্তায় আমাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।”

চীনের তাইওয়ান দখলের আশঙ্কা, উত্তর কোরিয়ার অস্থিতিশীলতা ও রাশিয়ার আক্রমণাত্মক অবস্থান—এই তিন দিক থেকেই জাপানের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। এসব কারণেই নতুন প্রজন্ম প্রতিরক্ষা শিল্পে যুক্ত হচ্ছে আগ্রহ নিয়ে।

শান্তিবাদের দেশ থেকে প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে উত্থান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান সংবিধানে যুদ্ধ ত্যাগের অঙ্গীকার করে এবং “শান্তির সংবিধান” গ্রহণ করে। তবে ১৯৭০-এর দশক নাগাদ দেশটি গড়ে তোলে আত্মরক্ষা বাহিনী (Self-Defense Forces বা SDF), যা মূলত ভূমিকম্প ও দুর্যোগে সাহায্যকারীরূপে পরিচিত।

Japan's push for a dual-use defence startup ecosystem | East Asia Forum

যুদ্ধোত্তর নীতির কারণে প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ, বিশেষ করে অস্ত্র রপ্তানিতে, ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞার আওতায়। এমনকি ২০১৭ সালেও জাপানের বিজ্ঞান কাউন্সিল সামরিক গবেষণার বিপক্ষে অভিমত দেয়।

কিন্তু এখন জনমত পাল্টেছে। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ নাগরিক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে। ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন নেতা সানায়ে তাকাইচি প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দ্বিগুণ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন এবং সংবিধান সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন—যাতে জাপানের সামরিক অধিকারকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।

ব্যয়ের বিপুল বৃদ্ধি ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপ

২০২২ সালে সরকার ঘোষণা দেয়, আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশে নেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রও জাপানকে দীর্ঘদিন ধরে পরামর্শ দিচ্ছে—নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়াতে, যেন মার্কিন সুরক্ষার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা না থাকে।

এই বাজেটের মাধ্যমে জাপান দীর্ঘ-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সামরিক স্যাটেলাইট ও দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে।

20240610N Japan VC 1

স্টার্টআপ ও গবেষণায় নতুন দিগন্ত

সরকারের প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত গবেষণা অনুদান কর্মসূচিতে আগ্রহ বাড়ছে। ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১৩৪টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে ২০২১ সালে সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৯।

২০২৪ সালে গঠিত হয় ‘ডিফেন্স ইনোভেশন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থাগুলির আদলে পরিচালিত। এর লক্ষ্য, উদীয়মান প্রযুক্তিকে জাতীয় নিরাপত্তায় কাজে লাগানো।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রুমিকো ইচিকাওয়া বলেন, “স্টার্টআপগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক লাভজনক সম্পর্ক গড়ে তোলা এখন অত্যন্ত জরুরি।”

আন্তর্জাতিক বাজারে জাপানের প্রত্যাবর্তন

অস্ট্রেলিয়া ২০২৫ সালে ঘোষণা দিয়েছে, তারা মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ নেতৃত্বাধীন জাপানি কনসোর্টিয়াম থেকে যুদ্ধজাহাজ কিনবে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের মাত্র দ্বিতীয় বড় রপ্তানি চুক্তি।

তবে অস্ত্র রপ্তানিতে নানা আইনি বাধার কারণে জাপানি বেসরকারি বিনিয়োগ এখনো সীমিত। গত বছর জাপানের সব স্টার্টআপে মোট বিনিয়োগ ছিল মাত্র ৫.৩ বিলিয়ন ডলার—যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় মাত্র ২.৫ শতাংশ।

Japan turns to dual-use technologies

দ্বৈত ব্যবহারের প্রযুক্তি: বেসামরিক ও সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োগ

সরকার এখন এমন প্রযুক্তিতে জোর দিচ্ছে যা বেসামরিক ও সামরিক উভয় প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্য—যেমন স্বয়ংক্রিয় নেভিগেশন ব্যবস্থা বা উচ্চ-শক্তির ফাইবার যা গাড়ি থেকে যুদ্ধবিমান পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহার করা যায়।

টোকিওভিত্তিক ভেঞ্চার কোম্পানি ‘কোরাল ক্যাপিটাল’ ইতিমধ্যে দুটি এমন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে—‘ওশেনিক কনস্টেলেশনস’ (সমুদ্র ড্রোন নির্মাতা) এবং ‘ওকুমা ডায়মন্ড ডিভাইস’ (হীরক-নির্ভর শক্তি-সাশ্রয়ী সেমিকন্ডাক্টর প্রস্তুতকারক)। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জেমস রিনি বলেন, “জাপানের প্রকৌশল ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা প্রতিরক্ষা স্টার্টআপ খাতে বড় সুবিধা এনে দেবে।”

মহাকাশ ও ড্রোন প্রযুক্তিতে নতুন উদ্যোগ

স্টার্টআপ ‘এলিভেশনস্পেস’ এমন পুনর্ব্যবহারযোগ্য মডিউল তৈরি করছে, যা মহাকাশ স্টেশনে পে-লোড বহনে সক্ষম হবে এবং হাইপারসনিক অস্ত্র প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। প্রতিষ্ঠাতা কাজুনারি মিয়ামারু বলেন, “জাপান ও তার মিত্রদের নতুন ধরনের আকাশ হুমকির বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”

অন্যদিকে ইয়ামাগুচির ‘এয়ার কামুই’ প্রথমে নিখোঁজ মানুষ উদ্ধারের জন্য ড্রোন তৈরি করছিল। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগের পর তারা জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনে ড্রোন উন্নয়নে মনোনিবেশ করে।

Japan hunts for dual-use goods makers to aid military expansion | Reuters

২০২৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি ১০ কোটি ইয়েন তহবিল সংগ্রহ করে। তবে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বিনিয়োগকারী প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিধিনিষেধের কারণে বিনিয়োগ প্রত্যাখ্যান করে।

এয়ার কামুইয়ের মূল ড্রোন ‘AirKamuy 150’ বৃষ্টিনিরোধক কার্ডবোর্ডে তৈরি এবং কম খরচে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনযোগ্য। একটির দাম প্রায় ২ হাজার ডলার—যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নজরদারি ড্রোনের দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।

একটি সাধারণ কনটেইনারে ৫০০ ড্রোন ফ্ল্যাট প্যাক করা যায় এবং প্রতিটি ড্রোন দুই ঘণ্টারও বেশি সময় উড়তে পারে।

জাপানের প্রতিরক্ষা খাতে নতুন বাস্তবতা

২০২৫ সালের বাজেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ চেয়েছে, আকাশ, সমুদ্রপৃষ্ঠ ও পানির নিচে ব্যবহারের জন্য ড্রোন সংগ্রহে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বিদেশি নির্মাতারাও বিবেচনায় রয়েছে।

ইয়ামাগুচি বলেন, “আমাদের পথে নানা ব্যর্থতা এসেছে, কিন্তু প্রতিটি ভুলই আমাদের শেখায়।”

এই মন্তব্য যেন আজকের জাপানের প্রতিরক্ষা শিল্পের প্রতিচ্ছবি—দীর্ঘদিনের শান্তিবাদের আবরণ ভেদ করে এক নতুন বাস্তবতায় প্রবেশ করছে দেশটি, যেখানে প্রযুক্তি, জাতীয় নিরাপত্তা ও উদ্যোক্তা মানসিকতা একসঙ্গে পথ দেখাচ্ছে ভবিষ্যতের দিকে।