১২:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে ফিরতে হতে পারে বেশির ভাগ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে সারাদেশে ২৭০ রেস্টুরেন্টে বিকাশে পেমেন্টে পিৎজায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ছাড় এবারে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দিল্লিতে তালেবান মন্ত্রীর নতুন সাংবাদিক সম্মেলন বান্দরবানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্যকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় সিএমএইচে স্থানান্তর ফারিয়া ইয়াসমিন হচ্ছেন বাটা বাংলাদেশের প্রথম নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক চাকসু কি ডাকসু ও জাকসুর পথেই হাঁটছে?—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোটের হাওয়া, উত্তেজনায় শিক্ষার্থীরা এক বছরে ৬৪ বার—ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২,১৩,৭১৯ টাকায় বরিশালে বিএনপি নেতা স্বামীর হাতে যুব মহিলা লীগের নেত্রী খুনের অভিযোগ প্রধান উপদেষ্টার রোম সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠছে কেন? বোতল সোয়াবিন ১৯৫, পাম ১৬৩— ভোজ্যতেলের নতুন দামে ভোক্তার চাপ দ্বিগুণ

বহু দেশের মনোনয়ন পেলেও নোবেল পাওয়া অনিশ্চিত ট্রাম্পের—সমালোচনায় তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি

নোবেল পুরস্কার জয়ের আকাঙ্ক্ষা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় আকাঙ্ক্ষা হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারকে দেখছেন। গত কয়েক বছরে তিনি নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করে বারবার বলেছেন, তিনি “সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছেন”। পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা সহ বেশ কয়েকটি পক্ষ তাঁকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর বিভাজনমূলক রাজনীতি, একতরফা পররাষ্ট্রনীতি এবং “আমেরিকা ফার্স্ট” ভাবনা—যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক—তাঁর জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন

হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির গবেষক ও ইতিহাসবিদ থিও জেনো মন্তব্য করেছেন, “এই বছর ট্রাম্পের নোবেল পাওয়ার কোনো বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা নেই।” তিনি বলেন, “নোবেল কমিটি সাধারণত বিনয়, সংলাপ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে মূল্যায়ন করে। ট্রাম্পের নিজের অর্জন নিয়ে অতিরিক্ত আত্মপ্রচার তাঁকে কমিটির কাছে অনুকূল করে তুলবে না।”

জেনো আরও যোগ করেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা USAID বাতিলের সিদ্ধান্ত, জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার করা, এবং বৈশ্বিক মানবিক উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়া—সবই নোবেল কমিটির চোখে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 শান্তির দাবির বাস্তবতা

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি “সাত মাসে সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছেন।” তবে বাস্তবে এই দাবিগুলোর অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ।

* রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যে সংঘাত এখনো চলছে, যদিও ওভাল অফিসে ট্রাম্প তাঁদের নেতাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন।
* ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত বন্ধ হয়েছে দুই দেশের সরাসরি আলোচনায়, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে নয়।
* কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড, মিশর-ইথিওপিয়া, কসোভো-সার্বিয়া এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সম্পর্কেও তাঁর মধ্যস্থতা স্থায়ী ফল দেয়নি।

জেনোর মতে, “ট্রাম্প সংঘাত থেমে যাওয়াকে শান্তি হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করছেন। প্রকৃত শান্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী সংলাপ, আস্থা পুনর্গঠন ও পুনর্মিলনের প্রক্রিয়া।”

 রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মনোনয়ন?

বিশ্লেষকদের ধারণা, ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেওয়া অনেক দেশের কাছে রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। যেমন অতীতে জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে reportedly তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সদয়তা অর্জনের জন্য। একইভাবে, এই বছর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বলেছেন, যদি ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত রাখতে পারেন, তবে তিনিই নোবেলের যোগ্য।

থিও জেনো বলেন, “এই মনোনয়নগুলো আসলে বিনা খরচের প্রশংসা। অনেকেই ট্রাম্পের কাছ থেকে শুল্ক ছাড়, সামরিক সহযোগিতা বা রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চান।”

 ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

গত সপ্তাহে সামরিক কর্মকর্তাদের এক সভায় ট্রাম্প বলেন, গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাত নিরসনে তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনা সফল হলে নোবেল না পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য “একটি অপমান” হবে। তিনি বলেন, “যদি এটা সফল হয়, তাহলে আট মাসে আটটি শান্তিচুক্তি হবে। কিন্তু আমি জানি, নোবেল কমিটি পুরস্কারটা এমন কাউকে দেবে যে কিছুই করেনি।”

 ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদিও ২০২৫ সালের জন্য তাঁর নাম মনোনয়ন তালিকায় থাকলেও, নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে ভবিষ্যতে পরিবর্তন সম্ভব। যদি গাজার যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান হয় কিংবা উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সঙ্গে তাঁর নতুন আলোচনায় পূর্ব এশিয়ার উত্তেজনা কমে, তবে পরবর্তী বছরগুলোতে ট্রাম্পকে বিবেচনা করা যেতে পারে।

জেনো বলেন, “ভবিষ্যতে ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে নোবেল পেতে হলে তাঁকে সত্যিকার অর্থে ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি স্থাপন করতে হবে।”

নোবেল কমিটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি শান্তি উদ্যোগের ফলাফল মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেয়। ট্রাম্পের কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো এখনো সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, “ওভাল অফিস থেকে শান্তির ঘোষণা দেওয়া সহজ, কিন্তু সেটি বাস্তবে টিকে থাকে কিনা, সেটাই আসল পরীক্ষা।”

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে ফিরতে হতে পারে বেশির ভাগ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে

বহু দেশের মনোনয়ন পেলেও নোবেল পাওয়া অনিশ্চিত ট্রাম্পের—সমালোচনায় তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি

০৫:১৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

নোবেল পুরস্কার জয়ের আকাঙ্ক্ষা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় আকাঙ্ক্ষা হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কারকে দেখছেন। গত কয়েক বছরে তিনি নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করে বারবার বলেছেন, তিনি “সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছেন”। পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা সহ বেশ কয়েকটি পক্ষ তাঁকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর বিভাজনমূলক রাজনীতি, একতরফা পররাষ্ট্রনীতি এবং “আমেরিকা ফার্স্ট” ভাবনা—যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক—তাঁর জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন

হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির গবেষক ও ইতিহাসবিদ থিও জেনো মন্তব্য করেছেন, “এই বছর ট্রাম্পের নোবেল পাওয়ার কোনো বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা নেই।” তিনি বলেন, “নোবেল কমিটি সাধারণত বিনয়, সংলাপ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে মূল্যায়ন করে। ট্রাম্পের নিজের অর্জন নিয়ে অতিরিক্ত আত্মপ্রচার তাঁকে কমিটির কাছে অনুকূল করে তুলবে না।”

জেনো আরও যোগ করেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা USAID বাতিলের সিদ্ধান্ত, জলবায়ু পরিবর্তন অস্বীকার করা, এবং বৈশ্বিক মানবিক উদ্যোগ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়া—সবই নোবেল কমিটির চোখে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

 শান্তির দাবির বাস্তবতা

ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি “সাত মাসে সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছেন।” তবে বাস্তবে এই দাবিগুলোর অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ।

* রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর মধ্যে সংঘাত এখনো চলছে, যদিও ওভাল অফিসে ট্রাম্প তাঁদের নেতাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছিলেন।
* ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত বন্ধ হয়েছে দুই দেশের সরাসরি আলোচনায়, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে নয়।
* কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড, মিশর-ইথিওপিয়া, কসোভো-সার্বিয়া এবং আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সম্পর্কেও তাঁর মধ্যস্থতা স্থায়ী ফল দেয়নি।

জেনোর মতে, “ট্রাম্প সংঘাত থেমে যাওয়াকে শান্তি হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করছেন। প্রকৃত শান্তি অর্জনের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘস্থায়ী সংলাপ, আস্থা পুনর্গঠন ও পুনর্মিলনের প্রক্রিয়া।”

 রাজনৈতিক সুবিধার জন্য মনোনয়ন?

বিশ্লেষকদের ধারণা, ট্রাম্পকে মনোনয়ন দেওয়া অনেক দেশের কাছে রাজনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। যেমন অতীতে জাপানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে reportedly তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সদয়তা অর্জনের জন্য। একইভাবে, এই বছর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে বলেছেন, যদি ট্রাম্প চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ থেকে বিরত রাখতে পারেন, তবে তিনিই নোবেলের যোগ্য।

থিও জেনো বলেন, “এই মনোনয়নগুলো আসলে বিনা খরচের প্রশংসা। অনেকেই ট্রাম্পের কাছ থেকে শুল্ক ছাড়, সামরিক সহযোগিতা বা রাজনৈতিক সুবিধা পেতে চান।”

 ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

গত সপ্তাহে সামরিক কর্মকর্তাদের এক সভায় ট্রাম্প বলেন, গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাত নিরসনে তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনা সফল হলে নোবেল না পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য “একটি অপমান” হবে। তিনি বলেন, “যদি এটা সফল হয়, তাহলে আট মাসে আটটি শান্তিচুক্তি হবে। কিন্তু আমি জানি, নোবেল কমিটি পুরস্কারটা এমন কাউকে দেবে যে কিছুই করেনি।”

 ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

যদিও ২০২৫ সালের জন্য তাঁর নাম মনোনয়ন তালিকায় থাকলেও, নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে ভবিষ্যতে পরিবর্তন সম্ভব। যদি গাজার যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান হয় কিংবা উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সঙ্গে তাঁর নতুন আলোচনায় পূর্ব এশিয়ার উত্তেজনা কমে, তবে পরবর্তী বছরগুলোতে ট্রাম্পকে বিবেচনা করা যেতে পারে।

জেনো বলেন, “ভবিষ্যতে ট্রাম্পের জেতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে নোবেল পেতে হলে তাঁকে সত্যিকার অর্থে ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি স্থাপন করতে হবে।”

নোবেল কমিটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি শান্তি উদ্যোগের ফলাফল মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেয়। ট্রাম্পের কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলো এখনো সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, “ওভাল অফিস থেকে শান্তির ঘোষণা দেওয়া সহজ, কিন্তু সেটি বাস্তবে টিকে থাকে কিনা, সেটাই আসল পরীক্ষা।”