দুই গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ক্যানবেরায় অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া সামরিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত বিনিময় জোরদারে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তিগুলো ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও আঞ্চলিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনটি মূল চুক্তি
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং অস্ট্রেলিয়ার উপ–প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লসের বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর হয়—
১. তথ্য বিনিময় চুক্তি (Information Sharing Pact)
২. সাবমেরিন অনুসন্ধান ও উদ্ধার সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক (MoU)
৩. যৌথ স্টাফ আলোচনার কাঠামো স্থাপনের রূপরেখা (Terms of Reference on Joint Staff Talks)
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব চুক্তির লক্ষ্য হলো যৌথ মহড়া, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা ও প্রযুক্তিগত গবেষণায় অংশীদারিত্ব আরও বাড়ানো।
কৌশলগত অংশীদারিত্বের পাঁচ বছর
এই বৈঠক দুই দেশের মধ্যে সমগ্র কৌশলগত অংশীদারিত্ব (Comprehensive Strategic Partnership)–এর পাঁচ বছর পূর্তিকে চিহ্নিত করেছে। উভয় মন্ত্রীই প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান
বৈঠকে রাজনাথ সিং পাকিস্তানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘সন্ত্রাস ও সংলাপ একসঙ্গে চলতে পারে না; সন্ত্রাস ও বাণিজ্য একসঙ্গে হতে পারে না; পানি ও রক্ত একইসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না।’’
তিনি অস্ট্রেলিয়ার পক্ষেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বৈঠকে যোগ দেন এবং ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে স্বাগত জানান। রাজনাথ সিং এই সফরে অস্ট্রেলিয়া–ভারত প্রতিরক্ষা মন্ত্রী–পর্যায়ের প্রথম সংলাপে (Inaugural Defence Ministers’ Dialogue) অংশ নিচ্ছেন।
যৌথ বিবৃতির মূল বিষয়
দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে অংশীদারিত্বকে ‘‘সমগ্র কৌশলগত’’ পর্যায়ে উন্নীত করার পর থেকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নজিরবিহীন অগ্রগতি হয়েছে।
তারা যৌথভাবে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীদের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন, যাতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষায় উভয় দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সামুদ্রিক নিরাপত্তায় নতুন রোডম্যাপ
বৈঠকে দুই মন্ত্রী যৌথ সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা রোডম্যাপ তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেন। এর লক্ষ্য হলো ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর সমন্বিত মহড়া, তথ্য বিনিময় এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরদার করা।
এছাড়া শিগগিরই দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত যৌথ ঘোষণাপত্র নবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাব
বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলের সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি—যেখানে চীন তার প্রভাব বাড়াতে চেষ্টা করছে।
এর আগে, চলতি বছরের মার্চ মাসে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান জেনারেল অনিল চৌহানও অস্ট্রেলিয়া সফর করেন, যেখানে এই একই বিষয়গুলো নিয়ে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা হয়।
ভারত–অস্ট্রেলিয়া প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এখন এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। যৌথ গবেষণা, প্রযুক্তি বিনিময় ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে এই দুই গণতান্ত্রিক দেশ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে যাচ্ছে।
#ভারত_অস্ট্রেলিয়া_চুক্তি #প্রতিরক্ষা_সহযোগিতা #রাজনাথ_সিং #রিচার্ড_মার্লস #ইন্দো_প্যাসিফিক #সারাক্ষণ_রিপোর্ট