- যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাব করেছে, চীনা যাত্রীবাহী বিমানগুলো যেন যুক্তরাষ্ট্র–চীন রুটে রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহার না করতে পারে।
- রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহারে সময় ও জ্বালানি সাশ্রয় হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থাগুলির জন্য প্রতিযোগিতায় অসমতা তৈরি করছে।
- প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্র-চীন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন উত্তেজনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট ও কারণ
রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহারের সুবিধা
চীনা বিমান সংস্থাগুলো রাশিয়ার আকাশপথ দিয়ে উড়লে সময় ও জ্বালানি উভয়ই কম লাগে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিমানগুলোর জন্য আকাশপথ বন্ধ করে দেয়, কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে তা খোলা রাখে। ফলে চীনা বিমানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় সাশ্রয়ী রুটে যাতায়াত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থার অভিযোগ
আমেরিকান বিমান সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরে বলছে, রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি চীনা বিমানগুলোকে অযৌক্তিক সুবিধা দিচ্ছে। তাদের দাবি, এর ফলে চীনা সংস্থাগুলির পরিচালন ব্যয় কমে যাচ্ছে, যা মার্কিন সংস্থাগুলির প্রতিযোগিতা ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
প্রস্তাবের মূল দিক ও বিস্তারিত
সম্ভাব্য নতুন নীতিমালা
- যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন বিভাগ বিদেশি বিমান সংস্থার লাইসেন্সে পরিবর্তন আনবে, যাতে তারা রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহার করতে না পারে।
- প্রস্তাবটি শুধু যাত্রীবাহী বিমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে — কার্গো বিমানের জন্য নয়।
- চীনের বিমান সংস্থাগুলোকে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য দুই দিন সময় দেওয়া হবে।
- নভেম্বর থেকেই নীতিটি কার্যকর হতে পারে।
যেসব বিমান সংস্থা প্রভাবিত হতে পারে
- এয়ার চায়না
- চায়না ইস্টার্ন
- চায়না সাদার্ন
- শিয়ামেন এয়ার
হংকং ভিত্তিক ক্যাথে প্যাসিফিকের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না।
অর্থনৈতিক প্রভাব ও বাজার প্রতিক্রিয়া
প্রস্তাবের খবর প্রকাশের পর চীনের তিনটি প্রধান বিমান সংস্থার শেয়ারের মূল্য কিছুটা কমে যায়।
- চায়না সাদার্ন: ১.৩% পতন
- এয়ার চায়না: ১.২৬% পতন
- চায়না ইস্টার্ন: ০.৯৫% পতন
কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে এসব বিমান সংস্থা আগেই আর্থিক সংকটে ছিল, ফলে এই প্রস্তাব তাদের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
বাণিজ্য ও কূটনৈতিক উত্তেজনা
চীন সম্প্রতি বিরল ধাতু ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে, যা মার্কিন শিল্পে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। অন্যদিকে, বোয়িং কোম্পানি চীনে ৫০০টিরও বেশি বিমান বিক্রির বিষয়ে আলোচনা করছে।
অক্টোবরের শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হওয়ার কথা, যেখানে এই বিমান ইস্যুটি আলোচনার অন্যতম বিষয় হতে পারে।
অতীতের পদক্ষেপ
২০২৩ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, শুধুমাত্র সেই চীনা বিমানগুলোই অতিরিক্ত ফ্লাইট অনুমতি পাবে যারা রাশিয়ার আকাশপথ এড়িয়ে উড়বে।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি সপ্তাহে চীনা বিমান সংস্থার সর্বোচ্চ ৫০টি যাত্রীবাহী ফ্লাইট অনুমোদন দেয়, যা কোভিড-পূর্ব সময়ের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশেরও কম।
প্রতিক্রিয়া ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থাগুলো বলছে, তারা রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহার করতে না পারায় চীনের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কম আসন বিক্রি করতে ও কার্গো সীমিত রাখতে হচ্ছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবের সমালোচনা করে জানিয়েছে, এমন নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের মধ্যে ব্যক্তি পর্যায়ের যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক বিনিময়কে ব্যাহত করবে।
রাশিয়ার আকাশপথ নিয়ে এই নতুন প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের আরেকটি উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এটি সমতা আনার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে, কিন্তু চীনের প্রতিক্রিয়া এবং বৈশ্বিক বিমান চলাচলে এর প্রভাব ভবিষ্যতের কূটনৈতিক সমীকরণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।