নোবেল কমিটি যখন ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থী নেতা মরিয়া করিনা মাচাদোকে শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করল, তখন হোয়াইট হাউস বিস্ফোরিত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অভিযোগ করল — এই সিদ্ধান্তে শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে, তাঁর অবদান বিবেচনা না করেই কমিটি পক্ষপাতমূলকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত ও হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
সোমবার নোবেল কমিটি ঘোষণা দিয়েছে যে, ভেনেজুয়েলার প্রজাতন্ত্রকামী নেতা মরিয়া করিনা মাচাদোকে ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার দেওয়া হবে “ভেনেজুয়েলার জনগণের জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচার ও অবিচল প্রতিরোধ” সাধনার জন্য।
এই সিদ্ধান্তে হোয়াইট হাউস (White House) ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, নোবেল কমিটি “শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।” তারা যুক্তি দিয়েছে, ট্রাম্পের দাবি ও অবদানের কথা বিবেচনায় না নিয়ে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে অন্য কাউকে।
“নোবেল কমিটি প্রমাণ করেছে, তারা রাজনীতিকে শান্তির উপরে রাখে,” বলেছেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চেউং।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক বার্তা
কমিটির ঘোষণার পর, ট্রাম্প মাচাদোকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউস জানায়, মাচাদো নাকি বলেছেন তিনি পুরস্কারটি ট্রাম্পের পক্ষেই নেবেন, কারণ “তিনি সত্যিই প্রাপ্য ছিলেন।”
স্টিভেন চেউং এক্স (X)-এর মাধ্যমে লিখেছেন, “ট্রাম্প শান্তি চুক্তি ঘটানো, যুদ্ধ বন্ধ করা ও প্রাণ রক্ষার কাজ চালিয়ে যাবেন… এমন কোনো ব্যক্তি হবে না যে তাঁর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পর্বত সরাতে পারবে না।”
প্রশাসন দাবি করেছে, একাধিক আন্তর্জাতিক শান্তি উদ্যোগে ট্রাম্পের ভূমিকা “মানবিক হৃদয়ের প্রতিফলন”।
ট্রাম্পের নোবেল আকাঙ্ক্ষা ও প্রক্রিয়াগত বাধা
ট্রাম্প বহুবার প্রকাশ্যে বলেছেন, তাঁর শান্তিনীতি ও মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা বিভিন্ন যুদ্ধসংক্রান্ত সংকট নিরসনে ভূমিকা রেখেছে, তাই তিনি শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। বিশেষ করে গাজার সংঘর্ষে তাঁর নাম উল্লেখযোগ্যভাবে এসেছে।
তবে প্রক্রিয়াগত কয়েকটি বাধা তাঁর পথে দাঁড়িয়েছে —
- নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন শেষ হওয়ার সময়সীমা ছিল ৩১ জানুয়ারি,যা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হওয়ার কিছু পরেই।
- কমিটি ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রার্থীদের বাছাই করে।
- ২০২৪ সালের আগস্টে মার্কো রুবিও ও তাঁর সহকর্মী মাচাদোকে মনোনয়ন দেন।
- সাংবিধানিক ও নীতিগত কারণে ট্রাম্পের কোনো বিশেষ অর্জন স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়নি।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মন্তব্য করেছেন, “ট্রাম্প জটিল সংকট সমাধানে বহু কাজ করছেন।”
অন্যদিকে মাচাদো এক্স-এ লিখেছেন, “এই পুরস্কার আমি ভেনেজুয়েলার কষ্টভোগী জনগণ ও ট্রাম্পের সিদ্ধান্তমূলক সমর্থনের প্রতি উৎসর্গ করছি।”
পুতিন আরও বলেন, “নোবেল কমিটি কখনো কখনো কম অবদানের ব্যক্তিকেও পুরস্কৃত করেছে।”
এদিকে কমিটির চেয়ারম্যান জোরগেন ওয়াটনে ফ্রাইডনেস বলেন, “পুরস্কার প্রদান প্রক্রিয়া কঠোর সময়সূচি ও নীতিমালা মেনেই সম্পন্ন হয়।”
মূল বিবেচ্য বিষয় ও অন্তর্দৃষ্টি
এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে—
সময়সীমা ও প্রক্রিয়া: মনোনয়ন ও বাছাইয়ের নিয়ম নোবেল কমিটির স্বাধীনতার প্রতিফলন।
রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন: বড় পুরস্কারগুলো সবসময়ই রাজনৈতিক চাপ ও প্রচারণার আওতায় আসে।
শান্তি ও ঐতিহ্যের সংযোগ: কমিটি সাধারণত “আলোচনা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার”-কেন্দ্রিক অর্জনকেই বেশি মূল্য দেয়।
ট্রাম্পের নীতি ও সমালোচনা: তাঁর অভ্যন্তরীণ নীতি যেমন অভিবাসন ও সামরিক ব্যবহারে বিতর্কিত হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিকভাবে তাঁর পদক্ষেপও প্রশ্নবিদ্ধ।
নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করে হোয়াইট হাউসের তীব্র প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তোলে। ট্রাম্পের প্রচেষ্টা ও আত্মবিশ্বাস প্রশংসনীয় হলেও নোবেল প্রক্রিয়ার সময়, নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা হয়তো তাঁর পক্ষে কাজ করেনি।
এই ঘটনাটি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে — শান্তির সংজ্ঞা কি শুধুই রাজনীতি থেকে আলাদা, নাকি রাজনৈতিক প্রভাবই শান্তির পথ নির্ধারণ করে?
#নোবেল_পুরস্কার #ট্রাম্প #হোয়াইট_হাউস #ভেনেজুয়েলা #মাচাদো #আন্তর্জাতিক_রাজনীতি #শান্তি_পুরস্কার #সারাক্ষণ_রিপোর্ট