০৯:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব? যে রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন হাদি, সেই চালকের আদালতে জবানবন্দি তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো: মির্জা ফখরুল পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বহুদলীয় গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হবে: নাহিদ ঢাকা-১৫ আসনে জামায়াত আমিরের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণে শ্রমিক নিহত, অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা নির্বাচনপ্রত্যাশীদের জন্য অনলাইনে কর রিটার্ন দাখিলে বিশেষ ব্যবস্থা এনবিআরের মাকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে তারেক রহমান মিয়ানমারের অসম্পূর্ণ সাধারণ নির্বাচন: জানা দরকার পাঁচটি বিষয়

কাবুলের সার্বভৌম এলাকা লঙ্ঘনের অভিযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করল আফগানিস্তান

আফগানিস্তানের তালি’ব সরকার অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান কাবুলের সার্বভৌম এলাকা লঙ্ঘন করে সীমান্তে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের দুইটি জোরালো বিস্ফোরণের পর এই অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় নতুন করে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

কাবুলে বিস্ফোরণ ও আফগান সরকারের প্রতিক্রিয়া

বৃহস্পতিবার রাতে কাবুল শহরে একাধিক জোরালো বিস্ফোরণ শোনা যায়। পরদিন শুক্রবার আফগানিস্তানের তালি’ব সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করে এক বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশ পাতিকা সীমান্তবর্তী একটি নাগরিক বাজারে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা ছিল “অভূতপূর্ব, সহিংস ও উস্কানিমূলক” পদক্ষেপ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণে বাজারের বহু দোকান ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত হামলার বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার করেনি।

পাকিস্তানের পাল্টা দাবি

শুক্রবার পেশাওয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী দাবি করেন, আফগানিস্তানের ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের জনগণ ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, আমরা তা নেব।”

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, আফগান তালি’ব সরকার পাকিস্তান তালিবান (TTP)-কে আশ্রয় দিচ্ছে। তবে কাবুল প্রশাসন এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে।

গুজবযাচাই ও মাঠপর্যায়ের চিত্র

বিস্ফোরণের পর গুজব ছড়ায় যে, এটি TTP নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে লক্ষ্য করে হামলা ছিল। পরে TTP এক অযাচাইকৃত ভয়েস নোট প্রকাশ করে, যেখানে মেহসুদ বলেন, তিনি জীবিত আছেন।

তবে BBC আফগান সার্ভিসের প্রতিবেদক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্ফোরণের কোনো দৃশ্যমান চিহ্ন পাননি। বরং এলাকায় তালি’ব যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং মোবাইল চেকপোস্টের তৎপরতা বেড়ে যায়।

কূটনৈতিক বার্তা ও সতর্কতা

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, পরিস্থিতি যদি আরও অবনতি ঘটে, তার পরিণতির দায় “পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বহন করতে হবে।”

অন্যদিকে, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থানরত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতকী সাংবাদিকদের বলেন, তাদের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তিনি আহ্বান জানান, “পাকিস্তান যেন এই ভুল পুনরাবৃত্তি না করে। আমাদের সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে, যুদ্ধের মাধ্যমে নয়।”

সীমান্ত রাজনীতির নতুন অধ্যায়

 সীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি:
এই ঘটনাকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা ও আস্থাহীনতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কাবুলে হামলা হলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক ইঙ্গিত বহন করে।

 TTP প্রসঙ্গ:
পাকিস্তান মনে করছে, আফগানিস্তান TTP-কে আশ্রয় দিচ্ছে, যা তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। অন্যদিকে, কাবুল সরকার দাবি করছে, তারা অন্য দেশের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন করে না।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রভাব:
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারতের মাটিতে এই মন্তব্য পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য ও কৌশলগত সম্পর্ক এখন আরও জটিল হয়ে উঠছে।

আফগানিস্তানের তালি’ব সরকার অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান তাদের সার্বভৌম সীমান্তে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার না করলেও পাল্টা দাবি করেছে যে, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। উভয় দেশই এখন উত্তেজনা বৃদ্ধির দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে, তবে কূটনৈতিক সমাধানের পথ এখনও উন্মুক্ত রয়েছে।

#আফগানিস্তান #পাকিস্তান #সীমান্তসংঘাত #TTP #কাবুল #আন্তর্জাতিকসম্পর্ক #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদিতে বিরল তুষারপাতের পর প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরাতেও কি আবার তুষারপাত সম্ভব?

কাবুলের সার্বভৌম এলাকা লঙ্ঘনের অভিযোগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করল আফগানিস্তান

১১:৩৬:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

আফগানিস্তানের তালি’ব সরকার অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান কাবুলের সার্বভৌম এলাকা লঙ্ঘন করে সীমান্তে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের দুইটি জোরালো বিস্ফোরণের পর এই অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় নতুন করে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

কাবুলে বিস্ফোরণ ও আফগান সরকারের প্রতিক্রিয়া

বৃহস্পতিবার রাতে কাবুল শহরে একাধিক জোরালো বিস্ফোরণ শোনা যায়। পরদিন শুক্রবার আফগানিস্তানের তালি’ব সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করে এক বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশ পাতিকা সীমান্তবর্তী একটি নাগরিক বাজারে বিমান হামলা চালিয়েছে, যা ছিল “অভূতপূর্ব, সহিংস ও উস্কানিমূলক” পদক্ষেপ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিস্ফোরণে বাজারের বহু দোকান ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও পাকিস্তান এখনও পর্যন্ত হামলার বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার করেনি।

পাকিস্তানের পাল্টা দাবি

শুক্রবার পেশাওয়ারে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী দাবি করেন, আফগানিস্তানের ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “পাকিস্তানের জনগণ ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, আমরা তা নেব।”

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, আফগান তালি’ব সরকার পাকিস্তান তালিবান (TTP)-কে আশ্রয় দিচ্ছে। তবে কাবুল প্রশাসন এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে।

গুজবযাচাই ও মাঠপর্যায়ের চিত্র

বিস্ফোরণের পর গুজব ছড়ায় যে, এটি TTP নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদকে লক্ষ্য করে হামলা ছিল। পরে TTP এক অযাচাইকৃত ভয়েস নোট প্রকাশ করে, যেখানে মেহসুদ বলেন, তিনি জীবিত আছেন।

তবে BBC আফগান সার্ভিসের প্রতিবেদক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্ফোরণের কোনো দৃশ্যমান চিহ্ন পাননি। বরং এলাকায় তালি’ব যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং মোবাইল চেকপোস্টের তৎপরতা বেড়ে যায়।

কূটনৈতিক বার্তা ও সতর্কতা

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, পরিস্থিতি যদি আরও অবনতি ঘটে, তার পরিণতির দায় “পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বহন করতে হবে।”

অন্যদিকে, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অবস্থানরত আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতকী সাংবাদিকদের বলেন, তাদের সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। তিনি আহ্বান জানান, “পাকিস্তান যেন এই ভুল পুনরাবৃত্তি না করে। আমাদের সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে, যুদ্ধের মাধ্যমে নয়।”

সীমান্ত রাজনীতির নতুন অধ্যায়

 সীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি:
এই ঘটনাকে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা ও আস্থাহীনতার প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। কাবুলে হামলা হলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বিপজ্জনক ইঙ্গিত বহন করে।

 TTP প্রসঙ্গ:
পাকিস্তান মনে করছে, আফগানিস্তান TTP-কে আশ্রয় দিচ্ছে, যা তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। অন্যদিকে, কাবুল সরকার দাবি করছে, তারা অন্য দেশের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন করে না।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রভাব:
আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারতের মাটিতে এই মন্তব্য পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য ও কৌশলগত সম্পর্ক এখন আরও জটিল হয়ে উঠছে।

আফগানিস্তানের তালি’ব সরকার অভিযোগ করেছে, পাকিস্তান তাদের সার্বভৌম সীমান্তে বোমাবর্ষণ চালিয়েছে। পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার না করলেও পাল্টা দাবি করেছে যে, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানবিরোধী সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। উভয় দেশই এখন উত্তেজনা বৃদ্ধির দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে, তবে কূটনৈতিক সমাধানের পথ এখনও উন্মুক্ত রয়েছে।

#আফগানিস্তান #পাকিস্তান #সীমান্তসংঘাত #TTP #কাবুল #আন্তর্জাতিকসম্পর্ক #সারাক্ষণরিপোর্ট