প্রস্তাবনা
টরন্টোর রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়ামে প্রদর্শিত বরফযুগের জীবাশ্মগুলোর মধ্যে একটি কম চোখে-পড়া খুলি ও ভাঙা শিং বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের কেন্দ্র ছিল। এই অজ্ঞাত হরিণ-প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছিল “টরন্টোসেরোস”, যা স্থানীয়ভাবে “সাবওয়ে হরিণ” নামে পরিচিত। সর্বশেষ জেনেটিক গবেষণায় অবশেষে এর রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।
জেনেটিক বিশ্লেষণে নতুন অধ্যায়
টরন্টোর রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়ামের গবেষক অলিভার হ্যাড্রাথ ও ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো টরন্টোসেরোসের ডিএনএ শনাক্ত করতে সক্ষম হন। গবেষণাটি ‘বায়োলজি লেটারস’ জার্নালে প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, টরন্টোসেরোস আসলে একটি হরিণ প্রজাতি ছিল, যার বৈশিষ্ট্য আধুনিক সাদা লেজওয়ালা হরিণ বা মিউল হরিণের চেয়ে ভিন্ন। এটি এমন এক সময়ের প্রতিনিধি, যখন বরফযুগের পর টরন্টোর ভূমি নতুনভাবে গঠিত হচ্ছিল — বনজঙ্গল তখনও ঘন হয়নি, বরং ছিল খোলা তৃণভূমি ও জলাভূমির সংমিশ্রণ।
আবিষ্কারের ইতিহাস: ১৯৭৬ সালের ‘সাবওয়ে হরিণ’
টরন্টোসেরোসের একমাত্র নমুনাটি ১৯৭৬ সালে টরন্টো ট্রানজিট কমিশনের এক কর্মী সাবওয়ে লাইন সম্প্রসারণের খননকাজ চলাকালীন খুঁজে পান। পরবর্তীতে এটি মিউজিয়ামে দান করা হয়।
তখন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক ছিল — এটি কি হরিণ, নাকি ক্যারিবু প্রজাতির আত্মীয়? ১৯৮২ সালের একটি প্রাথমিক গবেষণা এটিকে হরিণ হিসেবে শনাক্ত করে, কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে নতুন ব্যাখ্যাও উঠে আসে। তবে কোনো দ্বিতীয় নমুনা না পাওয়ায় বিষয়টি স্থবির হয়ে পড়ে।
নতুন প্রযুক্তিতে প্রাচীন ডিএনএ পুনরুদ্ধার
ট্রেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল মিউজিয়ামের বিভিন্ন হরিণ, এল্ক, মুজ ও ক্যারিবু নমুনার জেনেটিক বিশ্লেষণ করছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল — প্রজাতিগুলোর জেনেটিক বৈচিত্র্য কীভাবে পরিবেশগত পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজিত হয়েছে তা জানা।
তখনই তারা টরন্টোসেরোস সম্পর্কে জানতে পারেন এবং এর প্রাচীন হাড় ও শিং থেকে ডিএনএ উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। যদিও মৃদু জলবায়ুতে সময়ের সঙ্গে ডিএনএ সাধারণত নষ্ট হয়ে যায়, তবুও তারা আশ্চর্যজনকভাবে কিছু জেনেটিক উপাদান উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
ফলাফল: হরিণ, তবে আলাদা এক প্রজাতি
বিশ্লেষণে নিশ্চিত হয়, যে টরন্টোসেরোস ক্যারিবু নয়, বরং প্রাচীন হরিণের এক প্রজাতি, যা আধুনিক সাদা লেজওয়ালা ও মিউল হরিণের সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে অনেক আগে পৃথক হয়েছিল।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, সেই সময় টরন্টোর এলাকা ছিল খোলা বোরিয়াল তৃণভূমি, যেখানে বড় ও প্রশস্ত শিং চলাচলে বাধা তৈরি করত না। তাই টরন্টোসেরোসের শারীরিক গঠন পরিবেশের সঙ্গে মানানসই ছিল।
ভবিষ্যৎ গবেষণার সম্ভাবনা
ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জেনেটিসিস্ট হেন্ড্রিক পয়নার বলেন, এই গবেষণা প্রমাণ করে যে দ্রুত বিবর্তনের ফলে হরিণ প্রজাতিগুলোর বৈচিত্র্য তৈরি হয়েছিল। তবে টরন্টোসেরোস কীভাবে বিলুপ্ত হলো, তা এখনো অজানা।
তিনি উল্লেখ করেন, সম্পূর্ণ জেনোম সিকোয়েন্স করা গেলে প্রজাতিটির জনসংখ্যা, বৈচিত্র্য ও অভিযোজনের ধরন সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে। এতে উত্তর আমেরিকার বরফযুগ-পরবর্তী প্রাণিকূলের বিবর্তন নিয়ে নতুন আলোকপাত করা সম্ভব হবে।
‘সাবওয়ে হরিণ’-এর জীবাশ্ম কেবল একটি প্রাচীন প্রাণীর চিহ্ন নয় — এটি ১১ হাজার বছর আগের টরন্টোর প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের সাক্ষ্য। টরন্টোসেরোস এখন শহরের ইতিহাসের সঙ্গে একাত্ম এবং আমাদের মনে করিয়ে দেয় — আজকের নগরীর নীচে এক সময় ছিল প্রাচীন বন, তৃণভূমি ও জীবনের এক অন্য পৃথিবী।
#TorontoDeer #ScienceDiscovery #PleistoceneCanada #RoyalOntarioMuseum #SubwayDeer #সারাক্ষণ_রিপোর্টনিচে সম্পূর্ণ সম্পাদিত, প্রুফরিড এবং প্রকাশযোগ্য ফাইনাল কপি দেওয়া হলো—