আগামী রবিবার থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাইরে থেকে আগত ভ্রমণকারীরা—যাদের মধ্যে রয়েছেন ব্রিটিশ, উপসাগরীয় অঞ্চলের বাসিন্দা, অস্ট্রেলীয় ও মার্কিন নাগরিকরাও—একটি নতুন যুগে প্রবেশ করছেন। ইউরোপ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করছে তাদের বহু প্রতীক্ষিত বায়োমেট্রিক ‘এন্ট্রি/এক্সিট সিস্টেম’ (EES), যা দীর্ঘদিনের প্রচলিত পাসপোর্টে সিল দেওয়ার প্রথার পরিবর্তে ডিজিটাল রেকর্ডে পরিণত হবে।
কীভাবে কাজ করবে নতুন বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা
এই নতুন সিস্টেমে প্রতিটি ভ্রমণকারীর প্রবেশ ও প্রস্থানের তথ্য ডিজিটালভাবে সংরক্ষিত হবে, যা তাদের আঙুলের ছাপ ও মুখাবয়বের ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
ইইউ কর্মকর্তারা জানান, এই আধুনিকীকরণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করবে, অবৈধ অভিবাসন ও পরিচয় জালিয়াতি রোধ করবে এবং প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘমেয়াদে আরও দ্রুত ও নিরাপদ করবে।
কোন কোন দেশের আওতায়
EES সিস্টেমটি কার্যকর হবে সমগ্র শেনজেন অঞ্চলে—যেখানে রয়েছে ২৫টি ইইউ সদস্য দেশসহ মোট ২৯টি রাষ্ট্র। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, আইসল্যান্ড ও লিশটেনস্টাইনও রয়েছে।
তবে আয়ারল্যান্ড ও সাইপ্রাস এখনো এই ব্যবস্থার বাইরে, আর যুক্তরাজ্য ব্রেক্সিটের পর ইইউ কাঠামো থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এটি তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
ভিসামুক্ত ভ্রমণকারীদের জন্য নতুন নিয়ম
নতুন স্বয়ংক্রিয় বর্ডার প্রক্রিয়ায় সীমান্তরক্ষীরা এখন ভিসামুক্ত ভ্রমণকারীদের সহজেই শনাক্ত করতে পারবেন এবং ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিনের অবস্থান সীমা মেনে চলা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করবেন।
প্রতিটি ভ্রমণকারীর ব্যক্তিগত তথ্য তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকবে, ফলে পুনরায় ভ্রমণের সময় দ্রুত যাচাই সম্ভব হবে।
ধীরে ধীরে চালু হবে ব্যবস্থা
EES ১২ অক্টোবর ২০২৫ থেকে কার্যকর হচ্ছে, তবে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হবে আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে।
প্রাথমিকভাবে এটি বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, ট্রেন টার্মিনাল ও স্থল সীমান্তে চালু হবে। ধীরে ধীরে এটি সব দেশে বিস্তৃত করা হবে, যাতে দীর্ঘ সারির ঝুঁকি কমানো যায়।
ফ্রান্স, জার্মানি ও অন্যান্য বড় দেশগুলো নির্দিষ্ট কিছু রুটে প্রথমে এই চেক চালু করবে, অন্যদিকে ছোট শেনজেন দেশগুলো তাৎক্ষণিকভাবে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ভেতরে প্রভাব
যুক্তরাজ্যে, যেখানে ফরাসি কর্মকর্তারা শেনজেন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করেন, সেখানে যাত্রীরা পোর্ট অব ডোভার, ইউরোটানেল টার্মিনাল (ফোকস্টোন) এবং লন্ডন সেন্ট প্যানক্রাস ইন্টারন্যাশনাল স্টেশনে বোর্ডিংয়ের আগেই EES নিবন্ধন সম্পন্ন করবেন।
সাময়িক বিলম্ব ও প্রস্তুতির পরামর্শ
ইইউ কর্তৃপক্ষের আশা, পরিবর্তনটি মসৃণভাবে সম্পন্ন হবে। তবে ভ্রমণের ব্যস্ত মৌসুমে সাময়িক বিলম্ব ঘটতে পারে।
ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ভ্রমণকারীদের অতিরিক্ত সময় রাখার পরামর্শ দিয়েছে—বিশেষ করে ২০২৬ সালের ইস্টার ছুটি ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির সময়, যখন বহু পরিবার প্রথমবারের মতো এই নতুন প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হবে।
ইউরোপের এই ডিজিটাল ও বায়োমেট্রিক সীমান্ত ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে ভ্রমণকে আরও নিরাপদ, দ্রুত ও স্বচ্ছ করবে।
তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রমণকারীদের কয়েক মিনিট অতিরিক্ত সময় এবং কিছুটা ধৈর্যের প্রয়োজন হতে পারে, যতদিন না নতুন প্রযুক্তিটি পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়।
#ইইউ_বায়োমেট্রিক #ইউরোপ_ভ্রমণ #শেনজেন #EES #সীমান্ত_নিয়ন্ত্রণ #সারাক্ষণ_রিপোর্ট