১২:০১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
আজ পার্থ থেকে ডব্লিউডব্লিউই ক্রাউন জুয়েল—দেখবেন কীভাবে গঙ্গামতি নির্ধারিত বন: কুয়াকাটার সবুজ ঢেউ ও হারিয়ে যাওয়া প্রাণের আর্তনাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৪) দিল্লিতে এ মৌসুমের প্রথম শীতল রাত নেমেছে- ১৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ‘জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত’: প্রচলিত ভোটব্যবস্থা শক্তিশালী করার আহ্বানে বিএনপি নেতারা বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ২০২৫ ট্রাম্পের বয়স ৭৯ হলেও হৃদযন্ত্র ৬৫ বছরের মানুষের মতো, চিকিৎসকের প্রতিবেদন দ্রুত পদক্ষেপ ও সৌভাগ্যের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ড মৌসুমে ক্ষয়ক্ষতি অর্ধেকে নেমেছে জাতীয় পার্টির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের হামলার অভিযোগে তীব্র প্রতিক্রিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের ছাঁটাই ঝড়: সাতটি সংস্থা থেকে ৪,১০০ কর্মী বরখাস্ত

চীনের অর্থনীতি ২০৩০: শি জিনপিংয়ের হাতে নতুন পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার রূপরেখা

 ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে চীনের শীর্ষ সম্মেলন

বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক জিংসি হোটেলে আগামী ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। সেখানে ৩৭০ জন শীর্ষ কর্মকর্তা বসবেন ২০৩০ সাল পর্যন্ত চীনের অর্থনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণে। এটি হবে ১৯৪৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পার্টির ১৫তম পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে এই পরিকল্পনা বিশাল—উন্নত উৎপাদন থেকে শুরু করে সবুজ উন্নয়ন পর্যন্ত নানা বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেই সরাসরি এই পরিকল্পনা তৈরিতে অংশ নিচ্ছেন।

লিড: শি জিনপিংয়ের “নতুন চীনা মডেল” — প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রিত কল্যাণনীতি

চীনের আসন্ন পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা শুধু একটি অর্থনৈতিক দলিল নয়; এটি শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে গঠিত নতুন এক রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিফলন। দেশটি এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক উৎপাদন, এবং দেশীয় প্রযুক্তি হবে বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। একই সঙ্গে ভোক্তা ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণনীতি নিয়ে পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে—যেখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে, কিন্তু জনগণের জীবনমানও ধীরে ধীরে উন্নত করা হবে। এই পরিকল্পনা তাই চীনের অর্থনীতিকে নতুন পথে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি, শি জিনপিংয়ের ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও রাজনৈতিক মতাদর্শেরও প্রতীক হয়ে উঠছে।

Xi Jinping is personally involved in China's new five-year plan

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট: বৃদ্ধির মাঝেও ভোক্তা সংকট

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি বেড়েছে ৫.৩%—যার মূল অবদান এসেছে উৎপাদন খাত ও রপ্তানি থেকে। তবে ভোক্তা ব্যয় আশানুরূপ নয়।

চীনা নাগরিকদের সঞ্চয়প্রবণতা, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং সম্পত্তি খাতের মন্দা তাদের খরচ কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলেই দেশটি মুদ্রাস্ফীতির বদলে মূল্যসংকোচন (deflation)-এর মুখোমুখি—২০২৫ সালের আগস্টে ভোক্তা মূল্য কমেছে ০.৪%।

দেশীয় চাহিদা দুর্বল থাকায় চীন বিশ্ব উৎপাদনে ৩০% অবদান রাখলেও ভোগ করছে মাত্র ১৮%। ফলে অন্যান্য দেশগুলোতে সুরক্ষাবাদী নীতি বাড়ছে, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর নির্ভর করছে বাণিজ্য যুদ্ধের অনিশ্চিত ভারসাম্য।

পরিকল্পনার ভেতরের গল্প: গোপন কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ প্রক্রিয়া

চীনের পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা বিশাল ও জটিল, কিন্তু প্রতিটি পরিকল্পনা পার্টির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার ইঙ্গিত দেয়।

অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। এবারের পরিকল্পনায় শি জিনপিং এমনকি অনলাইন ব্যবহারকারীদের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিদেশিরাও পরামর্শ দিচ্ছে—যেমন মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট ভোগব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন; সিটিগ্রুপ ১১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়েছে শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা ও উন্নত স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা বাড়াতে।

ইউবিএস ব্যাংক প্রস্তাব দিয়েছে বৃদ্ধ সেবা ও ক্রীড়া খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর, যা সেবা খাতকে শক্তিশালী করবে।

BankTrack – UBS

শিরোনামধর্মী লক্ষ্য: উন্নত উৎপাদনের পথে চীনের যাত্রা

২০৩০-এর পথে চীন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উন্নত উৎপাদনশিল্পে।

শি জিনপিং বারবার বলেছেন, “নতুন মানের উৎপাদনশক্তি” তৈরি করাই হবে চীনের মূল লক্ষ্য।

দেশটি ইতোমধ্যেই বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার দখল করেছে; এবার লক্ষ্য মানবাকৃতির রোবট, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

পরিকল্পনায় থাকতে পারে কারখানায় অটোমেশন বৃদ্ধি ও গবেষণা-উন্নয়ন খাতে ব্যয়বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য।

চীনের লক্ষ্য—২০৩০ সালের মধ্যে ৯০% উৎপাদন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত করা, যাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে।

প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা: ‘গলা টিপে ধরা’ অবসান

চীনের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো বিদেশি প্রযুক্তিনির্ভরতা কমানো।

বিশেষত উন্নত সেমিকন্ডাক্টর ও বিমান ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে দেশটি আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল।

২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনে উচ্চমানের চিপ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, যা এখন বড় দুর্বলতা হিসেবে বিবেচিত।

সাম্প্রতিক এক সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভর হওয়াই হবে “মার্কিন ও পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধ ও নিয়ন্ত্রণ মোকাবিলার মৌলিক উপায়।”

Exploring the Chinese Gem and Jewelry Industry | Gems & Gemology

ভোগব্যয় বাড়ানোর কৌশল: জনগণের পকেট খুলবে কীভাবে?

চীনের পূর্ববর্তী পরিকল্পনাগুলোতে ‘দেশীয় বাজারের ওপর বেশি নির্ভরশীলতা’ নিয়ে কথা থাকলেও কার্যকর নীতি ছিল অস্পষ্ট।

এবার অর্থনীতিবিদরা চাইছেন ভোগব্যয়ের অংশকে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে—যা বর্তমানে জিডিপির ৫৭% (বিশ্ব গড় ৭৩%)।

পিকিং ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ লু ফেং প্রস্তাব দিয়েছেন ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫ থেকে ১০ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর।

অন্যদিকে সাবেক পরিকল্পনাবিদ পেং সেন বলেছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে এটি ৭০% অতিক্রম করা উচিত।

ভোগ বাড়ানোর পদক্ষেপ: ছোট প্রণোদনা থেকে বড় ভাবনা

সরকার ইতোমধ্যে ভোগব্যয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে—

  • • ভোক্তা ঋণে ভর্তুকি,
  • • পুরনো ইলেকট্রনিক পণ্য বদলে নতুন কেনার প্রচারণা,
  • • এবং তিন বছরের নিচের প্রতিটি সন্তানের জন্য বছরে ৩,৬০০ ইউয়ান অনুদান।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তা বিনিয়োগ।

এতে দরিদ্র জনগণ ভবিষ্যতের চিকিৎসা বা বার্ধক্যের আশঙ্কা কম অনুভব করবে এবং খরচে আগ্রহী হবে।

Roar বাংলা - চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর দায়িত্বের মেয়াদ বাড়ানোর  প্রস্তাব

রাজনৈতিক বাস্তবতা: শি জিনপিংয়ের কল্যাণনীতি-বিরোধিতা

তবে এই সংস্কার সহজ নয়। স্থানীয় সরকারগুলো পেনশন পরিচালনায় আগেই অর্থসংকটে আছে।

কেন্দ্র তাদের কিছু বন্ড ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত সহায়তায় অনীহা দেখাচ্ছে।

আর সবচেয়ে বড় বাধা—শি জিনপিংয়ের মতাদর্শগত আপত্তি।

তিনি ২০২১ সালে বলেছিলেন, “অতিরিক্ত কল্যাণনীতি মানুষকে অলস করে তোলে এবং রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করে।”

ফলে পরিকল্পনাটি সম্ভবত একটি আপসের পথ নেবে—ভোগব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্য থাকবে, তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যাগত লক্ষ্য ঘোষণা নাও করা হতে পারে।

সম্ভবত বলা হবে, গড় আয় জিডিপির চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, যা আগের পরিকল্পনায় ছিল “জিডিপির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ”।

বাস্তববাদী পরিকল্পনা নাকি রাজনৈতিক বার্তা?

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার বেড্ডর বলেন, “রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে চীনের হাতে নীতিগত বিকল্প কম।”

অতীতে যেমন দেখা গেছে, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় নির্ধারিত বেশিরভাগ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, কারণ কর্মকর্তারা শুধু বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যই নির্ধারণ করেন।
১৯৯০-এর দশকের তুলনায় এখন “কঠিন” অর্থনৈতিক লক্ষ্য কম, তবে পরিকল্পনা প্রণয়ন হয়েছে “আরও বৈজ্ঞানিক ও মানসম্মত।”

অতীত ও ভবিষ্যতের সংমিশ্রণে এই নতুন পরিকল্পনা একদিকে রাজনৈতিক বার্তা, অন্যদিকে ২০৩০-এর দিকে চীনের অগ্রগতির সবচেয়ে বাস্তবসম্মত রূপরেখা।

#চীন #অর্থনীতি২০৩০ #শিজিনপিং #পাঁচবছর_মেয়াদি_পরিকল্পনা #চীনপ্রযুক্তি #সারাক্ষণরিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

আজ পার্থ থেকে ডব্লিউডব্লিউই ক্রাউন জুয়েল—দেখবেন কীভাবে

চীনের অর্থনীতি ২০৩০: শি জিনপিংয়ের হাতে নতুন পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনার রূপরেখা

০৫:০৪:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

 ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে চীনের শীর্ষ সম্মেলন

বেইজিংয়ের ঐতিহাসিক জিংসি হোটেলে আগামী ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। সেখানে ৩৭০ জন শীর্ষ কর্মকর্তা বসবেন ২০৩০ সাল পর্যন্ত চীনের অর্থনৈতিক রূপরেখা নির্ধারণে। এটি হবে ১৯৪৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পার্টির ১৫তম পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে এই পরিকল্পনা বিশাল—উন্নত উৎপাদন থেকে শুরু করে সবুজ উন্নয়ন পর্যন্ত নানা বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেই সরাসরি এই পরিকল্পনা তৈরিতে অংশ নিচ্ছেন।

লিড: শি জিনপিংয়ের “নতুন চীনা মডেল” — প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রিত কল্যাণনীতি

চীনের আসন্ন পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা শুধু একটি অর্থনৈতিক দলিল নয়; এটি শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে গঠিত নতুন এক রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিনির্ভর রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিফলন। দেশটি এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক উৎপাদন, এবং দেশীয় প্রযুক্তি হবে বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। একই সঙ্গে ভোক্তা ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণনীতি নিয়ে পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাচ্ছে—যেখানে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে, কিন্তু জনগণের জীবনমানও ধীরে ধীরে উন্নত করা হবে। এই পরিকল্পনা তাই চীনের অর্থনীতিকে নতুন পথে এগিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি, শি জিনপিংয়ের ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও রাজনৈতিক মতাদর্শেরও প্রতীক হয়ে উঠছে।

Xi Jinping is personally involved in China's new five-year plan

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট: বৃদ্ধির মাঝেও ভোক্তা সংকট

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে চীনের জিডিপি বেড়েছে ৫.৩%—যার মূল অবদান এসেছে উৎপাদন খাত ও রপ্তানি থেকে। তবে ভোক্তা ব্যয় আশানুরূপ নয়।

চীনা নাগরিকদের সঞ্চয়প্রবণতা, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং সম্পত্তি খাতের মন্দা তাদের খরচ কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলেই দেশটি মুদ্রাস্ফীতির বদলে মূল্যসংকোচন (deflation)-এর মুখোমুখি—২০২৫ সালের আগস্টে ভোক্তা মূল্য কমেছে ০.৪%।

দেশীয় চাহিদা দুর্বল থাকায় চীন বিশ্ব উৎপাদনে ৩০% অবদান রাখলেও ভোগ করছে মাত্র ১৮%। ফলে অন্যান্য দেশগুলোতে সুরক্ষাবাদী নীতি বাড়ছে, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর নির্ভর করছে বাণিজ্য যুদ্ধের অনিশ্চিত ভারসাম্য।

পরিকল্পনার ভেতরের গল্প: গোপন কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ প্রক্রিয়া

চীনের পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা বিশাল ও জটিল, কিন্তু প্রতিটি পরিকল্পনা পার্টির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার ইঙ্গিত দেয়।

অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয়। এবারের পরিকল্পনায় শি জিনপিং এমনকি অনলাইন ব্যবহারকারীদের মতামতকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন।
বিদেশিরাও পরামর্শ দিচ্ছে—যেমন মার্কিন ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন্ট ভোগব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন; সিটিগ্রুপ ১১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ব্যয়ের প্রস্তাব দিয়েছে শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা ও উন্নত স্বাস্থ্যবীমা সুবিধা বাড়াতে।

ইউবিএস ব্যাংক প্রস্তাব দিয়েছে বৃদ্ধ সেবা ও ক্রীড়া খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর, যা সেবা খাতকে শক্তিশালী করবে।

BankTrack – UBS

শিরোনামধর্মী লক্ষ্য: উন্নত উৎপাদনের পথে চীনের যাত্রা

২০৩০-এর পথে চীন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে উন্নত উৎপাদনশিল্পে।

শি জিনপিং বারবার বলেছেন, “নতুন মানের উৎপাদনশক্তি” তৈরি করাই হবে চীনের মূল লক্ষ্য।

দেশটি ইতোমধ্যেই বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার দখল করেছে; এবার লক্ষ্য মানবাকৃতির রোবট, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।

পরিকল্পনায় থাকতে পারে কারখানায় অটোমেশন বৃদ্ধি ও গবেষণা-উন্নয়ন খাতে ব্যয়বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য।

চীনের লক্ষ্য—২০৩০ সালের মধ্যে ৯০% উৎপাদন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত করা, যাতে উৎপাদনশীলতা বাড়ে।

প্রযুক্তিগত স্বাধীনতা: ‘গলা টিপে ধরা’ অবসান

চীনের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো বিদেশি প্রযুক্তিনির্ভরতা কমানো।

বিশেষত উন্নত সেমিকন্ডাক্টর ও বিমান ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে দেশটি আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল।

২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনে উচ্চমানের চিপ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে, যা এখন বড় দুর্বলতা হিসেবে বিবেচিত।

সাম্প্রতিক এক সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভর হওয়াই হবে “মার্কিন ও পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধ ও নিয়ন্ত্রণ মোকাবিলার মৌলিক উপায়।”

Exploring the Chinese Gem and Jewelry Industry | Gems & Gemology

ভোগব্যয় বাড়ানোর কৌশল: জনগণের পকেট খুলবে কীভাবে?

চীনের পূর্ববর্তী পরিকল্পনাগুলোতে ‘দেশীয় বাজারের ওপর বেশি নির্ভরশীলতা’ নিয়ে কথা থাকলেও কার্যকর নীতি ছিল অস্পষ্ট।

এবার অর্থনীতিবিদরা চাইছেন ভোগব্যয়ের অংশকে স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে—যা বর্তমানে জিডিপির ৫৭% (বিশ্ব গড় ৭৩%)।

পিকিং ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ লু ফেং প্রস্তাব দিয়েছেন ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৫ থেকে ১০ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর।

অন্যদিকে সাবেক পরিকল্পনাবিদ পেং সেন বলেছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে এটি ৭০% অতিক্রম করা উচিত।

ভোগ বাড়ানোর পদক্ষেপ: ছোট প্রণোদনা থেকে বড় ভাবনা

সরকার ইতোমধ্যে ভোগব্যয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে—

  • • ভোক্তা ঋণে ভর্তুকি,
  • • পুরনো ইলেকট্রনিক পণ্য বদলে নতুন কেনার প্রচারণা,
  • • এবং তিন বছরের নিচের প্রতিটি সন্তানের জন্য বছরে ৩,৬০০ ইউয়ান অনুদান।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন বৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তা বিনিয়োগ।

এতে দরিদ্র জনগণ ভবিষ্যতের চিকিৎসা বা বার্ধক্যের আশঙ্কা কম অনুভব করবে এবং খরচে আগ্রহী হবে।

Roar বাংলা - চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর দায়িত্বের মেয়াদ বাড়ানোর  প্রস্তাব

রাজনৈতিক বাস্তবতা: শি জিনপিংয়ের কল্যাণনীতি-বিরোধিতা

তবে এই সংস্কার সহজ নয়। স্থানীয় সরকারগুলো পেনশন পরিচালনায় আগেই অর্থসংকটে আছে।

কেন্দ্র তাদের কিছু বন্ড ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু অতিরিক্ত সহায়তায় অনীহা দেখাচ্ছে।

আর সবচেয়ে বড় বাধা—শি জিনপিংয়ের মতাদর্শগত আপত্তি।

তিনি ২০২১ সালে বলেছিলেন, “অতিরিক্ত কল্যাণনীতি মানুষকে অলস করে তোলে এবং রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি করে।”

ফলে পরিকল্পনাটি সম্ভবত একটি আপসের পথ নেবে—ভোগব্যয় বাড়ানোর লক্ষ্য থাকবে, তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যাগত লক্ষ্য ঘোষণা নাও করা হতে পারে।

সম্ভবত বলা হবে, গড় আয় জিডিপির চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, যা আগের পরিকল্পনায় ছিল “জিডিপির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ”।

বাস্তববাদী পরিকল্পনা নাকি রাজনৈতিক বার্তা?

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস্টোফার বেড্ডর বলেন, “রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে চীনের হাতে নীতিগত বিকল্প কম।”

অতীতে যেমন দেখা গেছে, পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনায় নির্ধারিত বেশিরভাগ লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, কারণ কর্মকর্তারা শুধু বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যই নির্ধারণ করেন।
১৯৯০-এর দশকের তুলনায় এখন “কঠিন” অর্থনৈতিক লক্ষ্য কম, তবে পরিকল্পনা প্রণয়ন হয়েছে “আরও বৈজ্ঞানিক ও মানসম্মত।”

অতীত ও ভবিষ্যতের সংমিশ্রণে এই নতুন পরিকল্পনা একদিকে রাজনৈতিক বার্তা, অন্যদিকে ২০৩০-এর দিকে চীনের অগ্রগতির সবচেয়ে বাস্তবসম্মত রূপরেখা।

#চীন #অর্থনীতি২০৩০ #শিজিনপিং #পাঁচবছর_মেয়াদি_পরিকল্পনা #চীনপ্রযুক্তি #সারাক্ষণরিপোর্ট