বাণিজ্য যুদ্ধের কথা শুনলেই সাধারণত আমরা ভাবি যে, এতে কেউই জিততে পারে না। তবে, আমেরিকান সয়া বীজ চাষিদের জন্য এটি সত্য হলেও, ব্রাজিলের সয়া চাষিরা এতে লাভবান হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আমেরিকান কৃষকরা চীনের বাজারে তাদের পণ্য রপ্তানি করতে পারছেন না, আর এর ফলস্বরূপ ব্রাজিলের সয়া চাষিরা তাদের অবস্থান দৃঢ় করেছে।
আমেরিকার ক্ষতি এবং ব্রাজিলের লাভ
চীনের সয়া বীজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র, কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধি করার পর থেকে চীন তাদের আমদানি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে, আমেরিকান কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, ব্রাজিলের সয়া চাষিরা এতে লাভবান হয়েছে। চীনের বাজারে ব্রাজিলের সয়া বীজের অংশ ২০১৭ সালে যেখানে অর্ধেক ছিল, সেখানে ২০১৮ সালে তা বেড়ে তিন চতুর্থাংশে পৌঁছেছিল।
বিশ্ববাজারে ব্রাজিলের আধিপত্য
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সয়ার মূল্য আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়। ব্রাজিলের কৃষকরা জমি কিনে সয়া বীজ চাষ করতে শুরু করেন এবং ২০২৩ সালে ১০০ মিলিয়ন টন রপ্তানি করে। বর্তমানে, চীন আমেরিকার সয়া বীজ আমদানি বন্ধ রাখায় ব্রাজিলের সয়া বীজ রপ্তানি ২০২৫ সালে ১১০ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে, যা ব্রাজিলের অর্থনৈতিক লাভ নিশ্চিত করবে।
চীন এবং আমেরিকার শুল্ক পরিস্থিতি
আগামী অক্টোবর মাসে, ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দক্ষিণ কোরিয়ায় এপেক সম্মেলনে সাক্ষাৎ করবেন এবং সয়া বীজ নিয়ে আলোচনা করবেন। যদি চীনের আমদানি নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়, তবুও আমেরিকান সয়া বীজের ওপর শুল্কের হার বেশি থাকায় ব্রাজিলের সয়া বীজের তুলনায় আমেরিকান সয়া বীজের দাম প্রতিযোগিতামূলক হতে পারবে না।
ব্রাজিলের ভবিষ্যত সম্ভাবনা
ব্রাজিলের সয়া চাষিরা তাদের উৎপাদন হেজ করার জন্য চুক্তি করতে পারে; তবে এখন পর্যন্ত তারা স্থিতিশীল রয়েছে এবং আশাবাদী। ব্রাজিলের সয়া চাষের মৌসুম আমেরিকান চাষের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন, যা ব্রাজিলকে দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষত, আমেরিকার সয়া বীজ গুদামে জমে থাকা অবস্থায় ব্রাজিলের চাষিরা তাদের নতুন সয়া বীজ শীঘ্রই বাজারে পাঠাতে পারবে।
সয়াবিন চাষে ব্রাজিলের শক্তি
অ্যাবিওভের ড্যানিয়েল ফুরলান আমারাল বলেন, শুধু ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধই নয়, ব্রাজিলের সয়া বীজের প্রোটিনের পরিমাণ আমেরিকার তুলনায় বেশি, কৃষি খাতও আরও উৎপাদনশীল এবং ব্রাজিলের কৃষি ক্ষেত্র অনেক বড়। ব্রাজিলের প্রশস্ত ভূখণ্ড এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সয়া বীজের চাহিদা থাকায় ব্রাজিলের সয়া চাষে আরও উন্নতি সম্ভব।
অবশেষে, ব্রাজিলের সয়া চাষের বিজয় শুধুমাত্র বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে নয়, বরং কৃষির ক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাজারের জন্য তাদের প্রস্তুতির কারণে। যদিও আমেরিকা একসময় আবার সয়া বীজের বাজারে প্রতিযোগিতায় ফিরতে পারে, তবে ব্রাজিল তার অবস্থান শক্ত করে রেখেছে এবং বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সয়া উৎপাদক হিসেবে দখল পাকাপোক্ত করেছে।