০৬:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের শুল্কের আসল বোঝা: ভোক্তা ও কোম্পানিই এখন মূল দাম দিচ্ছে এলএনজি বাড়ানোর পরিকল্পনা—দাম কমবে, নাকি পাইপলাইনই বাধা? ব্রিটিশ রাজনীতিকদের প্রতি গুপ্তচরবৃত্তির হুমকি—রাশিয়া ও চীনের কার্যক্রমে সতর্ক করল এমআই৫ সুন্দরবনের মাডস্কিপার: হারিয়ে যাওয়া ইন্ডিকেটর প্রজাতি ও ডাঙায় ওঠার বিবর্তন-গল্প ইউরোপ প্রযুক্তি দৌড়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পেছনে—নোবেলজয়ী ফিলিপ আগিয়োঁর ঘৃণার মঞ্চ নাকি সমুদ্রের সহমর্মিতা?—দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ইউ-বোট অভিযানের সত্য-অন্বেষণ “চুক্তির পরের পরীক্ষা: নেতানিয়াহুকে কি ট্রাম্প বোঝাতে পারবেন? ইউএইতে স্বর্ণের দাম দিরহাম ৫০০ ছোঁয়ার দরজায়—ভবিষ্যত বিশ্লেষকরা বলছে দাম আরো বাড়বে্ কীভাবে রাশিয়ার তেল আয় বছরে ৮০ বিলিয়ন ডলার কমানো যায় ডলারের উত্থানের শক্তিশালী যুক্তি আছে

বিশ্ব যেন জ্বালানি তেলের পথ না নেয় — ন্যায্য ও টেকসই খনিজ রূপান্তরের আহ্বান

পরিচিতি: জ্বালানি রূপান্তরের নতুন বাস্তবতা

বিশ্ব এখন জ্বালানি রূপান্তরের পথে। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রযুক্তি—যেমন সোলার প্যানেল, উইন্ড টারবাইন, ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক যান—সবকিছুই নির্ভর করছে বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর। কিন্তু এই খনিজগুলো যদি জ্বালানি তেলের মতো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে পরিণত হয়, তবে বৈশ্বিক শক্তির ভবিষ্যৎ আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

সংকটের উৎস: বিরল খনিজে নির্ভরতা ও প্রতিযোগিতা

সম্প্রতি চীন বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কপার, লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট ও বিরল মাটির উপাদানগুলো সৌর প্যানেল, উইন্ড টারবাইন, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টরে অপরিহার্য। কিন্তু প্রতিটি দেশের কাছে “গুরুত্বপূর্ণ খনিজ” এর সংজ্ঞা আলাদা।

  • • কারও কাছে এটি কৌশলগত শিল্পের জন্য অপরিহার্য সম্পদ।
  • • কারও কাছে এটি “অস্ত্রায়িত” বাণিজ্যের ঝুঁকি।
  • • আবার যেসব দেশে প্রচুর খনিজ মজুদ, তাদের কাছে এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ।

এই বৈচিত্র্যময় অবস্থানগুলো বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।

Oil gains on short-covering, nuclear talks | Reuters

জ্বালানি তেলের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে

বিশ্ব তেলবাজারের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। যেমনভাবে OPEC উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিল এবং IEA উন্নত অর্থনীতির শক্তি নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করেছিল, তেমনই যদি খনিজ বাজারও “পক্ষ-বিপক্ষের লড়াইয়ে” পরিণত হয়, তাহলে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলো যেন জ্বালানি তেলের মতো “সংকটের রাজনীতিতে” না জড়িয়ে পড়ে।

ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপান্তর অপরিহার্য

জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়া হতে হবে ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক—যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে। এ জন্য, বৈশ্বিকভাবে একটি নিয়মভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি, যা খনিজ সরবরাহ, উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় নিশ্চিত করবে।

চারটি সম্ভাবনা: সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

১. তথ্য স্বচ্ছতা ও মানসম্মত ডেটা শেয়ারিং

ভারতের ন্যাশনাল জিওসায়েন্স ডেটা রিপোজিটরির মতো উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম বিশ্বব্যাপী খনিজ অনুসন্ধানের স্বচ্ছতা বাড়াতে পারে। মানসম্মত অনুসন্ধান তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ভবিষ্যৎ খনিজ নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে।

The world needs more critical minerals. Governments are not helping

২. আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান সহযোগিতা ও প্রযুক্তি ভাগাভাগি

মাত্র ১৫টি দেশ বিশ্বের ৫৫ থেকে ৯০ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মজুদ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই উৎস বৈচিত্র্য আনতে প্রযুক্তি বিনিময় ও যৌথ অনুসন্ধান অপরিহার্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর ভূগর্ভে নতুন সম্পদ শনাক্ত করা সম্ভব।

৩. খনিজ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তিতে যৌথ উন্নয়ন

যেসব দেশে বিপুল খনিজ সম্পদ আছে, তাদের সঙ্গে খনি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে নতুন প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি তৈরি করা উচিত। ভারতের CEEW এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটি ইতিমধ্যে সাত ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে, তবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আরও গবেষণা ও পুনর্ব্যবহার উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

৪. পুনর্ব্যবহার ও স্থানীয় সরবরাহ চেইন গঠন

সৌর প্যানেল, ব্যাটারি বা ইলেকট্রনিক বর্জ্য থেকে পুনরুদ্ধার করা খনিজ যেমন সিলিকন, কপার বা টেলুরিয়াম পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন, টেকসই সরবরাহ চেইন তৈরি করা সম্ভব। ভারতের “ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন” এ বিষয়েই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

Just Transitions and the UN Secretary-General's Panel Critical Energy  Transition Minerals Recommendations on “Resourcing The Energy Transition  Principles to Guide Critical Energy Transition Minerals Towards Equity and  Justice” - Centre for International

ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ

এই সুযোগগুলোর সঙ্গে ঝুঁকিও রয়েছে।

  • • জাতীয়করণ ও সীমাবদ্ধ আইন: স্থানীয় নীতিমালা হঠাৎ পরিবর্তিত হলে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে।
  • • মূলধন ব্যয়ের চাপ: খনি অনুসন্ধান প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগের পর সহজে প্রত্যাহার করা কঠিন।
  • • অবকাঠামোগত ঘাটতি: রেল, বন্দর ও পরিবহন দুর্বল হলে খনিজ রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়।

এই ঝুঁকি কমাতে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমর্থন ও পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

বৈশ্বিক সহযোগিতার কাঠামো

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক প্যানেল “গ্লোবাল ট্রেসেবিলিটি ও স্বচ্ছতা ফ্রেমওয়ার্ক” তৈরির পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে পরিত্যক্ত খনি পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের কথাও উঠে আসে।

COP সম্মেলনগুলোতেও নেতারা আহ্বান জানিয়েছেন—

  • • প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে,
  • • ন্যায্য লাভ বণ্টন নিশ্চিত করে,
  • • দায়িত্বশীল খনি কার্যক্রম ও প্রযুক্তি সহযোগিতা জোরদার করতে।

Is the world replacing oil dependency with critical minerals? | World  Economic Forum

নতুন উদ্যোগ ও বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্ম

ইতিমধ্যে কিছু আন্তর্জাতিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে—

  • • মিনারেল সিকিউরিটি পার্টনারশিপ (MSP) : ১৪ অর্থনীতি নিয়ে গঠিত জোট, যেখানে ভারত প্রথম নন–জি–৭ সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়।
  • • G20-এর উচ্চস্তরের নীতিমালা: ভারতের নেতৃত্বে ২০২৩ সালে গৃহীত হয় “ক্রিটিক্যাল মিনারেল সহযোগিতা নীতিমালা”।
  • • আফ্রিকা মিনারেলস স্ট্রাটেজি গ্রুপ: অক্টোবর ২০২৫-এ শীর্ষ সম্মেলন হবে।

এই সব উদ্যোগের লক্ষ্য—প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই খনিজ ব্যবস্থাপনা।

ভবিষ্যৎ দিশা: ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তি

খনিজ সম্পদের শাসন ব্যবস্থায় এখন প্রয়োজন—

  • • সমন্বিত মান ও নিয়ন্ত্রণনীতি,
  • • সামাজিক ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতা,
  • • প্রযুক্তি সহায়তা ও মূলধন ভাগাভাগির মডেল,
  • • এবং সার্কুলার অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে।
জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের শুল্কের আসল বোঝা: ভোক্তা ও কোম্পানিই এখন মূল দাম দিচ্ছে

বিশ্ব যেন জ্বালানি তেলের পথ না নেয় — ন্যায্য ও টেকসই খনিজ রূপান্তরের আহ্বান

০২:৩১:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

পরিচিতি: জ্বালানি রূপান্তরের নতুন বাস্তবতা

বিশ্ব এখন জ্বালানি রূপান্তরের পথে। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রযুক্তি—যেমন সোলার প্যানেল, উইন্ড টারবাইন, ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক যান—সবকিছুই নির্ভর করছে বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর। কিন্তু এই খনিজগুলো যদি জ্বালানি তেলের মতো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে পরিণত হয়, তবে বৈশ্বিক শক্তির ভবিষ্যৎ আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

সংকটের উৎস: বিরল খনিজে নির্ভরতা ও প্রতিযোগিতা

সম্প্রতি চীন বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কপার, লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট ও বিরল মাটির উপাদানগুলো সৌর প্যানেল, উইন্ড টারবাইন, বৈদ্যুতিক গাড়ি ও সেমিকন্ডাক্টরে অপরিহার্য। কিন্তু প্রতিটি দেশের কাছে “গুরুত্বপূর্ণ খনিজ” এর সংজ্ঞা আলাদা।

  • • কারও কাছে এটি কৌশলগত শিল্পের জন্য অপরিহার্য সম্পদ।
  • • কারও কাছে এটি “অস্ত্রায়িত” বাণিজ্যের ঝুঁকি।
  • • আবার যেসব দেশে প্রচুর খনিজ মজুদ, তাদের কাছে এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ।

এই বৈচিত্র্যময় অবস্থানগুলো বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।

Oil gains on short-covering, nuclear talks | Reuters

জ্বালানি তেলের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে

বিশ্ব তেলবাজারের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় এসেছে। যেমনভাবে OPEC উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিল এবং IEA উন্নত অর্থনীতির শক্তি নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করেছিল, তেমনই যদি খনিজ বাজারও “পক্ষ-বিপক্ষের লড়াইয়ে” পরিণত হয়, তাহলে উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন—গুরুত্বপূর্ণ খনিজগুলো যেন জ্বালানি তেলের মতো “সংকটের রাজনীতিতে” না জড়িয়ে পড়ে।

ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রূপান্তর অপরিহার্য

জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়া হতে হবে ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক—যাতে কেউ পিছিয়ে না পড়ে। এ জন্য, বৈশ্বিকভাবে একটি নিয়মভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি, যা খনিজ সরবরাহ, উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় নিশ্চিত করবে।

চারটি সম্ভাবনা: সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

১. তথ্য স্বচ্ছতা ও মানসম্মত ডেটা শেয়ারিং

ভারতের ন্যাশনাল জিওসায়েন্স ডেটা রিপোজিটরির মতো উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম বিশ্বব্যাপী খনিজ অনুসন্ধানের স্বচ্ছতা বাড়াতে পারে। মানসম্মত অনুসন্ধান তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ ভবিষ্যৎ খনিজ নীতিনির্ধারণে সহায়ক হবে।

The world needs more critical minerals. Governments are not helping

২. আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান সহযোগিতা ও প্রযুক্তি ভাগাভাগি

মাত্র ১৫টি দেশ বিশ্বের ৫৫ থেকে ৯০ শতাংশ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ মজুদ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই উৎস বৈচিত্র্য আনতে প্রযুক্তি বিনিময় ও যৌথ অনুসন্ধান অপরিহার্য। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রিমোট সেন্সিংয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর ভূগর্ভে নতুন সম্পদ শনাক্ত করা সম্ভব।

৩. খনিজ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তিতে যৌথ উন্নয়ন

যেসব দেশে বিপুল খনিজ সম্পদ আছে, তাদের সঙ্গে খনি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে নতুন প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি তৈরি করা উচিত। ভারতের CEEW এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশটি ইতিমধ্যে সাত ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ বাণিজ্যিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে, তবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আরও গবেষণা ও পুনর্ব্যবহার উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

৪. পুনর্ব্যবহার ও স্থানীয় সরবরাহ চেইন গঠন

সৌর প্যানেল, ব্যাটারি বা ইলেকট্রনিক বর্জ্য থেকে পুনরুদ্ধার করা খনিজ যেমন সিলিকন, কপার বা টেলুরিয়াম পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন, টেকসই সরবরাহ চেইন তৈরি করা সম্ভব। ভারতের “ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন” এ বিষয়েই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

Just Transitions and the UN Secretary-General's Panel Critical Energy  Transition Minerals Recommendations on “Resourcing The Energy Transition  Principles to Guide Critical Energy Transition Minerals Towards Equity and  Justice” - Centre for International

ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ

এই সুযোগগুলোর সঙ্গে ঝুঁকিও রয়েছে।

  • • জাতীয়করণ ও সীমাবদ্ধ আইন: স্থানীয় নীতিমালা হঠাৎ পরিবর্তিত হলে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ে।
  • • মূলধন ব্যয়ের চাপ: খনি অনুসন্ধান প্রকল্পে বিপুল বিনিয়োগের পর সহজে প্রত্যাহার করা কঠিন।
  • • অবকাঠামোগত ঘাটতি: রেল, বন্দর ও পরিবহন দুর্বল হলে খনিজ রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়।

এই ঝুঁকি কমাতে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সমর্থন ও পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

বৈশ্বিক সহযোগিতার কাঠামো

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক প্যানেল “গ্লোবাল ট্রেসেবিলিটি ও স্বচ্ছতা ফ্রেমওয়ার্ক” তৈরির পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে পরিত্যক্ত খনি পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের কথাও উঠে আসে।

COP সম্মেলনগুলোতেও নেতারা আহ্বান জানিয়েছেন—

  • • প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে,
  • • ন্যায্য লাভ বণ্টন নিশ্চিত করে,
  • • দায়িত্বশীল খনি কার্যক্রম ও প্রযুক্তি সহযোগিতা জোরদার করতে।

Is the world replacing oil dependency with critical minerals? | World  Economic Forum

নতুন উদ্যোগ ও বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্ম

ইতিমধ্যে কিছু আন্তর্জাতিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে—

  • • মিনারেল সিকিউরিটি পার্টনারশিপ (MSP) : ১৪ অর্থনীতি নিয়ে গঠিত জোট, যেখানে ভারত প্রথম নন–জি–৭ সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়।
  • • G20-এর উচ্চস্তরের নীতিমালা: ভারতের নেতৃত্বে ২০২৩ সালে গৃহীত হয় “ক্রিটিক্যাল মিনারেল সহযোগিতা নীতিমালা”।
  • • আফ্রিকা মিনারেলস স্ট্রাটেজি গ্রুপ: অক্টোবর ২০২৫-এ শীর্ষ সম্মেলন হবে।

এই সব উদ্যোগের লক্ষ্য—প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতার মাধ্যমে টেকসই খনিজ ব্যবস্থাপনা।

ভবিষ্যৎ দিশা: ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তি

খনিজ সম্পদের শাসন ব্যবস্থায় এখন প্রয়োজন—

  • • সমন্বিত মান ও নিয়ন্ত্রণনীতি,
  • • সামাজিক ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতা,
  • • প্রযুক্তি সহায়তা ও মূলধন ভাগাভাগির মডেল,
  • • এবং সার্কুলার অর্থনীতি গড়ে তোলা, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে।