সমুদ্রপথে সংঘর্ষে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা বৃদ্ধি
দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপাঞ্চলে এক সমুদ্র সংঘর্ষের ঘটনায় ফিলিপাইন ও চীন পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে থিতু দ্বীপের (স্থানীয়ভাবে পাগ-আসা নামে পরিচিত) কাছাকাছি এলাকায়, যা বর্তমানে ফিলিপাইনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক আচরণের অভিযোগ তুলেছে, ফলে এই সম্পদসমৃদ্ধ সমুদ্র অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে।
ফিলিপাইনের অভিযোগ: জল কামান ও জাহাজ ধাক্কার ঘটনা
ফিলিপাইন মেরিটাইম কাউন্সিল জানিয়েছে, চীনের সামুদ্রিক বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে জল কামান ব্যবহার করে এবং একটি ফিলিপাইনি জাহাজে ধাক্কা দেয়। তারা ঘটনাটিকে “গুরুতর আক্রমণাত্মক আচরণ” বলে নিন্দা জানায় এবং কূটনৈতিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
ম্যানিলার কোস্ট গার্ড জানায়, স্থানীয় জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রবিবার সকালে তিনটি সরকারি জাহাজ দ্বীপের কাছে নোঙর করেছিল। তখন চীনা জাহাজগুলো এগিয়ে এসে তাদের ভয় দেখাতে জল কামান ব্যবহার করে। প্রায় এক ঘণ্টা পর একটি চীনা কোস্ট গার্ড জাহাজ সরাসরি জল কামান ছুড়ে ফিলিপাইনি জাহাজের পেছনের অংশে ধাক্কা দেয়। এতে জাহাজের সামান্য ক্ষতি হলেও কেউ আহত হয়নি বলে জানা গেছে।
চীনের পাল্টা দাবি: ফিলিপাইনের ‘অবৈধ প্রবেশ’
অন্যদিকে বেইজিংয়ের দাবি, দুটি ফিলিপাইনি সরকারি জাহাজ স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের থিতু রিফ এলাকার স্যান্ডি কেয়ের কাছের চীনা জলসীমায় ‘অবৈধভাবে প্রবেশ’ করেছিল। তাদের মতে, এতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
চীনা কোস্ট গার্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়, একটি ফিলিপাইনি জাহাজ ‘বিপজ্জনকভাবে কাছে চলে আসে’, ফলে চীনা জাহাজের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়। বেইজিং এই ঘটনার জন্য ম্যানিলাকেই দায়ী করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফিলিপাইনকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানিলাভিত্তিক রাষ্ট্রদূত মেরি কে কার্লসন সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে ঘটনাটিকে “চীনের বিপজ্জনক ও আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে এমন কর্মকাণ্ড আঞ্চলিক শান্তি ও নৌ চলাচলের স্বাধীনতার জন্য হুমকি।
ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা স্থানীয় জেলেদের জীবিকা রক্ষায় এবং সার্বভৌম অধিকারের সুরক্ষায় এলাকাটিতে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
বিতর্কিত সাগরে দীর্ঘদিনের সংঘাত
স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের এই অঞ্চল বহু বছর ধরেই ফিলিপাইন ও চীনের মধ্যে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। সাম্প্রতিক সময়ে স্কারবোরো শোলসহ অন্যান্য বিতর্কিত এলাকাগুলোকেও কেন্দ্র করে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
চীন দক্ষিণ চীন সাগরের প্রায় পুরো অংশের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে। অন্যদিকে ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামও এ অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে নিজেদের দাবিকে জোরালো করে তুলেছে।
এই জলপথটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক রুট, যার মাধ্যমে প্রতিবছর তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য পরিবহন হয়। ফলে এখানে সংঘাতের প্রভাব বৈশ্বিক বাণিজ্যের ওপরও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষ কেবল দুই দেশের নয়, বরং পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে নতুন অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। ম্যানিলা ও বেইজিং—উভয় পক্ষের কঠোর অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্য সমর্থন এই বিরোধকে আরও গভীর করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
# দক্ষিণ_চীন_সাগর, ফিলিপাইন, চীন, থিতু_দ্বীপ, সমুদ্র_সংঘাত, আন্তর্জাতিক_রাজনীতি, আঞ্চলিক_উত্তেজনা, সারাক্ষণ_রিপোর্ট