০৮:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্য সিএমএইচে” নারীদের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ২৩২—ব্যাটিংয়ের পর এবার রক্ষণে স্পিন ভরসা মুন্সীগঞ্জে বাস–অটোরিকশা সংঘর্ষে প্রবীণ দম্পতি নিহত, আহত ৩ দুই বছরের বন্দিদশা শেষে মুক্তির প্রতীক্ষা—গাজার বন্দিশিবির থেকে ঘরে ফিরছেন জেইচিক পরিবারের শেষ দুই সদস্য পদ্মায় ২৫ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জালসহ নৌকা জব্দ, গোয়ালন্দে দুই জেলের কারাদণ্ড টাঙ্গাইলকে ময়মনসিংহ বিভাগে নেওয়ার ‘গুজব’ ঘিরে বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ অর্ধঘণ্টা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯ মাসে ৬০ কোটি টাকার চোরাচালান জব্দ, আটক ৫০১—বিজিবির অভিযান জোরদার আধুনিক সঙ্গীতের উত্তরাধিকার—‘অ্যাভান্ট-গার্ড’ ধারা ও সমকালীন সুরের নতুন ব্যাখ্যা চীনের সেপ্টেম্বর রপ্তানি–আমদানি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেল এআই-চালিত কর্মবাজারে নতুন দুশ্চিন্তা — সন্তানদের পেশাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভ্রান্ত অভিভাবকরা

ভারতে দেওয়ালী উৎসবের মৌসুমে ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি— উৎসব সামনে রেখে ক্রেডিট ও ছাড়ের অফারে সরব ভারতীয় ব্যাংকগুলো

সমৃদ্ধির প্রতীক দেওয়ালি ও অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাস

ভারতের সবচেয়ে উজ্জ্বল উৎসব ‘দেওয়ালি’ কেবল আলোয় ঘর সাজানোর উৎসব নয়—এটি নতুন সূচনা, আশীর্বাদ ও সমৃদ্ধির প্রতীক। শতাব্দীপ্রাচীন হিন্দু পুরাণ ও কিংবদন্তির ধারায় এই উৎসব ‘অশুভের ওপর শুভের জয়’ নির্দেশ করে। দেশজুড়ে ঘরবাড়ি সাজানো, প্রদীপ জ্বালানো, নতুন পোশাক ও গয়না কেনা এবং প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই উৎসব আনন্দে ভরে ওঠে।

অশ্বিন ও কার্তিক মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর) পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবকে ভারতীয়রা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে দেখে—বিশেষ করে নতুন কেনাকাটা বা বড় বিনিয়োগের জন্য। লক্ষ্মী দেবীর পূজা এই সময় সম্পদ ও সৌভাগ্যের আশীর্বাদ কামনার প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। তাই স্বর্ণ, গাড়ি, গয়না, বাড়ি, ও ইলেকট্রনিক পণ্যের মতো ব্যয়বহুল জিনিস কেনার জন্য এই সময়কে সবচেয়ে শুভ ধরা হয়।

Festive season spending in India: Experts say BNPL and credit fuelling growth, but debt risks loom - CNBC TV18

উৎসব ঘিরে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা

ভারতের মতো বিশাল অর্থনীতিতে (জনসংখ্যা ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি) দেওয়ালি মানেই অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাড়তি গতি। এ সময় ব্যাংকগুলো ক্রেতাদের জন্য নানা ধরনের সহজলভ্য ঋণ, কিস্তি সুবিধা ও ক্রেডিট অফার চালু করে, যাতে সাধারণ মানুষও নিজের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পায়।

ঋণ সুবিধা, নগদ ছাড়, এবং সহজ কিস্তি ব্যবস্থার কারণে ব্যাংকগুলো শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবাহ বাড়ায় না, বরং উৎসবের সময় জনগণের ভোক্তা আস্থা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় ক্রয়ের আগ্রহ বেড়ে যায়, যা সামগ্রিকভাবে বাজারে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।

ভোক্তা মনোবৃত্তি ও কেনাকাটার উন্মাদনা

দেওয়ালির সঙ্গে ভারতীয় সমাজে কেনাকাটা এক অবিচ্ছেদ্য প্রথা হয়ে গেছে। নতুন পোশাক, অলংকার, গৃহস্থালি সামগ্রী, গাড়ি, ইলেকট্রনিক পণ্য, এমনকি সম্পত্তিও এই সময় কেনা হয়। মানুষ তাদের বাড়ি সংস্কার করে, বাজারে ঘুরে কেনাকাটা করে এবং উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেয়।

এই সময়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রমও তুঙ্গে ওঠে। প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি মূলধনের সন্ধান করে, যাতে তারা বাড়তি চাহিদা মেটাতে পারে। ফলে ব্যাংক ঋণের চাহিদাও এই সময় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

২০২৫ সালের বাজেট: ‘দেওয়ালি বোনানজা’

Budget 2025 Date And Time: When Will Finance Minister Nirmala Sitharaman Present India's Union Budget This Year? - Outlook Money

চলতি বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটকে ভারতের গণমাধ্যমে ‘দেওয়ালি বোনানজা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এতে গৃহস্থালি পণ্য ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ওপর উল্লেখযোগ্য কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পরিবারের বাজেটে কিছুটা স্বস্তি এসেছে—খাদ্য, পোশাক, ওষুধসহ জরুরি পণ্যে ব্যয় কমেছে।

এই কর ছাড় শুধু উৎসবমুখর কেনাকাটাকে উৎসাহিত করছে না, বরং ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যবসায়ীরা নতুন অফার চালু করছেন, আর ক্রেতারাও নতুন কেনাকাটায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

অর্থনীতিতে উৎসবের প্রভাব

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও দ্রুত-বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে ভারত তার ভোক্তা সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করছে। উৎসবের মৌসুমে বিভিন্ন ব্র্যান্ড, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও দোকান বড় ছাড়ের প্রতিযোগিতায় নামে। এর ফলে উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি খাতে অর্থনৈতিক গতি বাড়ে।

দেওয়ালির আনন্দ তাই কেবল ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক নয়—এটি ভারতীয় অর্থনীতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। ব্যাংকগুলোর সক্রিয় ভূমিকা, সরকারের কর ছাড়, এবং মানুষের ক্রয়প্রবণতা—সব মিলিয়ে এই উৎসব এখন এক মহা অর্থনৈতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

দেওয়ালি ভারতের ঘরে আলো জ্বালানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতেও আলোর রেখা টেনে দেয়। ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই উৎসব প্রতিবারই নতুন করে “সমৃদ্ধি”র বার্তা বয়ে আনে। আর ২০২৫ সালের দেওয়ালি সেই ধারারই আরও এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

#ভারত, দেওয়ালি, অর্থনীতি, ব্যাংক, উৎসব, ভোক্তা ব্যয়, কর ছাড়, ক্রেডিট অফার, ভারতীয় বাজেট, সমৃদ্ধি

জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্য সিএমএইচে”

ভারতে দেওয়ালী উৎসবের মৌসুমে ব্যাংকগুলোর প্রস্তুতি— উৎসব সামনে রেখে ক্রেডিট ও ছাড়ের অফারে সরব ভারতীয় ব্যাংকগুলো

০৪:২৯:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

সমৃদ্ধির প্রতীক দেওয়ালি ও অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাস

ভারতের সবচেয়ে উজ্জ্বল উৎসব ‘দেওয়ালি’ কেবল আলোয় ঘর সাজানোর উৎসব নয়—এটি নতুন সূচনা, আশীর্বাদ ও সমৃদ্ধির প্রতীক। শতাব্দীপ্রাচীন হিন্দু পুরাণ ও কিংবদন্তির ধারায় এই উৎসব ‘অশুভের ওপর শুভের জয়’ নির্দেশ করে। দেশজুড়ে ঘরবাড়ি সাজানো, প্রদীপ জ্বালানো, নতুন পোশাক ও গয়না কেনা এবং প্রিয়জনকে উপহার দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই উৎসব আনন্দে ভরে ওঠে।

অশ্বিন ও কার্তিক মাসে (অক্টোবর-নভেম্বর) পাঁচ দিনব্যাপী এই উৎসবকে ভারতীয়রা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে দেখে—বিশেষ করে নতুন কেনাকাটা বা বড় বিনিয়োগের জন্য। লক্ষ্মী দেবীর পূজা এই সময় সম্পদ ও সৌভাগ্যের আশীর্বাদ কামনার প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। তাই স্বর্ণ, গাড়ি, গয়না, বাড়ি, ও ইলেকট্রনিক পণ্যের মতো ব্যয়বহুল জিনিস কেনার জন্য এই সময়কে সবচেয়ে শুভ ধরা হয়।

Festive season spending in India: Experts say BNPL and credit fuelling growth, but debt risks loom - CNBC TV18

উৎসব ঘিরে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা

ভারতের মতো বিশাল অর্থনীতিতে (জনসংখ্যা ১.৪ বিলিয়নেরও বেশি) দেওয়ালি মানেই অর্থনৈতিক কার্যক্রমে বাড়তি গতি। এ সময় ব্যাংকগুলো ক্রেতাদের জন্য নানা ধরনের সহজলভ্য ঋণ, কিস্তি সুবিধা ও ক্রেডিট অফার চালু করে, যাতে সাধারণ মানুষও নিজের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পায়।

ঋণ সুবিধা, নগদ ছাড়, এবং সহজ কিস্তি ব্যবস্থার কারণে ব্যাংকগুলো শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবাহ বাড়ায় না, বরং উৎসবের সময় জনগণের ভোক্তা আস্থা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় ক্রয়ের আগ্রহ বেড়ে যায়, যা সামগ্রিকভাবে বাজারে নতুন প্রাণ সঞ্চার করে।

ভোক্তা মনোবৃত্তি ও কেনাকাটার উন্মাদনা

দেওয়ালির সঙ্গে ভারতীয় সমাজে কেনাকাটা এক অবিচ্ছেদ্য প্রথা হয়ে গেছে। নতুন পোশাক, অলংকার, গৃহস্থালি সামগ্রী, গাড়ি, ইলেকট্রনিক পণ্য, এমনকি সম্পত্তিও এই সময় কেনা হয়। মানুষ তাদের বাড়ি সংস্কার করে, বাজারে ঘুরে কেনাকাটা করে এবং উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে আনন্দ ভাগ করে নেয়।

এই সময়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রমও তুঙ্গে ওঠে। প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি মূলধনের সন্ধান করে, যাতে তারা বাড়তি চাহিদা মেটাতে পারে। ফলে ব্যাংক ঋণের চাহিদাও এই সময় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

২০২৫ সালের বাজেট: ‘দেওয়ালি বোনানজা’

Budget 2025 Date And Time: When Will Finance Minister Nirmala Sitharaman Present India's Union Budget This Year? - Outlook Money

চলতি বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটকে ভারতের গণমাধ্যমে ‘দেওয়ালি বোনানজা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এতে গৃহস্থালি পণ্য ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ওপর উল্লেখযোগ্য কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর ফলে পরিবারের বাজেটে কিছুটা স্বস্তি এসেছে—খাদ্য, পোশাক, ওষুধসহ জরুরি পণ্যে ব্যয় কমেছে।

এই কর ছাড় শুধু উৎসবমুখর কেনাকাটাকে উৎসাহিত করছে না, বরং ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ব্যবসায়ীরা নতুন অফার চালু করছেন, আর ক্রেতারাও নতুন কেনাকাটায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

অর্থনীতিতে উৎসবের প্রভাব

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ও দ্রুত-বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে ভারত তার ভোক্তা সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করছে। উৎসবের মৌসুমে বিভিন্ন ব্র্যান্ড, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও দোকান বড় ছাড়ের প্রতিযোগিতায় নামে। এর ফলে উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি খাতে অর্থনৈতিক গতি বাড়ে।

দেওয়ালির আনন্দ তাই কেবল ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক নয়—এটি ভারতীয় অর্থনীতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। ব্যাংকগুলোর সক্রিয় ভূমিকা, সরকারের কর ছাড়, এবং মানুষের ক্রয়প্রবণতা—সব মিলিয়ে এই উৎসব এখন এক মহা অর্থনৈতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।

দেওয়ালি ভারতের ঘরে আলো জ্বালানোর পাশাপাশি অর্থনীতিতেও আলোর রেখা টেনে দেয়। ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণে এই উৎসব প্রতিবারই নতুন করে “সমৃদ্ধি”র বার্তা বয়ে আনে। আর ২০২৫ সালের দেওয়ালি সেই ধারারই আরও এক উজ্জ্বল অধ্যায়।

#ভারত, দেওয়ালি, অর্থনীতি, ব্যাংক, উৎসব, ভোক্তা ব্যয়, কর ছাড়, ক্রেডিট অফার, ভারতীয় বাজেট, সমৃদ্ধি