শাস্তি ও জনসম্মুখে অপমান
চতুর্দশ শতকের লন্ডনে এক বেকার যদি ওজনে কম রুটি বিক্রি করত, তবে তাকে জনসম্মুখে শাস্তি পেতে হতো। এমনকি তাকে চিপসাইড নামের প্রধান কেনাকাটার রাস্তায় টেনে নিয়ে গিয়ে এক ঘণ্টার জন্য প্রকাশ্যে ‘পিলোরি’-তে রাখা হতো। এটি ছিল একধরনের জনসম্মুখে অপমানমূলক শাস্তি, যার মাধ্যমে ‘আসাইজ’ নামের এক আইন কার্যকর করা হতো—যা মূলত ক্রেতা সুরক্ষার ব্যবস্থা হিসেবে চালু ছিল।
‘আসাইজ’ আইন ও রুটির দাম
‘আসাইজ অব ব্রেড অ্যান্ড এল’ নামে এই আইনটি ছিল মধ্যযুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাজার-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল রুটির দাম ও ওজনের ভারসাম্য রাখা। শস্যের দাম বাড়লে রুটির ওজন স্বাভাবিকভাবেই কমিয়ে দেওয়া হতো, কারণ সেই সময়ের ইংল্যান্ডে রুটি বিক্রি হতো নির্দিষ্ট মূল্যে—ফার্দিং, হাফপেনি বা পেনি মুদ্রায়। দাম পরিবর্তনের কোনো সুযোগ ছিল না, তাই বেকারদের রুটির আকার ছোট করেই লাভের সমন্বয় করতে হতো।
অন্যদিকে, একই সময় ‘এল’ বা বিয়ারের দামও এই আসাইজ আইনের আওতায় থাকলেও সেখানে দাম কিছুটা বাড়ানো যেত, বিশেষ করে যখন শস্যের অভাব দেখা দিত।
নিয়ম ভাঙা ছিল সাধারণ ঘটনা
ইংল্যান্ডজুড়ে হাজার হাজার বেকার নিয়ম ভঙ্গ করত, অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবেই। কারণ, ওভেনে বেক করার পর রুটির ওজন ঠিক কত হবে, তা নির্ভুলভাবে হিসাব করা ছিল অত্যন্ত কঠিন। কয়েক আউন্সের পার্থক্যও আইন ভঙ্গ হিসেবে গণ্য হতো।
সবচেয়ে সাধারণ শাস্তি ছিল জরিমানা—সাধারণত চার পেনি (৪ডি), যা একদিনের শ্রমিকের মজুরির সমান। বেকাররা এটিকে ব্যবসার স্বাভাবিক খরচ হিসেবেই মেনে নিত, যেন এটি তাদের মুনাফার ওপর সরকারের একপ্রকার কর।
সরকার ও জনগণের পারস্পরিক স্বার্থ
এই আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে সরকার কেবল জরিমানার অর্থই পেত না, বরং সমাজে স্থিতিশীলতাও বজায় রাখত। কারণ রুটির ঘাটতি বা অতিরিক্ত দাম প্রায়ই জনঅসন্তোষ বা দাঙ্গার কারণ হতো। তাই আসাইজ আইনের লক্ষ্য ছিল রুটির বাজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত রাখা।
জনগণও এই আইনের সুফল উপলব্ধি করত। তারা জানত, বেকারদের মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তাই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বড় কোনো দাঙ্গা বাধত না। সামান্য অভিযোগ থাকলেও তারা জানত—আইন অন্তত তাদের পক্ষে কাজ করছে।
মধ্যযুগের অর্থনীতি ও সামাজিক ভারসাম্য
আসাইজ আইন কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ভারসাম্য রক্ষারও প্রতীক ছিল। এটি দেখায়, মধ্যযুগীয় ব্রিটেনে রাষ্ট্র কীভাবে বাজারে ন্যায্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল এবং একই সঙ্গে জনশান্তি রক্ষা করেছিল। রুটি, যা তখনকার মানুষের প্রধান খাদ্য, সেটির মাধ্যমে রাষ্ট্রের ন্যায়বোধ, শাসনব্যবস্থা ও সাধারণ মানুষের জীবনের চিত্র প্রতিফলিত হয়।
# ইতিহাস, মধ্যযুগ, রুটি, ব্রিটেন, আসাইজ আইন, বাণিজ্য, সমাজনীতি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট