বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা কমায় ডলারের উত্থান
সিঙ্গাপুর ও লন্ডন থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সোমবার ডলার সূচক কিছুটা শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে আসে। বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাম্প্রতিক বাণিজ্য বিরোধ নতুন করে তীব্র হবে না। শুক্রবারের বড় ধসের পর বাজারে ধীরে ধীরে স্থিতি ফিরছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে বৈশ্বিক বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে রবিবার ট্রাম্প তার “ট্রুথ সোশ্যাল” প্ল্যাটফর্মে বার্তা দিয়ে জানান, “চীন নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রেসিডেন্ট শি খুব সম্মানিত ব্যক্তি, তিনি তার দেশকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে চান না, আমিও তা চাই না। আমেরিকা চীনের ক্ষতি নয়, বরং সহযোগিতা করতে চায়।” এই বার্তা বিনিয়োগকারীদের কিছুটা আশ্বস্ত করেছে।
বাজারের সামগ্রিক চিত্র
ডলার সূচক, যা ছয়টি প্রধান মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন মুদ্রার মান পরিমাপ করে, সোমবার ০.২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৯.২–তে। সপ্তাহের শেষে যে পতন দেখা গিয়েছিল, তা থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পুনরুদ্ধার।
ইউরো ০.৩ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ১.১৫৮৪ ডলারে। ফ্রান্সে নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণার পরও ইউরোর তেমন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলেও আর্থিক স্থিতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ রয়ে গেছে।
অন্যদিকে জাপানি ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান ০.৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৫২.২৯৫ ইয়েনে। জাপানে সোমবার “হেলথ অ্যান্ড স্পোর্টস ডে” উপলক্ষে বাজার বন্ধ থাকায় লেনদেনের তারল্য কিছুটা কম ছিল।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বাজার প্রতিক্রিয়া
জাপানের নতুন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা সানায়ে তাকাইচির সামনে এখন বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। শুক্রবার কোয়েমিতো দল জোট সরকার থেকে সরে দাঁড়ানোয় তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা কিছুটা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
ইউরোপে ফরাসি রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্কের অনিশ্চয়তা বাজারে সতর্ক মনোভাব সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, “বিনিয়োগকারীরা আপাতত ট্রাম্পের বক্তব্যের নমনীয়তা দেখে আশ্বস্ত হলেও বাজারের স্থিতি এখনো ভঙ্গুর।”
ক্রিপ্টো ও মূল্যবান ধাতুর বাজারে অস্থিরতা
সপ্তাহান্তে তীব্র পতনের পর সোমবার ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে ওঠানামা চলতে থাকে। বিটকয়েন সামান্য ০.২ শতাংশ বেড়ে ১,১৫,৩১৩ ডলারে লেনদেন হচ্ছিল।
অন্যদিকে সোনার দাম আবারও নতুন রেকর্ড গড়েছে—প্রতি আউন্স ৪,০৭৯.১ ডলার। যা ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। একই সময়ে রূপার দামও কিছুটা বেড়েছে।
চীনের অর্থনৈতিক সূচকে স্থিতি
অফশোর ইউয়ান কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে প্রতি ডলারে ৭.১৪১৬ ইউয়ানে লেনদেন হচ্ছিল। রবিবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে, যা বাজারে কিছুটা আত্মবিশ্বাস ফিরিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ: “অস্থিরতা এখনো শেষ হয়নি”
মিতসুবিশি ইউএফজে ফিনান্সিয়াল গ্রুপের কৌশলবিদ লি হার্ডম্যান বলেন, “এ বছরের শুরুতেই আমরা দেখেছি, এমন উচ্চ শুল্কের চাপ দুই পক্ষের জন্যই দীর্ঘমেয়াদে টেকসই নয়। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে আবারও দেখা যাচ্ছে, তিনি হয়তো আপাতত উত্তেজনা কমানোর পথ খুঁজছেন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই পরিস্থিতি স্বল্পমেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে ওঠানামা বাড়াতে পারে এবং কিছু ক্যারি ট্রেড (নিম্ন সুদে ঋণ নিয়ে উচ্চ ফলনের মুদ্রায় বিনিয়োগ) উল্টো পথে যেতে পারে।”
সোমবার অস্ট্রেলিয়ান ডলার ০.৭৫ শতাংশ বেড়ে ০.৬৫২১ ডলারে পৌঁছেছে, যা দিনটির সেরা পারফর্মার। অপরদিকে পাউন্ড ১.৩৩২৭ ডলারে স্থির ছিল।
বাণিজ্য যুদ্ধের ইঙ্গিত ও রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও ডলারের পুনরুদ্ধার বাজারে সাময়িক স্থিতি এনেছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্কের অনিশ্চয়তা ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক পরিবর্তন ভবিষ্যতে আবারও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
# যুক্তরাষ্ট্র_চীন_বাণিজ্য, ডলার, ট্রাম্প, বিশ্ববাজার, ইউরো, ইয়েন, সোনা, ক্রিপ্টোকারেন্সি, অর্থনীতি, সারাক্ষণ_রিপোর্ট