যুদ্ধবিরতির মধ্যেও সতর্ক নজর
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে বন্দিমুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও কোনো আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হয়নি—এমনটাই জানিয়েছে ইসরায়েলি ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে দেখা যায়, একটি চেয়ার-সদৃশ আসন বা মঞ্চসদৃশ জায়গা তৈরি করা হয়েছে—যেন বন্দি বিনিময়ের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে। তবে সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, হামাসের ইয্যাদিন আল-কাসসাম ব্রিগেডের কোনো আনুষ্ঠানিক “বন্দি হস্তান্তর অনুষ্ঠান” অনুষ্ঠিত হয়নি।
অনুষ্ঠানের গুজব, কিন্তু নিশ্চিত নয় কোনো আয়োজন
সংবাদ প্রকাশের সময় পর্যন্ত বন্দি বিনিময়ের সময়সূচি, স্থান এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) ভূমিকা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ পেলেও কোনো অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ছবিগুলো অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করলেও, কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়টি স্বীকার করেনি।
আইসিআরসি-র তত্ত্বাবধানে বন্দি স্থানান্তর
সোমবার সকালে দক্ষিণ গাজায় বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা বৃহত্তর বন্দি-অদলবদল চুক্তির অংশ। আইসিআরসি বন্দিদের তুলে নেওয়া ও নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। পুরো প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও কঠোর নিরাপত্তার অধীনে সম্পন্ন হচ্ছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বন্দিদের ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিরাপত্তা যাচাই।
হামাসের প্রচারণা কৌশল নিয়ে সতর্কতা
হিব্রু ভাষার গণমাধ্যমগুলো জানায়, হামাস কোনো আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে না। তবে সংবাদমাধ্যম ও বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন—পূর্ববর্তী বন্দি বিনিময়ের মতো হামাস হয়তো এবারও ভিডিও ধারণ বা প্রচারণার উদ্দেশ্যে মুহূর্তগুলো ব্যবহার করতে পারে।
আইসিআরসি-র মানবিক ভূমিকা
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি স্পষ্ট করেছে যে তারা কেবল মানবিক উদ্দেশ্যে এমন প্রক্রিয়া পরিচালনা করে এবং অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে কোনো কার্যক্রমের বিস্তারিত প্রকাশ করে না। তাদের মতে, বন্দি ও তাদের পরিবারের মর্যাদা ও গোপনীয়তা রক্ষা করাই এই ধরনের অভিযানের মূল লক্ষ্য।
আগের বন্দি হস্তান্তরে ‘মঞ্চায়নের’ অভিযোগ
চলতি বছরের শুরুর দিকের কিছু বন্দি বিনিময়ে হামাসকে প্রকাশ্য ও সাজানো মঞ্চে হস্তান্তর করার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতার কারণেই সোমবারের প্রক্রিয়ায় সংবাদমাধ্যম ও কর্তৃপক্ষ বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে। সকালের শেষ ভাগ পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি যে খান ইউনিসে অনুরূপ কোনো ‘মঞ্চায়িত’ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে বা চলছে। সোমবার দুপুর নাগাদ ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনও নিশ্চিত করে যে হামাসের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হয়নি।
বন্দি বিনিময়ের শর্তাবলি ও প্রক্রিয়া
এই হস্তান্তর কার্যক্রমের পূর্বশর্ত হিসেবে গত সপ্তাহান্তে আইডিএফ তাদের অবস্থান পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন করেছে। একই সময়ে ইসরায়েলি সরকার বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পেতে যাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দিদের তালিকা চূড়ান্ত করে। কয়েক দিনের আলোচনার পর নাম ও সময়সূচি নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়।
সোমবারের বিনিময় হলো একাধিক ধাপে চলা বৃহত্তর প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। পরবর্তী দিনগুলোতে আরও বন্দি, এমনকি নিহতদের দেহাবশেষও, রেড ক্রসের তত্ত্বাবধানে বিনিময় হবে। প্রতিটি ধাপেই যাচাই ও নিরাপদ পরিবহনের প্রক্রিয়া থাকবে, যা গাজা থেকে সীমান্ত হয়ে ইসরায়েলে নির্ধারিত গ্রহণকেন্দ্রে পৌঁছানো পর্যন্ত চলবে।
দুই বছরের বন্দিত্বের অবসান
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সমন্বিত হামলায় এই বন্দিদের অপহরণ করা হয়েছিল। ২০২৫ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত তারা প্রায় ৭৩৭ দিন বন্দি অবস্থায় ছিলেন। সেই হামলাতেই দক্ষিণ ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় রকেট হামলা ও অনুপ্রবেশ ঘটে, যা গাজা যুদ্ধের সূচনা করে। বর্তমান যুদ্ধবিরতি ও বিনিময় প্রক্রিয়া সেই ঘটনার ধারাবাহিকতায় তৈরি চুক্তির অংশ।
ট্রাম্পের সফরের সঙ্গে সময় মিল
এই বন্দিমুক্তি প্রক্রিয়া এমন এক সময়ে ঘটছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল সফরে যাচ্ছেন। সোমবার বিকেলে তার তেল আবিবে পৌঁছানোর কথা এবং পরে তিনি কনেসেটে ভাষণ দেবেন।
খান ইউনিসে কোনো আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হয়নি—এমনটাই নিশ্চিত করেছে অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম। সবকিছুই সম্পন্ন হয়েছে রেড ক্রসের কঠোর তত্ত্বাবধানে ও মানবিক শর্তাবলি মেনে। তবে হামাসের পূর্ববর্তী আচরণ দেখে ইসরায়েল ও আন্তর্জাতিক মহল সতর্ক যে, বন্দি বিনিময়ের মুহূর্তগুলো ভবিষ্যতে প্রচারণার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
# গাজা_যুদ্ধ, হামাস, ইসরায়েল, বন্দিমুক্তি, রেড_ক্রস, ট্রাম্প_সফর, মধ্যপ্রাচ্য, খান_ইউনিস