০২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
ইন্ডিজেনাস পিপলস ডে: উৎসবের সাথে বাস্তব দাবি আমেরিকার এলএনজি রপ্তানি বাড়ানোর চাপ: দামের সমীকরণ কী বলছে ভারতে গুগলের ১৫ বিলিয়ন ডলারের এআই ডেটা সেন্টার মার্কিন–চীন নতুন বন্দর ফি: সরবরাহ শৃঙ্খলে চাপ ভাতা–ভাড়াভাতা সমতায় দাবিতে এমপিও শিক্ষকদের ‘সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষে ফিরতে হতে পারে বেশির ভাগ বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে সারাদেশে ২৭০ রেস্টুরেন্টে বিকাশে পেমেন্টে পিৎজায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ছাড় এবারে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দিল্লিতে তালেবান মন্ত্রীর নতুন সাংবাদিক সম্মেলন বান্দরবানে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্যকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় সিএমএইচে স্থানান্তর ফারিয়া ইয়াসমিন হচ্ছেন বাটা বাংলাদেশের প্রথম নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক

এক বছরে ৬৪ বার—ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২,১৩,৭১৯ টাকায়

বাংলাদেশের স্বর্ণবাজারে আবারও তৈরি হলো নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ভরি প্রতি ৪,৬১৮ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করেছে ২,১৩,৭১৯ টাকা। চলতি বছরেই এটি স্বর্ণের দামের ৬৪তম সমন্বয়—যার মধ্যে ৪৬ বার বেড়েছে এবং ১৮ বার কমেছে।

এক বছরের ব্যবধানে রেকর্ড ভাঙার পর রেকর্ড

বাংলাদেশের স্বর্ণবাজারে রেকর্ড গড়ার এই ধারাবাহিকতা যেন থামছেই না। বাজুস সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে—ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম ৪,৬১৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম কার্যকর হবে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর ২০২৫) থেকে। এতে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম দাঁড়ালো ২,১৩,৭১৯ টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এ নিয়ে চলতি বছরেই এটি স্বর্ণের দামের ৬৪তম সমন্বয়—এর মধ্যে ৪৬ বার দাম বেড়েছে এবং ১৮ বার কমানো হয়েছে। এ যেন এক অদৃশ্য দৌড়—যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের ঢেউ, স্থানীয় জুয়েলারি ব্যবসা এবং ভোক্তার উদ্বেগ মিলেমিশে নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে।

৮ ফেব্রুয়ারি শুরু তিন দিনের বাজুস ফেয়ার

আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে স্থানীয় স্বর্ণের দাম

বাজুস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবি (refined) স্বর্ণের দাম দ্রুত বাড়ছে। বিশ্ববাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারেও।

আন্তর্জাতিক স্বর্ণের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাঁচামাল (বিশুদ্ধ স্বর্ণ) আমদানির খরচও বেড়ে যায়। বাজুসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই বাড়তি চাপের ফলে তারা প্রতি ভরিতে দাম ৪,৬১৮ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।

নতুন দরের কাঠামো

বাজুসের ঘোষণামতে, নতুন দরে প্রতিটি ক্যারেট অনুযায়ী দাম দাঁড়িয়েছে নিম্নরূপঃ

ক্যারেট ভরি প্রতি নতুন দাম (টাকা) পূর্বের দাম বৃদ্ধি (টাকা)
২২ ক্যারেট ২,১৩,৭১৯ ২,০৯,১০১ ৪,৬১৮
২১ ক্যারেট ২,০৪,০০৩ ১,৯৯,৪৯৫ ৪,৫০৮
১৮ ক্যারেট ১,৭৪,৮৫৫ ১,৭০,৫৪০ ৪,৩১৫
ঐতিহ্যবাহী (traditional) ১,৪৫,৫২০ ১,৪১,৪৩০ ৪,০৯০

এর সঙ্গে ৫% ভ্যাট ও ৬% সর্বনিম্ন মেকিং চার্জ যুক্ত হবে। তবে গহনার নকশা ও মানের ওপর ভিত্তি করে মেকিং চার্জে তারতম্য থাকতে পারে।

এক বছরে কতবার দাম পরিবর্তন হয়েছে?

বাজুসের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২৫ সালেই এখন পর্যন্ত ৬৪ বার স্বর্ণের দাম পরিবর্তন করা হয়েছে—এর মধ্যে ৪৬ বার বৃদ্ধি ও ১৮ বার হ্রাস।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার দাম সমন্বয় হয়েছিল, যার মধ্যে ৩৫ বার বৃদ্ধি এবং ২৭ বার হ্রাস করা হয়।

২০২৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তারিখ নিচে তুলে ধরা হলো—

  • • ২ মার্চ ২০২৫: দাম বাড়ে ২,৬১৩ টাকা (২২ ক্যারেট = ১,৫৩,৪৭৫ টাকা)
  • • ২৮ মার্চ ২০২৫: আবারো বাড়ে, দাঁড়ায় ১,৫৭,৮৭২ টাকা
  • • জুন ২০২৫: ১০ দিনের ব্যবধানে দাম বাড়িয়ে ১,৭৪,৫২৮ টাকা
  • • সেপ্টেম্বর ২০২৫: নতুন রেকর্ড—১,৮৯,৩০৬ টাকা
  • • ১৪ অক্টোবর ২০২৫: আরেক নতুন রেকর্ড—২,১৩,৭১৯ টাকা

এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ভরিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৬২,০০০ টাকা, যা বাংলাদেশে স্বর্ণের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

স্বর্ণবাজারের পরিবর্তনের কারণ

আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতি

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মুদ্রাস্ফীতির চাপে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে ঝুঁকছেন। মার্কিন ডলারের দুর্বলতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনা স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে।

মুদ্রাস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়ন

বাংলাদেশি টাকার মান কমে যাওয়ায় ডলারভিত্তিক পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমদানি নির্ভর স্বর্ণের দামও বাড়ছে।

Gold Price Today: Yellow metal under pressure amid global growth crisis, weak economic data

তেজাবি স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি

কাঁচা (refined) স্বর্ণের আন্তর্জাতিক দাম বাড়ায় স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যয়ও বেড়েছে।

ভ্যাট ও শুল্কের চাপ

সরকারি ৫% ভ্যাট এবং অতিরিক্ত মেকিং চার্জ স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যে প্রভাব ফেলছে।

অবৈধ স্বর্ণ আমদানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি

অবৈধভাবে স্বর্ণ আনা এবং মনিটরিং দুর্বল হওয়ায় বাজারে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা ব্যাহত হচ্ছে।

প্রভাব: ক্রেতা থেকে ব্যবসায়ীসবাই বিপাকে

ক্রেতার জন্য স্বর্ণ এখন বিলাসবস্তু

স্বর্ণের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতা এখন আর আগের মতো গহনা কিনতে পারছেন না। বড় উৎসব—যেমন বিয়ে বা ঈদেও বিক্রয় অনেকটা কমে গেছে।

দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড | Dhaka Wave | বাংলা নিউজ পেপার

ব্যবসায়ীদের বিক্রয় কমছে

বাজুসের সদস্যরা জানিয়েছেন, দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রয়ও ২০-২৫ শতাংশ কমেছে। অনেকে পুরনো গহনা বিক্রি করে নতুন কিনছেন না—ফলে দোকানগুলোতে লেনদেন কমে গেছে।

সঞ্চয়কারীদের জন্য সুযোগ

যাঁরা আগেই স্বর্ণ কিনে রেখেছেন, তাঁরা এখন তা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। তবে ওজনকাটা ও কমিশন বাদ দিলে প্রকৃত লাভ কিছুটা কমে যায়।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে তুলনা

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩ গ্রাম) স্বর্ণের দাম প্রায় ২,৬৮৫ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০% বেশি।

অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম ২,১৩,৭১৯ টাকা, যা আন্তর্জাতিক মূল্যের চেয়েও কিছুটা বেশি—কারণ আমদানি শুল্ক ও টাকার অবমূল্যায়ন।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; স্থানীয় মূল্য নির্ধারণে কিছুটা অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হচ্ছে, যা ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

সামনের দিনগুলো: কী হতে পারে?

দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যদি ডলারের দাম আরও বাড়ে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে স্বর্ণের দাম আরও একধাপ উপরে উঠতে পারে।

তবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম স্থিতিশীল হলে ও আমদানি শুল্কে কিছু ছাড় দিলে স্থানীয় বাজারে সাময়িক স্বস্তি ফিরতে পারে।

কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপটে একটাই সত্য—
স্বর্ণ এখন আর শুধু অলঙ্কার নয়, এটি এক প্রকার আর্থিক আশ্রয়স্থল।

সোনার দেশে সোনার দাম

বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন পরিবর্তনের পথে, তেমনি স্বর্ণও এখন তার প্রতিফলন হয়ে উঠেছে—একদিকে নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতীক, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে দূরের স্বপ্ন।

বছরের পর বছর ধরে চলমান এই দামের উর্ধ্বগতি অবশেষে আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে,
সোনার দাম বাড়ছে শুধু বাজারে নয়—বাড়ছে মানুষের চিন্তায়ও।

 

#স্বর্ণ #বাজুস #অর্থনীতি #মূল্যবৃদ্ধি #বাংলাদেশ #স্বর্ণবাজার #বিনিয়োগ #অর্থনৈতিকসংকট

জনপ্রিয় সংবাদ

ইন্ডিজেনাস পিপলস ডে: উৎসবের সাথে বাস্তব দাবি

এক বছরে ৬৪ বার—ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম রেকর্ড ২,১৩,৭১৯ টাকায়

১১:২৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের স্বর্ণবাজারে আবারও তৈরি হলো নতুন রেকর্ড। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ভরি প্রতি ৪,৬১৮ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করেছে ২,১৩,৭১৯ টাকা। চলতি বছরেই এটি স্বর্ণের দামের ৬৪তম সমন্বয়—যার মধ্যে ৪৬ বার বেড়েছে এবং ১৮ বার কমেছে।

এক বছরের ব্যবধানে রেকর্ড ভাঙার পর রেকর্ড

বাংলাদেশের স্বর্ণবাজারে রেকর্ড গড়ার এই ধারাবাহিকতা যেন থামছেই না। বাজুস সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে—ভরি প্রতি স্বর্ণের দাম ৪,৬১৮ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম কার্যকর হবে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর ২০২৫) থেকে। এতে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম দাঁড়ালো ২,১৩,৭১৯ টাকা, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এ নিয়ে চলতি বছরেই এটি স্বর্ণের দামের ৬৪তম সমন্বয়—এর মধ্যে ৪৬ বার দাম বেড়েছে এবং ১৮ বার কমানো হয়েছে। এ যেন এক অদৃশ্য দৌড়—যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের ঢেউ, স্থানীয় জুয়েলারি ব্যবসা এবং ভোক্তার উদ্বেগ মিলেমিশে নতুন বাস্তবতা তৈরি করছে।

৮ ফেব্রুয়ারি শুরু তিন দিনের বাজুস ফেয়ার

আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে স্থানীয় স্বর্ণের দাম

বাজুস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবি (refined) স্বর্ণের দাম দ্রুত বাড়ছে। বিশ্ববাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছে। এই বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারেও।

আন্তর্জাতিক স্বর্ণের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাঁচামাল (বিশুদ্ধ স্বর্ণ) আমদানির খরচও বেড়ে যায়। বাজুসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই বাড়তি চাপের ফলে তারা প্রতি ভরিতে দাম ৪,৬১৮ টাকা পর্যন্ত বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।

নতুন দরের কাঠামো

বাজুসের ঘোষণামতে, নতুন দরে প্রতিটি ক্যারেট অনুযায়ী দাম দাঁড়িয়েছে নিম্নরূপঃ

ক্যারেট ভরি প্রতি নতুন দাম (টাকা) পূর্বের দাম বৃদ্ধি (টাকা)
২২ ক্যারেট ২,১৩,৭১৯ ২,০৯,১০১ ৪,৬১৮
২১ ক্যারেট ২,০৪,০০৩ ১,৯৯,৪৯৫ ৪,৫০৮
১৮ ক্যারেট ১,৭৪,৮৫৫ ১,৭০,৫৪০ ৪,৩১৫
ঐতিহ্যবাহী (traditional) ১,৪৫,৫২০ ১,৪১,৪৩০ ৪,০৯০

এর সঙ্গে ৫% ভ্যাট ও ৬% সর্বনিম্ন মেকিং চার্জ যুক্ত হবে। তবে গহনার নকশা ও মানের ওপর ভিত্তি করে মেকিং চার্জে তারতম্য থাকতে পারে।

এক বছরে কতবার দাম পরিবর্তন হয়েছে?

বাজুসের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২৫ সালেই এখন পর্যন্ত ৬৪ বার স্বর্ণের দাম পরিবর্তন করা হয়েছে—এর মধ্যে ৪৬ বার বৃদ্ধি ও ১৮ বার হ্রাস।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার দাম সমন্বয় হয়েছিল, যার মধ্যে ৩৫ বার বৃদ্ধি এবং ২৭ বার হ্রাস করা হয়।

২০২৫ সালের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তারিখ নিচে তুলে ধরা হলো—

  • • ২ মার্চ ২০২৫: দাম বাড়ে ২,৬১৩ টাকা (২২ ক্যারেট = ১,৫৩,৪৭৫ টাকা)
  • • ২৮ মার্চ ২০২৫: আবারো বাড়ে, দাঁড়ায় ১,৫৭,৮৭২ টাকা
  • • জুন ২০২৫: ১০ দিনের ব্যবধানে দাম বাড়িয়ে ১,৭৪,৫২৮ টাকা
  • • সেপ্টেম্বর ২০২৫: নতুন রেকর্ড—১,৮৯,৩০৬ টাকা
  • • ১৪ অক্টোবর ২০২৫: আরেক নতুন রেকর্ড—২,১৩,৭১৯ টাকা

এক বছরের ব্যবধানে প্রতি ভরিতে দাম বেড়েছে প্রায় ৬২,০০০ টাকা, যা বাংলাদেশে স্বর্ণের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

স্বর্ণবাজারের পরিবর্তনের কারণ

আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতি

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মুদ্রাস্ফীতির চাপে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণে ঝুঁকছেন। মার্কিন ডলারের দুর্বলতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তেজনা স্বর্ণের দাম বাড়াচ্ছে।

মুদ্রাস্ফীতি ও টাকার অবমূল্যায়ন

বাংলাদেশি টাকার মান কমে যাওয়ায় ডলারভিত্তিক পণ্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমদানি নির্ভর স্বর্ণের দামও বাড়ছে।

Gold Price Today: Yellow metal under pressure amid global growth crisis, weak economic data

তেজাবি স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি

কাঁচা (refined) স্বর্ণের আন্তর্জাতিক দাম বাড়ায় স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যয়ও বেড়েছে।

ভ্যাট ও শুল্কের চাপ

সরকারি ৫% ভ্যাট এবং অতিরিক্ত মেকিং চার্জ স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যে প্রভাব ফেলছে।

অবৈধ স্বর্ণ আমদানি ও বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি

অবৈধভাবে স্বর্ণ আনা এবং মনিটরিং দুর্বল হওয়ায় বাজারে স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা ব্যাহত হচ্ছে।

প্রভাব: ক্রেতা থেকে ব্যবসায়ীসবাই বিপাকে

ক্রেতার জন্য স্বর্ণ এখন বিলাসবস্তু

স্বর্ণের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ ক্রেতা এখন আর আগের মতো গহনা কিনতে পারছেন না। বড় উৎসব—যেমন বিয়ে বা ঈদেও বিক্রয় অনেকটা কমে গেছে।

দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড | Dhaka Wave | বাংলা নিউজ পেপার

ব্যবসায়ীদের বিক্রয় কমছে

বাজুসের সদস্যরা জানিয়েছেন, দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রয়ও ২০-২৫ শতাংশ কমেছে। অনেকে পুরনো গহনা বিক্রি করে নতুন কিনছেন না—ফলে দোকানগুলোতে লেনদেন কমে গেছে।

সঞ্চয়কারীদের জন্য সুযোগ

যাঁরা আগেই স্বর্ণ কিনে রেখেছেন, তাঁরা এখন তা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। তবে ওজনকাটা ও কমিশন বাদ দিলে প্রকৃত লাভ কিছুটা কমে যায়।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে তুলনা

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩ গ্রাম) স্বর্ণের দাম প্রায় ২,৬৮৫ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০% বেশি।

অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রতি ভরির (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম ২,১৩,৭১৯ টাকা, যা আন্তর্জাতিক মূল্যের চেয়েও কিছুটা বেশি—কারণ আমদানি শুল্ক ও টাকার অবমূল্যায়ন।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; স্থানীয় মূল্য নির্ধারণে কিছুটা অতিরিক্ত ব্যয় ধরা হচ্ছে, যা ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

সামনের দিনগুলো: কী হতে পারে?

দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যদি ডলারের দাম আরও বাড়ে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে স্বর্ণের দাম আরও একধাপ উপরে উঠতে পারে।

তবে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম স্থিতিশীল হলে ও আমদানি শুল্কে কিছু ছাড় দিলে স্থানীয় বাজারে সাময়িক স্বস্তি ফিরতে পারে।

কিন্তু এখনকার প্রেক্ষাপটে একটাই সত্য—
স্বর্ণ এখন আর শুধু অলঙ্কার নয়, এটি এক প্রকার আর্থিক আশ্রয়স্থল।

সোনার দেশে সোনার দাম

বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন পরিবর্তনের পথে, তেমনি স্বর্ণও এখন তার প্রতিফলন হয়ে উঠেছে—একদিকে নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতীক, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কাছে দূরের স্বপ্ন।

বছরের পর বছর ধরে চলমান এই দামের উর্ধ্বগতি অবশেষে আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে,
সোনার দাম বাড়ছে শুধু বাজারে নয়—বাড়ছে মানুষের চিন্তায়ও।

 

#স্বর্ণ #বাজুস #অর্থনীতি #মূল্যবৃদ্ধি #বাংলাদেশ #স্বর্ণবাজার #বিনিয়োগ #অর্থনৈতিকসংকট