মালয়েশিয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জা–সদৃশ অসুস্থতা (আইএলআই) দ্রুত বাড়ছে। এর মধ্যে পেনাং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বছরের শেষ দিকে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ, তাই মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া ও ফ্লু টিকার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
- • মালয়েশিয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জা–সদৃশ অসুস্থতা (আইএলআই) বৃদ্ধি পেয়েছে; পেনাং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলোর একটি।
- • ২০২৫ সালের মহামারি–তাত্ত্বিক সপ্তাহ ৪০ পর্যন্ত পেনাংয়ে ১৮টি ইনফ্লুয়েঞ্জা ক্লাস্টার শনাক্ত (২০২৪ সালের একই সময়ে ১৯টি)।
- • আইএলআই রোগীর ক্লিনিক–ভিজিট প্রায় ৯.৫% থেকে ১০.৫%—স্থিতিশীল ধারা; ল্যাব–পজিটিভ ২৬.৭% থেকে ২৮.৯% (প্রধানত ইনফ্লুয়েঞ্জা এ)।
- • গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পজিটিভ হার কম (তখন ৩৫.৬%–৫১.১%); শ্বাসতন্ত্র–কেন্দ্রিক ক্লাস্টার ৫২.৪% হ্রাস পেয়েছে।
- • বছরের শেষ দিকে রোগী বাড়ার প্রবণতা থাকায় কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে; মাস্ক, হাত ধোয়া ও ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে।
- • ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব এবং অন্তত একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে ফ্লু টিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি: কোন্ রাজ্যে কত ক্লাস্টার
সেলাঙ্গরে সর্বোচ্চ ৪৩টি ক্লাস্টার শনাক্ত হয়েছে। এরপর কুয়ালালামপুর ও পুত্রাজায়ায় ১৫টি, পেনাংয়ে ১০টি, জোহরে ৯টি এবং কেদাহে ৫টি ক্লাস্টার পাওয়া গেছে। পেনাং রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আইএলআই কেসের চাপ এখানে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা
পেনাং রাজ্যের স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল গুই জানিয়েছেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা কোভিড–১৯-এর মতো তীব্র না হলেও নিবিড় পর্যবেক্ষণ জরুরি। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন—অসুস্থ বোধ করলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা, ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা, কাশি–হাঁচির সময় মুখ–নাক ঢেকে রাখা এবং অসুস্থ অবস্থায় ভিড় এড়িয়ে চলা।
তিনি আরও বলেন, পেনাংয়ে ২০২৫ সালে সামান্য পতন থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বদা সতর্কতা বজায় রাখা হচ্ছে।
সংক্রমণ–প্রবণতা ও পরীক্ষার ফল
আগস্টের শুরু থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত নজরদারিতে দেখা যায়, আইএলআই কেসে ক্লিনিক–ভিজিট প্রায় ৯.৫%–১০.৫%–এর মধ্যে স্থির ছিল। একই সময়ে ল্যাব পরীক্ষায় পজিটিভের হার ২৬.৭%–২৮.৯%, যেখানে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ প্রাধান্যশীল। গত বছরের একই সময়ে এই হার ছিল ৩৫.৬%–৫১.১%। সামগ্রিকভাবে ২০২৪ সালের তুলনায় শ্বাসতন্ত্র–সম্পর্কিত ক্লাস্টার ৫২.৪% কমেছে।
বছরের শেষ দিকে বাড়তে পারে সংক্রমণ
সাধারণত বছরের শেষ ভাগে কেস বাড়ে। তাই ধারাবাহিক সতর্কতা বজায় রাখতে কর্তৃপক্ষ হাত ধোয়ার অভ্যাস, সাবান বা জীবাণুনাশক ব্যবহার, কাশি–হাঁচির শিষ্টাচার ও ঘরমুখো ভিড় এলাকায় মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে।
ড্যানিয়েল গুই বলেন, এই ছোট ছোট অভ্যাস আপনাকে ও আপনার চারপাশের মানুষকে সুরক্ষা দেয়।
টিকা–সুবিধা: কারা অগ্রাধিকার পাবেন
৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব এবং অন্তত একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ (যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা ফুসফুস–সংক্রান্ত সমস্যা) থাকলে সরকারি স্বাস্থ্যসুবিধা কেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে ফ্লু টিকা দেওয়া হচ্ছে। উচ্চঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য টিকাদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ইনফ্লুয়েঞ্জা এ: কীভাবে ছড়ায়
বর্তমানে পেনাংয়ে প্রাধান্যশীল ইনফ্লুয়েঞ্জা এ দ্রুত রূপান্তর–প্রবণ এবং মৌসুমি প্রাদুর্ভাব ঘটায়। সংক্রমিত ব্যক্তি কাশি, হাঁচি বা কথা বলার সময় যে ফোঁটা ছড়ায়, তার মাধ্যমেই এ ভাইরাস মূলত ছড়ায়। পাশাপাশি দূষিত পৃষ্ঠে কয়েক ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে; সেখান থেকেও সংক্রমণ হতে পারে।
উপসর্গ ও জটিলতা
সাধারণত সংস্পর্শের এক থেকে চার দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়—জ্বর, কাঁপুনি, গলা ব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা ও ক্লান্তি। অধিকাংশ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক এক সপ্তাহে সেরে ওঠেন, তবে বয়স্ক, শিশু ও রোগপ্রতিরোধক্ষমতা–দুর্বল ব্যক্তিদের নিউমোনিয়া–জাতীয় জটিলতা হতে পারে।
করণীয় (সহজ নির্দেশিকা)
- • অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- • ভিড় বা ঘরমুখো স্থানে মাস্ক ব্যবহার করুন।
- • নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
- • কাশি–হাঁচির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ–নাক ঢেকে রাখুন।
- • জ্বর–সর্দি–কাশিতে ভুগলে ভিড় এড়িয়ে চলুন এবং বিশ্রাম নিন।
- • ৬০ বছর বা দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকলে সুযোগ থাকতেই ফ্লু টিকা নিন।
#মালয়েশিয়া #পেনাং #ইনফ্লুয়েঞ্জা #ফ্লু_উদ্বেগ #টিকাদান #স্বাস্থ্যসতর্কতা