ভারতের অর্থনীতিতে এক যুগান্তকারী সাফল্য এসেছে—সেপ্টেম্বর শেষে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে দেশটির মুদ্রাস্ফীতি নেমে এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে, মাত্র ১.৭ শতাংশে। এই হার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রারও নিচে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এক বিরল অর্থনৈতিক অর্জন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রেকর্ড নিম্নে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি
সেপ্টেম্বর শেষে শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি নেমে এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে—মাত্র ১.৭ শতাংশে। এই প্রথমবারের মতো দেশটির মুদ্রাস্ফীতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর নির্ধারিত ২ থেকে ৬ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার নিচে নেমে এসেছে।
এই সাফল্যের মূল কারণ সেপ্টেম্বর মাসের ১.৫ শতাংশ মাসিক মুদ্রাস্ফীতি হার, যা অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ব্লুমবার্গের এক জরিপেও একই ধরনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
খাদ্যদ্রব্যের মূল্যহ্রাসই প্রধান কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, এই ব্যতিক্রমী নিম্ন মুদ্রাস্ফীতি জিএসটি সংস্কার বা করছাড়ের কারণে নয়, বরং খাদ্যদ্রব্যের দামের ক্রমাগত পতনের ফল। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের (এনএসও) তথ্য অনুযায়ী, টানা চার মাস ধরে খাদ্যদ্রব্যের দাম নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দামের পতন ঘটেছে শাকসবজি, ডাল এবং মসলা খাতে—যথাক্রমে ২১.৪%, ১৫.৩% এবং ৩.১%। তবে তেল ও চর্বিজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে বিপরীত প্রবণতা দেখা গেছে, যেখানে দামের বৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮.৩%।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঐতিহাসিক পতন
ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI) সেপ্টেম্বর মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১.৫%, যা ২০১৭ সালের জুনের পর সর্বনিম্ন। আগস্টের তুলনায় এই হার আরও ৫৩ বেসিস পয়েন্ট কম। এর ফলে সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকের গড় মুদ্রাস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১.৭%—যা ২০১২ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া বর্তমান ধারাবাহিক হিসাবের মধ্যে সবচেয়ে কম।
এটি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রকৃত লক্ষ্য ৪% থেকেও অনেক নিচে, এবং টানা তিনটি ত্রৈমাসিকে মুদ্রাস্ফীতি এই লক্ষ্যের নিচে অবস্থান করছে।
আগামী মাসগুলোতে কী হতে পারে
মুদ্রানীতির কমিটি (MPC) ইতিমধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছে যে ডিসেম্বর ২০২৫ ও মার্চ ২০২৬ শেষ হওয়া ত্রৈমাসিকগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি যথাক্রমে ১.৮% ও ৪% হতে পারে। এর মানে, দাম কিছুটা স্থিতিশীল থেকে আবার ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, চলতি অর্থবছরে (২০২৫–২৬) মুদ্রাস্ফীতি আরবিআই-এর ২.৬% লক্ষ্যমাত্রারও নিচে থাকতে পারে। এতে করে ডিসেম্বর মাসে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনাও জোরালো হচ্ছে।
মূল মুদ্রাস্ফীতির চিত্র
খাদ্য ও জ্বালানি বাদ দিয়ে হিসাব করা ‘কোর ইনফ্লেশন’ আগস্টের ৪.১% থেকে সেপ্টেম্বরে সামান্য বেড়ে ৪.৪% হয়েছে। পোশাক ও জুতার খাতে দাম স্থিতিশীল থাকলেও আবাসন ও পরিষেবা খাতে কিছুটা বৃদ্ধি দেখা গেছে। বিপরীতে জ্বালানি ও আলোর খাতে দাম কমেছে।
বার্কলেজ ব্যাংকের প্রধান ভারতীয় অর্থনীতিবিদ আস্তা গুড়ওয়ানি এক নোটে উল্লেখ করেন, “খাদ্যের দাম কমার কারণে সেপ্টেম্বরে সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি আরও কমে ১.৫৪% হয়েছে। অক্টোবরে এই হার আরও নেমে ০.৫% হতে পারে, যা ডিসেম্বরে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করবে।”
অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
মুদ্রাস্ফীতি কমে আসায় গ্রাহক ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বিনিয়োগে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একইসঙ্গে, এই নিম্ন হার সরকারের জন্যও এক স্বস্তির বার্তা—বিনিয়োগ, কর সংস্কার ও সামাজিক ব্যয় পরিকল্পনায় আরও নমনীয়তা আনতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এই প্রবণতা স্থায়ী করতে খাদ্য সরবরাহ ও কৃষিখাতে স্থিতিশীল নীতি বজায় রাখা জরুরি, নইলে আগামী মাসগুলোতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি আবারও মুদ্রাস্ফীতি বাড়াতে পারে।
#ভারত_অর্থনীতি, #মুদ্রাস্ফীতি,# রিজার্ভ_ব্যাঙ্ক, #খাদ্যদ্রব্য_দাম, #আরবিআই_নীতি, #অর্থনৈতিক_বিশ্লেষণ, #সারাক্ষণ_রিপোর্ট