আইএমএফের সদ্য প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক অনুযায়ী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬.৬%—বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ। একই সময়ে বিশ্বব্যাংক ৬.৫% এবং রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ৬.৮% প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে—যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা, অবকাঠামো ও ডিজিটাল খাতে জোরালো গতি থাকার প্রমাণ।
ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক বড় অর্থনীতির মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতির প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) অক্টোবর ২০২৫-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক’-এ বলা হয়েছে, ২০২৫–২৬ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি ৬.৬% হারে বাড়বে—পূর্বাভাসটি ০.২০ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি করা হয়েছে। আইএমএফের ব্যাখ্যায়, শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয়, অবকাঠামোগত বিনিয়োগ ও প্রথম প্রান্তিকের উচ্চ প্রবৃদ্ধি বহিরাগত চাপের প্রভাব অনেকটাই কাটিয়ে দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া আপডেট (অক্টোবর ২০২৫) ভারতের ২০২৫–২৬ সালের প্রবৃদ্ধি ৬.৫% ধরেছে। তাদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রাজস্বভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়ন, উৎপাদনশীল খাতের সম্প্রসারণ এবং সেবা খাতের শক্তি ভারতের মধ্যমেয়াদি প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করতে সহায়ক হবে, যদিও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা থাকায় ২০২৬ সালের দিকে কিছু সামঞ্জস্যের প্রয়োজন হতে পারে।
দেশীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৮% হিসেবে প্রক্ষেপণ করেছে। আরবিআই মনে করে, স্থিতিশীল মুদ্রানীতি কাঠামো, উন্নত ক্রেডিট প্রবাহ, কৃষিখাতের অনুকূলতা, সরকারি মূলধনি ব্যয় এবং বেসরকারি বিনিয়োগের গতি—সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে উচ্চ পর্যায়ে ধরে রাখবে।
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট:
আইএমএফ বলছে, বিশ্ব অর্থনীতি ২০২৫ সালে গড়ে প্রায় ৩.২% হারে বাড়তে পারে। এই মন্থর বৈশ্বিক গতির প্রেক্ষাপটে ভারতের ৬.৬% প্রবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে উঁচু ট্র্যাজেক্টরি নির্দেশ করে এবং বড় অর্থনীতির মধ্যে শীর্ষ অবস্থান নিশ্চিত করে।
কী চালাচ্ছে ভারতের প্রবৃদ্ধি:
- অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সেবা খাতের শক্তি—রিটেইল, ফিনটেক, তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ও প্ল্যাটফর্ম অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখছে।
- অবকাঠামো বিনিয়োগ—সড়ক, রেল, বন্দর, বিদ্যুৎ ও লজিস্টিক্সে ধারাবাহিক সরকারি–বেসরকারি বিনিয়োগ উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছে।
- নীতি–সহায়তা—স্থিতিশীল মুদ্রানীতি ও কাঠামোগত সংস্কার বিনিয়োগ পরিবেশকে অনুকূল করে তুলেছে।
ঝুঁকি ও নজরদারির বিষয়:
আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক উভয়েই ইঙ্গিত দিয়েছে, বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা, পণ্যমূল্যের ওঠানামা এবং বহিরাগত চাহিদা দুর্বল হলে রপ্তানি আয়ে চাপ আসতে পারে। তবু তাদের মূল্যায়নে দেখা যায়, ভারতের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বিনিয়োগধারা এসব বাহ্যিক ধাক্কা অনেকটাই শোষণ করতে সক্ষম।
আইএমএফের ৬.৬% (২০২৫–২৬), বিশ্বব্যাংকের ৬.৫% এবং রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ৬.৮%—তিনটি বড় উৎসের পূর্বাভাসই বলছে, বৈশ্বিক মন্থরতার মাঝেও ভারত বড় অর্থনীতির মধ্যে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চলেছে।
#ভারত #জিডিপি #আইএমএফ #বিশ্বব্যাংক #রিজার্ভ_ব্যাংক_অব_ইন্ডিয়া #অর্থনীতি #প্রবৃদ্ধি #অবকাঠামো #ডিজিটালঅর্থনীতি #দক্ষিণএশিয়া