০৫:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ধারা, সুদের হার কমার আশা জোরালো স্যাম মেন্ডেসের চার ছবির বিটলস সাগা—ব্রায়ান এপস্টাইনে জেমস নর্টন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য উত্তেজনা চীনকে ঐক্যবদ্ধ ও প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক পথে এগোতে উৎসাহ দিচ্ছে ওকিনাওয়ার জলমহিষের গাড়িতে আসছে ট্যাপ-টু-পে ক্যালিফোর্নিয়ায় সমুদ্রতেল উত্তোলন নিয়ে ফের লড়াই—ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন, রাজ্যের বাধা ২০২৬ সালে লন্ডনে ওয়েমোর রোবোট্যাক্সি আসছে এক্সপোর পর এখন বুকিং—জাপানের স্থানীয় সরকারগুলোর পর্যটন দৌড় চীনে বিনিয়োগ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন টিম কুক—আইফোন এয়ারে eSIM অনুমোদন ২০২৬ থেকে নেটফ্লিক্সে দেখা যাবে স্পটিফাইয়ের ভিডিও পডকাস্ট ভারতে কলসেন্টার কর্মীদের জায়গা নিচ্ছে এআই চ্যাটবট

ইন্দোনেশিয়ার শিল্পবাজারে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ছায়া

আর্ট জাকার্তার উত্থান ও নতুন আয়োজন

গত কয়েক বছরে বার্ষিক আয়োজন থেকে ‘আর্ট জাকার্তা’ এখন দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে, এবং ২০২৬ সাল থেকে এটি বছরে তিনবার অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ পরিবর্তন ইন্দোনেশীয়দের মধ্যে শিল্পকর্ম সংগ্রহের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রতিফলন।

এ বছর অক্টোবরের শুরুর দিকে আয়োজিত প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের জন্য ছিল নানা আকর্ষণ—আফান্দির মতো পুরনো শিল্পগুরুদের চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে তরুণ শিল্পীদের নতুন সৃষ্টিকর্ম পর্যন্ত। চিৎকার করে দর্শকদের চমকে দেন, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের গ্যালারিগুলো অংশ নেয়। তরুণ শিল্পী ভিক্টোরিয়া কোসাসি নিজের পারফরমেন্সে পানিভর্তি বাক্সে মাথা ডুবিয়ে সবাইকে অবাক করেন।

এ আয়োজনের অন্যতম দিক ছিল বড় বড় পৃষ্ঠপোষকদের অংশগ্রহণ—সুইস প্রাইভেট ব্যাংক ‘জুলিয়াস বেয়ার’, স্বর্ণবিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রেজারি’, শেয়ারবাজার অ্যাপ ‘বিবিত’ এবং দেশটির বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ‘ব্যাংক সেন্ট্রাল এশিয়া’।


শিল্প ও অর্থনীতি: একে অপরের পরিপূরক

শিল্প ও অর্থ বরাবরই পাশাপাশি চলে। শিল্পকর্ম সামাজিক মর্যাদা, সাংস্কৃতিক প্রতীক বা বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগ—সবকিছুরই প্রতিফলন হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্দোনেশিয়ার শিল্পবাজার দ্রুত প্রসারিত হয়েছে, তবে অর্থনৈতিক উদ্বেগ এখন এই বিকাশে ছায়া ফেলছে।

স্থানীয় বিশিষ্ট সংগ্রাহক নাতাশা সিদ্ধার্থ বলেন, “দেশের অর্থনীতি ও শিল্পবাজার পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। বিশ্ব অর্থনীতির ওঠানামা শিল্পে সরাসরি প্রভাব ফেলে।”

আর্ট জাকার্তার পরিচালক টম ট্যান্ডিওর মতে, বিদেশে শিক্ষালাভ বা ব্যবসায় সফল হয়ে দেশে ফেরা তরুণ প্রজন্ম এখন শিল্পে আগ্রহী হচ্ছে। “মানুষ এখন ক্রমে সংস্কৃতি ও শিল্পের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কিত করতে চাইছে,” তিনি বলেন।


নতুন সংগ্রাহক গড়ে তোলার উদ্যোগ

শিল্পগ্যালারি ও সংগঠকেরা নতুন সংগ্রাহক তৈরিতে কাজ করছে। যেমন, ‘ওয়ান পিস ক্লাব’ সদস্যদের নিয়মিত প্রদর্শনীতে নিয়ে যায় ও তাদের জীবিত শিল্পীদের কাছ থেকে অন্তত একটি কাজ কেনার উৎসাহ দেয়। সহ-প্রতিষ্ঠাতা, উইন্ডা মালিকা সিরেগার বলেন, “আমরা পুরো ইকোসিস্টেমকে সহায়তা করি।”

অন্যদিকে, কিছু কোম্পানিও শিল্পকে তাদের ব্র্যান্ড প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘বিবিত’ তাদের স্টলে শিল্পী আগুস সুয়াজের স্বপ্রতিকৃতি সিরিজ প্রদর্শন করেছে, যা সামাজিক সমালোচনার প্রতিফলন। বিবিতের মুখপাত্র উইলিয়াম এনডুত জানান, “আমরা এই কাজগুলোর নতুন অর্থ দিচ্ছি—‘পোর্ট্রেট অব পসিবিলিটিজ’। আমরা বলতে চাই, ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকার আছে উন্নত আর্থিক ভবিষ্যৎ গড়ার।”


ক্রেতাদের প্রেরণা ও প্রবণতা

গ্যালারি পরিচালক রিও পাশারিবু বলেন, “নতুন সংগ্রাহকেরা শিল্পের গল্পে টান পায়, শিল্পকর্মের চেহারায় নয়—তারা এমন গল্প পছন্দ করে যেখানে সংগ্রাম থেকে সাফল্যে পৌঁছানো যায়।”

গ্যালারি ৭৫-এর কিউরেটর দ্বি রহায়ু জানান, অনেক ক্রেতা ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা রুচি থেকে শিল্প কেনেন। “যেমন ফেং শুই মানা লোকেরা ফসল বা নদীর চিত্র ভালোবাসে, কারণ তা প্রাচুর্যের প্রতীক। কেউ ফুলের ছবি কেনেন আনন্দের জন্য, আইনজীবীরা ঘোড়ার ছবি কেনে শক্তির প্রতীক হিসেবে।”


আর্ট জাকার্তার সম্প্রসারণ

২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা ‘আর্ট জাকার্তা’ এখন বছরে দুইবার অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে ‘আর্ট জাকার্তা গার্ডেন’ যুক্ত হওয়ার পর ২০২৬ সালে ‘আর্ট জাকার্তা পেপার’ নামে তৃতীয় প্রদর্শনী শুরু হবে।

প্রদর্শনীর ব্যবসায়িক মডেল ‘আর্টজগ’-এর থেকে ভিন্ন। আর্টজগ সরাসরি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে, কিন্তু আর্ট জাকার্তা কাজ করে গ্যালারির সঙ্গে, যেখানে বাণিজ্যিক ভাবনা বেশি। এ বছর এতে অংশ নেয় ৭৫টি গ্যালারি এবং দর্শকসংখ্যা ছিল প্রায় ৩৮ হাজার। নবীন শিল্পীদের কাজের দাম যেখানে ১২ মিলিয়ন রুপিয়াহ (৭২০ ডলার), যেখানে আফান্দির চিত্রকর্ম নিলামে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়।


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিল্পকেন্দ্র হিসেবে জাকার্তা

স্মার্ট অবস্থান ও কৌশলের কারণে আর্ট জাকার্তা এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিদেশি গ্যালারিগুলোর কাছে এটি আকর্ষণীয়, কারণ এখানে ক্রেতা, জনসংখ্যা ও সম্পদশালী মানুষ বেশি।

ফিলিপাইনের ‘দ্য ড্রইং রুম’-এর নিকোল ডেকাপিয়া বলেন, “আর্ট জাকার্তা বেশি আঞ্চলিক মনোযোগী, তাই এখানে কাজ করতে ভালো লাগে।”

অঞ্চলজুড়ে শিল্পবাজার এখনো কিছুটা ভাঙা—প্রত্যেক দেশের ক্রেতারা নিজস্ব শিল্পকর্মকেই অগ্রাধিকার দেন, তবু আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ বাড়ছে। সাদেবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে নতুন দরদাতার সংখ্যা ৬০% বেড়েছে, এবং ২০২৪ সালে তা আরও ২০% বৃদ্ধি পায়।


অর্থনৈতিক উদ্বেগে গতি মন্থর

২০২৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার শিল্পবাজারে শ্লথতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্যালারিগুলো দর্শক ধরে রাখলেও বিক্রি কমেছে। অনেকেই প্রদর্শনীর পর বিক্রির ওপর নির্ভর করছে।

পাশারিবুর মতে, “সংগ্রাহকেরা এখন অর্থ ধরে রাখছেন, কারণ সবার ধারণা—একটি আর্থিক সংকট আসছে।”

একজন সংগ্রাহক বলেন, “অফিসের জন্য কয়েকটি আধুনিক শিল্পকর্ম কিনেছি, তবে এ বছর ব্যয় কম রেখেছি—অর্থনীতি যেমন চলছে, তাই সবাই সাশ্রয়ী।”

এছাড়া, দুর্নীতিবিরোধী মামলার প্রভাবও পড়েছে, কারণ এ বছর ধরা পড়া অনেক অভিযুক্তই ছিলেন শিল্পসংগ্রাহক।


ক্ষুদ্র বাজার, অনিশ্চিত মূল্য

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের শিল্প বিক্রি কমলেও, মোট বিক্রির সংখ্যা বেড়েছে। তবে ইন্দোনেশিয়ার বাজার এখনো দুর্বল ও সীমিত। শিল্প এখানে বিনিয়োগের চেয়ে বিলাসিতার বিষয়।

জাকার্তার ‘সিদ্ধার্থ অকশনিয়ার’-এর প্রধান সায়ান্দা কুনতো বলেন, “দেশীয় বাজার অগভীর হওয়ায় শিল্পকর্মের দাম অনুমান করা কঠিন। দাম স্থিতিশীল না হলে সংগ্রাহক বিভ্রান্ত হন।”

তিনি জানান, “আমরা সাধারণত হংকংয়ের নিলামমূল্যের তুলনায় ২০-৩০% কম দামে নির্ধারণ করি।”


কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা

ইন্দোনেশিয়ায় করপোরেট সংগ্রহ বা শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার ঐতিহ্য নেই, ট্যান্ডিওর ভাষায়, “জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সংগ্রহ এখানে দেখা যায় না।”

৩২ মিলিয়ন মানুষের শহর জাকার্তায় রয়েছে মাত্র দুটি আর্ট মিউজিয়াম—‘ন্যাশনাল গ্যালারি অব ইন্দোনেশিয়া’ ও ‘মিউজিয়াম ম্যাকান’। এক সংগ্রাহক বলেন, “সিঙ্গাপুর বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দাতাদের জন্য কর ছাড়ের সুবিধা এখানে নেই।”


পরিবর্তনের পথে শিল্পবাজার

চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক গ্যালারি এখন দাম কমাচ্ছে ও নতুন ক্রেতা খুঁজছে, তিনি বলেন, “আগে তিন বাই দুই মিটার ক্যানভাস ছিল ঘরের কেন্দ্রবিন্দু, এখন মানুষ অ্যাপার্টমেন্টে উঠছে, তাই ছোট মাপের কাজ বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে।”


#ইন্দোনেশিয়া,# আর্ট জাকার্তা, #এশিয়ান আর্ট মার্কেট,# অর্থনৈতিক সংকট, #দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, #শিল্পসংগ্রাহক, #সংস্কৃতি ও অর্থনীতি

জনপ্রিয় সংবাদ

বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ধারা, সুদের হার কমার আশা জোরালো

ইন্দোনেশিয়ার শিল্পবাজারে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ছায়া

০২:৩৩:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

আর্ট জাকার্তার উত্থান ও নতুন আয়োজন

গত কয়েক বছরে বার্ষিক আয়োজন থেকে ‘আর্ট জাকার্তা’ এখন দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীতে পরিণত হয়েছে, এবং ২০২৬ সাল থেকে এটি বছরে তিনবার অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে। এ পরিবর্তন ইন্দোনেশীয়দের মধ্যে শিল্পকর্ম সংগ্রহের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের প্রতিফলন।

এ বছর অক্টোবরের শুরুর দিকে আয়োজিত প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীদের জন্য ছিল নানা আকর্ষণ—আফান্দির মতো পুরনো শিল্পগুরুদের চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে তরুণ শিল্পীদের নতুন সৃষ্টিকর্ম পর্যন্ত। চিৎকার করে দর্শকদের চমকে দেন, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের গ্যালারিগুলো অংশ নেয়। তরুণ শিল্পী ভিক্টোরিয়া কোসাসি নিজের পারফরমেন্সে পানিভর্তি বাক্সে মাথা ডুবিয়ে সবাইকে অবাক করেন।

এ আয়োজনের অন্যতম দিক ছিল বড় বড় পৃষ্ঠপোষকদের অংশগ্রহণ—সুইস প্রাইভেট ব্যাংক ‘জুলিয়াস বেয়ার’, স্বর্ণবিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রেজারি’, শেয়ারবাজার অ্যাপ ‘বিবিত’ এবং দেশটির বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক ‘ব্যাংক সেন্ট্রাল এশিয়া’।


শিল্প ও অর্থনীতি: একে অপরের পরিপূরক

শিল্প ও অর্থ বরাবরই পাশাপাশি চলে। শিল্পকর্ম সামাজিক মর্যাদা, সাংস্কৃতিক প্রতীক বা বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগ—সবকিছুরই প্রতিফলন হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইন্দোনেশিয়ার শিল্পবাজার দ্রুত প্রসারিত হয়েছে, তবে অর্থনৈতিক উদ্বেগ এখন এই বিকাশে ছায়া ফেলছে।

স্থানীয় বিশিষ্ট সংগ্রাহক নাতাশা সিদ্ধার্থ বলেন, “দেশের অর্থনীতি ও শিল্পবাজার পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। বিশ্ব অর্থনীতির ওঠানামা শিল্পে সরাসরি প্রভাব ফেলে।”

আর্ট জাকার্তার পরিচালক টম ট্যান্ডিওর মতে, বিদেশে শিক্ষালাভ বা ব্যবসায় সফল হয়ে দেশে ফেরা তরুণ প্রজন্ম এখন শিল্পে আগ্রহী হচ্ছে। “মানুষ এখন ক্রমে সংস্কৃতি ও শিল্পের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্কিত করতে চাইছে,” তিনি বলেন।


নতুন সংগ্রাহক গড়ে তোলার উদ্যোগ

শিল্পগ্যালারি ও সংগঠকেরা নতুন সংগ্রাহক তৈরিতে কাজ করছে। যেমন, ‘ওয়ান পিস ক্লাব’ সদস্যদের নিয়মিত প্রদর্শনীতে নিয়ে যায় ও তাদের জীবিত শিল্পীদের কাছ থেকে অন্তত একটি কাজ কেনার উৎসাহ দেয়। সহ-প্রতিষ্ঠাতা, উইন্ডা মালিকা সিরেগার বলেন, “আমরা পুরো ইকোসিস্টেমকে সহায়তা করি।”

অন্যদিকে, কিছু কোম্পানিও শিল্পকে তাদের ব্র্যান্ড প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘বিবিত’ তাদের স্টলে শিল্পী আগুস সুয়াজের স্বপ্রতিকৃতি সিরিজ প্রদর্শন করেছে, যা সামাজিক সমালোচনার প্রতিফলন। বিবিতের মুখপাত্র উইলিয়াম এনডুত জানান, “আমরা এই কাজগুলোর নতুন অর্থ দিচ্ছি—‘পোর্ট্রেট অব পসিবিলিটিজ’। আমরা বলতে চাই, ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকার আছে উন্নত আর্থিক ভবিষ্যৎ গড়ার।”


ক্রেতাদের প্রেরণা ও প্রবণতা

গ্যালারি পরিচালক রিও পাশারিবু বলেন, “নতুন সংগ্রাহকেরা শিল্পের গল্পে টান পায়, শিল্পকর্মের চেহারায় নয়—তারা এমন গল্প পছন্দ করে যেখানে সংগ্রাম থেকে সাফল্যে পৌঁছানো যায়।”

গ্যালারি ৭৫-এর কিউরেটর দ্বি রহায়ু জানান, অনেক ক্রেতা ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা রুচি থেকে শিল্প কেনেন। “যেমন ফেং শুই মানা লোকেরা ফসল বা নদীর চিত্র ভালোবাসে, কারণ তা প্রাচুর্যের প্রতীক। কেউ ফুলের ছবি কেনেন আনন্দের জন্য, আইনজীবীরা ঘোড়ার ছবি কেনে শক্তির প্রতীক হিসেবে।”


আর্ট জাকার্তার সম্প্রসারণ

২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা ‘আর্ট জাকার্তা’ এখন বছরে দুইবার অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে ‘আর্ট জাকার্তা গার্ডেন’ যুক্ত হওয়ার পর ২০২৬ সালে ‘আর্ট জাকার্তা পেপার’ নামে তৃতীয় প্রদর্শনী শুরু হবে।

প্রদর্শনীর ব্যবসায়িক মডেল ‘আর্টজগ’-এর থেকে ভিন্ন। আর্টজগ সরাসরি শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে, কিন্তু আর্ট জাকার্তা কাজ করে গ্যালারির সঙ্গে, যেখানে বাণিজ্যিক ভাবনা বেশি। এ বছর এতে অংশ নেয় ৭৫টি গ্যালারি এবং দর্শকসংখ্যা ছিল প্রায় ৩৮ হাজার। নবীন শিল্পীদের কাজের দাম যেখানে ১২ মিলিয়ন রুপিয়াহ (৭২০ ডলার), যেখানে আফান্দির চিত্রকর্ম নিলামে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়।


দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিল্পকেন্দ্র হিসেবে জাকার্তা

স্মার্ট অবস্থান ও কৌশলের কারণে আর্ট জাকার্তা এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিদেশি গ্যালারিগুলোর কাছে এটি আকর্ষণীয়, কারণ এখানে ক্রেতা, জনসংখ্যা ও সম্পদশালী মানুষ বেশি।

ফিলিপাইনের ‘দ্য ড্রইং রুম’-এর নিকোল ডেকাপিয়া বলেন, “আর্ট জাকার্তা বেশি আঞ্চলিক মনোযোগী, তাই এখানে কাজ করতে ভালো লাগে।”

অঞ্চলজুড়ে শিল্পবাজার এখনো কিছুটা ভাঙা—প্রত্যেক দেশের ক্রেতারা নিজস্ব শিল্পকর্মকেই অগ্রাধিকার দেন, তবু আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ বাড়ছে। সাদেবির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে নতুন দরদাতার সংখ্যা ৬০% বেড়েছে, এবং ২০২৪ সালে তা আরও ২০% বৃদ্ধি পায়।


অর্থনৈতিক উদ্বেগে গতি মন্থর

২০২৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার শিল্পবাজারে শ্লথতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গ্যালারিগুলো দর্শক ধরে রাখলেও বিক্রি কমেছে। অনেকেই প্রদর্শনীর পর বিক্রির ওপর নির্ভর করছে।

পাশারিবুর মতে, “সংগ্রাহকেরা এখন অর্থ ধরে রাখছেন, কারণ সবার ধারণা—একটি আর্থিক সংকট আসছে।”

একজন সংগ্রাহক বলেন, “অফিসের জন্য কয়েকটি আধুনিক শিল্পকর্ম কিনেছি, তবে এ বছর ব্যয় কম রেখেছি—অর্থনীতি যেমন চলছে, তাই সবাই সাশ্রয়ী।”

এছাড়া, দুর্নীতিবিরোধী মামলার প্রভাবও পড়েছে, কারণ এ বছর ধরা পড়া অনেক অভিযুক্তই ছিলেন শিল্পসংগ্রাহক।


ক্ষুদ্র বাজার, অনিশ্চিত মূল্য

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের শিল্প বিক্রি কমলেও, মোট বিক্রির সংখ্যা বেড়েছে। তবে ইন্দোনেশিয়ার বাজার এখনো দুর্বল ও সীমিত। শিল্প এখানে বিনিয়োগের চেয়ে বিলাসিতার বিষয়।

জাকার্তার ‘সিদ্ধার্থ অকশনিয়ার’-এর প্রধান সায়ান্দা কুনতো বলেন, “দেশীয় বাজার অগভীর হওয়ায় শিল্পকর্মের দাম অনুমান করা কঠিন। দাম স্থিতিশীল না হলে সংগ্রাহক বিভ্রান্ত হন।”

তিনি জানান, “আমরা সাধারণত হংকংয়ের নিলামমূল্যের তুলনায় ২০-৩০% কম দামে নির্ধারণ করি।”


কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা

ইন্দোনেশিয়ায় করপোরেট সংগ্রহ বা শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার ঐতিহ্য নেই, ট্যান্ডিওর ভাষায়, “জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সংগ্রহ এখানে দেখা যায় না।”

৩২ মিলিয়ন মানুষের শহর জাকার্তায় রয়েছে মাত্র দুটি আর্ট মিউজিয়াম—‘ন্যাশনাল গ্যালারি অব ইন্দোনেশিয়া’ ও ‘মিউজিয়াম ম্যাকান’। এক সংগ্রাহক বলেন, “সিঙ্গাপুর বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দাতাদের জন্য কর ছাড়ের সুবিধা এখানে নেই।”


পরিবর্তনের পথে শিল্পবাজার

চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক গ্যালারি এখন দাম কমাচ্ছে ও নতুন ক্রেতা খুঁজছে, তিনি বলেন, “আগে তিন বাই দুই মিটার ক্যানভাস ছিল ঘরের কেন্দ্রবিন্দু, এখন মানুষ অ্যাপার্টমেন্টে উঠছে, তাই ছোট মাপের কাজ বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে।”


#ইন্দোনেশিয়া,# আর্ট জাকার্তা, #এশিয়ান আর্ট মার্কেট,# অর্থনৈতিক সংকট, #দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, #শিল্পসংগ্রাহক, #সংস্কৃতি ও অর্থনীতি