অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমেছে
সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি ২০২৫ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় ২.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তথ্যে দেখা যায়, আগের প্রান্তিকের ৪.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় এটি বেশ মন্থর। এর মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের (reciprocal tariffs) প্রভাব, যা দেশটির উৎপাদন খাতকে চাপে ফেলেছে।
উৎপাদন খাতে শ্লথগতি
রপ্তানিনির্ভর উৎপাদন খাত তৃতীয় প্রান্তিকে কার্যত স্থবির ছিল—আগের প্রান্তিকের ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় এটি বড় ধরনের পতন। মন্ত্রণালয় জানায়, বায়োমেডিক্যাল উৎপাদন এবং সাধারণ উৎপাদন খাতে আউটপুট হ্রাসই সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, যুক্তরাষ্ট্র ৭ আগস্ট থেকে সিঙ্গাপুর থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে বাস্তব প্রবৃদ্ধি
রয়টার্স জরিপে অর্থনীতিবিদদের গড় পূর্বাভাস ছিল ১.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, অথচ বাস্তবে তা ছাড়িয়ে গেছে ২.৯ শতাংশে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীন ও মালয়েশিয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ছিল সিঙ্গাপুরের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে মোট বাণিজ্য হয়েছিল ১৩২ বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ১০১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
রপ্তানি খাতে মন্দা
অর্থনৈতিক তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশটির নন-অয়েল ডোমেস্টিক এক্সপোর্ট (Non-Oil Domestic Exports) ৪.৭ শতাংশ এবং আগস্টে ১১.৩ শতাংশ হ্রাস পায়। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক বাজারে সিঙ্গাপুরের রপ্তানি খাত উল্লেখযোগ্যভাবে ধীর হয়ে পড়েছে।
সেবা ও নির্মাণ খাতের সহায়তা
অন্যদিকে, সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ বাজারভিত্তিক সেবা খাতে ৩.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। পাইকারি ও খুচরা বাণিজ্য, পরিবহন এবং সংরক্ষণ খাত এই বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
নির্মাণ খাতও ৩.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে অর্থনীতিকে কিছুটা সহায়তা দিয়েছে। ফলে উৎপাদন ও রপ্তানির মন্থরতা থেকে সামগ্রিক অর্থনীতি আংশিকভাবে রক্ষা পেয়েছে।
প্রান্তিকভিত্তিক বিশ্লেষণ
ঋতুভিত্তিক সমন্বয় করা তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকে সিঙ্গাপুরের জিডিপি আগের তিন মাসের তুলনায় ১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দ্বিতীয় প্রান্তিকের ১.৫ শতাংশ থেকে কিছুটা কম। প্রাথমিক এই জিডিপি হিসাব প্রান্তিকের প্রথম দুই মাসের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়।
বার্ষিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস
সিঙ্গাপুর সরকার ২০২৫ অর্থবছরের জন্য ১.৫ থেকে ২.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বছরের প্রথমার্ধে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো পারফরম্যান্সের পরও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে দ্বিতীয়ার্ধে প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হয়েছে। ২০২৪ সালে দেশটির প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.৪ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের ১.৮ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি অপরিবর্তিত
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক—Monetary Authority of Singapore (MAS)—তাদের আর্থিক নীতি অপরিবর্তিত রাখার ঘোষণা দেয়। দেশটির আর্থিক নীতি সুদের হারের বদলে মূলত মুদ্রাবিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভরশীল। এর মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ডলারের মান প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের মুদ্রার বিপরীতে ওঠানামা করে দাম স্থিতিশীল রাখে।
মার্কিন শুল্কের প্রভাবে উৎপাদন ও রপ্তানি খাতে চাপ সৃষ্টি হলেও সেবা ও নির্মাণ খাতের স্থিতিশীলতা সিঙ্গাপুর অর্থনীতিকে আংশিকভাবে ভারসাম্যে রেখেছে। আগামী মাসগুলোতে নীতিগত স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের ওপর দেশটির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নির্ভর করবে।
#সিঙ্গাপুর #অর্থনীতি #জিডিপি #বাণিজ্য #মার্কিনশুল্ক #রপ্তানি #নির্মাণখাত #সেবা_খাত #সারাক্ষণরিপোর্ট