ফেডের নীতিগত ইঙ্গিত ও নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগের প্রবণতা
সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪,২০০ ডলার অতিক্রম করেছে বুধবার, যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার আরও কমবে—এই প্রত্যাশা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনায় ঝুঁকছেন।
বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে (০৮:২৯ জিএমটি) স্পট গোল্ডের দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্সে ৪,২০৯.৪৯ ডলার, যা সেশনের শুরুতে রেকর্ড ৪,২১৭.৯৫ ডলার স্পর্শ করে। ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফিউচার্স সোনার দামও বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্সে ৪,২২৭.৬০ ডলারে।
বছরে ৬০% বৃদ্ধি — বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা ও ডলারের দুর্বলতায় সোনার উত্থান
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সোনার দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনে রয়েছে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, যুক্তরাষ্ট্রের সুদহার কমার প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী সোনা কেনা, ডলার-বিমুখ (de-dollarisation) প্রবণতা এবং এক্সচেঞ্জ–ট্রেডেড ফান্ডে বিপুল বিনিয়োগ প্রবাহ।
অ্যাকটিভট্রেডসের বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভানজেলিস্তা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে সরকার আংশিকভাবে বন্ধ থাকা, ফেড কর্মকর্তাদের নমনীয় মন্তব্য, এবং ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে।” তিনি আরও যোগ করেন, “মাঝারি থেকে দীর্ঘমেয়াদে ৫,০০০ ডলারের স্তরে পৌঁছানো অসম্ভব নয়।”
ফেডের নরম অবস্থান ও ট্রাম্পের বাণিজ্য মন্তব্যে বাজারে প্রভাব
ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর মার্কিন ডলার প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে দুর্বল হয়ে পড়ে। বিনিয়োগকারীরা ধারণা করছেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বরে দুই ধাপে ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদ আরও কমতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র কিছু বাণিজ্যিক সম্পর্ক চীনের সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করছে, বিশেষ করে যখন দুই দেশই একে অপরের ওপর নতুন শুল্ক বা বন্দর ফি আরোপ করেছে।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিম্ন সুদহার পরিবেশে সোনার চাহিদা বৃদ্ধি
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের আংশিক কার্যক্রম বন্ধ থাকা, ফ্রান্স ও জাপানের রাজনৈতিক অস্থিরতা—এসব ঝুঁকি বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে আরও আকর্ষণ করছে। ঐতিহ্যগতভাবে সোনা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে দেখা হয়।
এএনজেড ব্যাংকের পণ্য বিশ্লেষক সোনি কুমারী বলেন, “আমরা আশা করছি সোনার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা (bull run) অব্যাহত থাকবে।”
অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারও ঊর্ধ্বমুখী
প্রযুক্তিগত দিক থেকে দেখা যাচ্ছে, সোনার রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স (RSI) ৮৫—যা ‘অতিরিক্ত কেনা’ (overbought) অবস্থা নির্দেশ করছে। তবুও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস অটুট রয়েছে।
রূপার দাম ২.৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্সে ৫২.৮১ ডলারে, যা আগের দিন রেকর্ড ৫৩.৬০ ডলার ছুঁয়েছিল। সরবরাহ ঘাটতি ও সোনার উত্থানের প্রভাবে রূপার দামও বাড়ছে।
অন্যদিকে, প্ল্যাটিনামের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১,৬৬৫.১৫ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১,৫৫০.৫০ ডলার প্রতি আউন্সে।
#সোনা #অর্থনীতি #ফেডারেলরিজার্ভ #চীন-যুক্তরাষ্ট্র-বাণিজ্য #বিশ্ববাজার #পণ্যবাজার #সারাক্ষণরিপোর্ট