বোলটনের বিরুদ্ধে অভিযোগের নতুন অধ্যায়
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বৃহস্পতিবার সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোলটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, অভিযোগ রয়েছে যে তিনি গোপনীয় তথ্যের ভুল ব্যবস্থাপনা করেছেন। ৭৬ বছর বয়সী বোলটন, যিনি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক, সম্প্রতি মামলার মুখোমুখি হন। আদালতের কাগজপত্রে বলা হয়েছে, বোলটন তার ব্যক্তিগত ডায়েরির মতো ১,০০০ পৃষ্ঠার তথ্য দুইজন নিকট আত্মীয়ের কাছে শেয়ার করেছেন, যা তার দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পর্কে গোপন তথ্য ধারণ করত। এই তথ্য তিনি তার ব্যক্তিগত ইমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে পাঠিয়েছেন, কখনও কখনও এওএল এবং গুগল ইমেইল অ্যাকাউন্ট থেকে। তবে প্রাপ্তি ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে বিষয়টির সাথে পরিচিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে তারা বোলটনের স্ত্রী এবং কন্যা।
বোলটনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ
বোলটনের বিরুদ্ধে ১৮টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগগুলোর মধ্যে কিছু অভিযোগ রয়েছে যে তার ব্যক্তিগত ইমেইল হ্যাক হওয়ার পর গোপনীয় তথ্য প্রকাশিত হতে পারে। বোলটন একটি বক্তব্যে বলেন, এসব অভিযোগ ট্রাম্পের সমালোচকদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমি আমার বৈধ আচরণ রক্ষার জন্য লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার উন্মোচন করতে চাই।”
আইনগত প্রক্রিয়া এবং ট্রাম্পের সহায়তা
বোলটনের মামলার শুরুটা বেশ পুরানো। FBI তদন্তটি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শুরু হয়েছিল, এবং পরে ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় বোলটনের বাড়ি এবং অফিসে তল্লাশি চালানো হয়। এই সময় FBI কর্মকর্তারা গোপনীয় তথ্যসহ বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র উদ্ধার করেন, যেগুলোর মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের মিশন সম্পর্কিত এবং জাতীয় কৌশলগত যোগাযোগ সম্পর্কিত নথি ছিল।
আইনি বিশ্লেষণ
এক্ষেত্রে, অনেক আইনজীবী মনে করছেন যে এই মামলা তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। বোলটনের বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে জাতীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত তথ্যের অবৈধ স্থানান্তর এবং তথ্যের অবৈধ ধারণের অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডি মন্তব্য করেছেন, “সব আমেরিকানদের জন্য একই ধরনের বিচার ব্যবস্থা রয়েছে, যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
বোলটনের প্রতিক্রিয়া
বোলটনের আইনজীবী আব্বে লোয়েল জানিয়েছেন যে এই অভিযোগগুলো মূলত বোলটনের ব্যক্তিগত ডায়েরির কিছু অংশ নিয়ে, যা অজ্ঞাতভাবে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে শেয়ার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “বোলটন দীর্ঘদিন ধরে ডায়েরি লিখে আসছেন, যা কোনো অপরাধ নয়।” বোলটন তার ডায়েরি এন্ট্রিজ-এ সামরিক কর্মকর্তা, বিদেশি নেতৃবৃন্দ এবং গোয়েন্দা কমিউনিটির সদস্যদের সাথে আলোচনা করা তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন, যা কিছু ক্ষেত্রে গোপনীয় ছিল।
ভবিষ্যত প্রেক্ষাপট
বোলটনের বিরুদ্ধে এই মামলা তাঁর ও ট্রাম্পের সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাসের অংশ। বোলটন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে অনেক জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বিরোধিতা করেছিলেন, যার কারণে তাকে পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এদিকে, ট্রাম্প জানিয়েছেন যে বোলটন তার জন্য “খারাপ ব্যক্তি”।
এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের প্রশাসনের সময়ে বোলটনের গোপনীয় তথ্য নিয়ে তদন্ত আরও তীব্র হয়েছে, তবে বর্তমানে নতুন প্রশাসনের অধীনে এই মামলা পুনরায় উন্মোচিত হয়েছে।
বোলটনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগের ব্যাপারে এখনো অনেক কিছু জানা বাকি রয়েছে। এটি শুধুমাত্র একটি আইনগত প্রক্রিয়া নয়, বরং রাজনৈতিক সংঘর্ষের একটি নতুন পর্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ট্রাম্প ও তার সমালোচকদের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেবে।