হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে শনিবার বিকেলে লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর রবিবার বিকেলে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই আগুনে ভবনের কাঠামোতে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ মালামাল পুড়ে গেছে।
২৭ ঘণ্টার লড়াই শেষে আগুন নিয়ন্ত্রণে
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি)-এর পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, রবিবার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুন সম্পূর্ণ নিভে যায়। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের জানান, “যদি ভবনের ভেতরে সরাসরি বা পরোক্ষ অগ্নি শনাক্তকরণ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকত, তাহলে আগুন নেভাতে এত সময় লাগত না।”
তিনি আরও বলেন, “ভবনে প্রচুর পরিমাণে স্টিল ছিল, যা তাপ ধরে রেখেছিল। ফলে আগুনের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব বেড়ে যায়।”
ঝুঁকিতে ভবনের কাঠামো
ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিট টানা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাজুল ইসলাম জানান, ভবনের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছিল, ফলে কাঠামোর বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। “ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ, তবে চরম বিপজ্জনক নয়। আমরা ভিতরে প্রবেশ করতে পারায় বুঝতে পারছি, এটি সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রায় নয়,” তিনি বলেন।
তিনি আরও যোগ করেন, “তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে কাঠামোগত ক্ষতি নিরূপণে পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করা।”
রাসায়নিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি
ঘটনাস্থলে থাকা কিছু রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম, যদিও তিনি বলেন, “এই ঝুঁকি গুরুতর নয়।”
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে দুইজন দমকল কর্মী আহত হয়েছেন বলে ফায়ার সার্ভিস নিশ্চিত করেছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পরবর্তী পদক্ষেপ
যদিও আগুন সম্পূর্ণ নিভে গেছে, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চারটি ফায়ার ইউনিট ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে। এফএসসিডি কর্মকর্তারা জানান, কার্গো ভিলেজে বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ জমে থাকায় আগুন নেভাতে সময় লেগেছে।
আগুনের সূত্রপাত ও ক্ষয়ক্ষতি
শনিবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিট থেকে ২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে আমদানি কার্গো ভিলেজ এলাকায় আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে, কমপ্লেক্সটির তিনটি সেকশনের মধ্যে দুটি অংশ সম্পূর্ণভাবে পুড়ে যায় এবং পরে আগুন গেট-৮ সংলগ্ন কেমিক্যাল গুদাম পর্যন্ত পৌঁছে।
রাত ৯টার পর বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
তদন্ত কমিটি ও আহতদের তথ্য
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় অন্তত ৩৭ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন দমকল কর্মী, ২৫ জন আনসার সদস্য এবং বিভিন্ন সংস্থার আরও ১০ জন কর্মী।
বড় ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানি নেই
বিমানবন্দরের ইতিহাসে এটি অন্যতম ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড হলেও বড় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
#শাহজালাল_বিমানবন্দর
#কার্গো_ভিলেজ_আগুন
#ফায়ার_সার্ভিস
#অগ্নিকাণ্ড
#বিমানবন্দর_নিরাপত্তা
#সারাক্ষণ_রিপোর্ট