০২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
তানজিম সাইয়ারা তটিনী: বরিশাল থেকে ঢাকায় আলোয় ভরা অভিনয় যাত্রা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আগে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা উচিত: বরকত উল্লাহ বুলু কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে লালমনিরহাটের গ্রাম—হেমন্তের আগমনী বার্তা ঢাকা বাজারে সূচক বৃদ্ধি, চট্টগ্রামে পতন দুর্নীতিমুক্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর ভূমিসেবা নিশ্চিত করাই সরকারের অগ্রাধিকার – সালেহ আহমেদ মিরপুর অগ্নিকাণ্ডে নিহত ১৬ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর ৫০ লাখ টাকা খরচ, কিন্তু কালভার্ট নেই—চাঁদপুরে গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ আরমানিটোলায় জুবায়ের হত্যা: এক কলেজছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ স্বর্ণময়ী বিশ্বাসের ঝুলন্ত মরদেহ : সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগের তীর আলতাফ শাহনেওয়াজের দিকে বরিশালের হিজলায় ইলিশ অভিযানে হামলা—মৎস্য কর্মকর্তাসহ ১৫ জন আহত

ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন হামলা নিয়ে বিতর্ক

ভেনেজুয়েলার উপকূলে পাঁচটি নৌকায় মার্কিন সামরিক হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই অভিযানে “কমপক্ষে ১ লাখ জীবন বাঁচানো হয়েছে।” কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দাবির কোনো বাস্তব বা পরিসংখ্যানগত প্রমাণ নেই এবং বক্তব্যটি যুক্তিহীন।


ট্রাম্পের বক্তব্য ও যুক্তি

১৫ অক্টোবর তারিখে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রতি নৌকা আমরা ধ্বংস করি মানে ২৫ হাজার আমেরিকানের জীবন বাঁচে। তাই যখনই একটি নৌকা ডুবে যায়, মনে রাখুন, আমরা হাজারো জীবন রক্ষা করছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তিনজন মানুষ হারানোটা কষ্টের, কিন্তু ২৫ হাজারকে বাঁচানো মানবিক কাজ।’

এছাড়া ৭ অক্টোবর কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি (Mark Carney)-এর সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা জলপথে আসা সব মাদক সরবরাহ বন্ধ করেছি। এখন আর কোনো মাছ ধরার নৌকা বা মাদকবাহী নৌকা নেই। এতে অন্তত ১ লাখ আমেরিকান ও কানাডীয় প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।’


প্রমাণহীন দাবি ও আইনগত প্রশ্ন

পলিটিফ্যাক্ট নামের একটি স্বাধীন যাচাই সংস্থা জানিয়েছে, মার্কিন প্রশাসন কোনো প্রমাণ দেয়নি যে এসব নৌকা মাদক বহন করছিল। আইন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম হামলাটিই আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন ও মানবাধিকার কনভেনশনসমূহের বিরোধী ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের ভূমিকা খুবই নগণ্য।


‘ফেন্টানিল’ বিতর্ক

ট্রাম্প দাবি করেন, নৌকাগুলোতে ‘ফেন্টানিল’ ছিল — একটি অত্যন্ত প্রাণঘাতী সিনথেটিক মাদক। তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকা ধ্বংসের পর সমুদ্রে ফেন্টানিলের ব্যাগ ভাসছে।’
কিন্তু তাঁর শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে এমন কোনো ব্যাগ বা মাদক দৃশ্যমান নয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অধিকাংশ ফেন্টানিল আসে মেক্সিকো থেকে, প্রধানত দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে, যেখানে পাচারের সঙ্গে জড়িত হন মার্কিন নাগরিকরাই।


বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোনাথন ক্যালকিনস বলেন, ‘যখন মাদক আটক হয়, তখন সরবরাহ শৃঙ্খল দ্রুত সেই ক্ষতি পূরণ করে। তাই সরাসরি “প্রাণরক্ষা” সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।’

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এলিন কেনেডি-হেনড্রিক্স মন্তব্য করেন, ‘মাদক জব্দের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কতজনের মৃত্যু রোধ হয়েছে, তা নিরূপণের বৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতি নেই।’


পরিসংখ্যানের অসঙ্গতি

সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭৩ হাজার মানুষ অতিমাত্রায় মাদক সেবনে মারা গেছেন।
যদি ট্রাম্পের দাবি সত্য হতো, তবে মাত্র পাঁচটি নৌকা ধ্বংসে ১ লাখ ২৫ হাজার জীবন রক্ষা করা সম্ভব হতো, যা বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণের সমান।


ট্রাম্পের দাবি যে, ‘প্রতি নৌকা ধ্বংসে ২৫ হাজার আমেরিকানের জীবন রক্ষা হয়’ — তা কোনো বৈজ্ঞানিক বা তথ্যভিত্তিক প্রমাণে টেকে না। মার্কিন প্রশাসন নৌকাগুলোতে মাদক থাকার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, এবং ভেনেজুয়েলাও মাদক পাচারে বড় ভূমিকা রাখে না।
ফলে এই বক্তব্য পরিসংখ্যানগতভাবে বিভ্রান্তিকর এবং বাস্তবতার সঙ্গে অসঙ্গত।


  • ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভেনেজুয়েলার উপকূলে নৌকা ধ্বংসে ১ লাখেরও বেশি জীবন রক্ষা হয়েছে।
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
  • প্রশাসন নৌকাগুলোতে মাদক থাকার প্রমাণ দেয়নি।
  • মাদক আটক মানেই জীবনরক্ষা নয়—এটি একটি ভুল সমীকরণ।
  • যাচাই সংস্থাগুলো ট্রাম্পের দাবিকে “ভুল” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ট্যাগ: ভেনেজুয়েলা, #মার্কিন_নৌ_অভিযান, #ডোনাল্ড_ট্রাম্প, #মাদক_বিরোধী_যুদ্ধ, #ফেন্টানিল, #পলিটিফ্যাক্ট, #আলজাজিরা, #আন্তর্জাতিক_আইন, #মাদক_সংকট, #সারাক্ষণ

জনপ্রিয় সংবাদ

তানজিম সাইয়ারা তটিনী: বরিশাল থেকে ঢাকায় আলোয় ভরা অভিনয় যাত্রা

ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন হামলা নিয়ে বিতর্ক

১১:২৯:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

ভেনেজুয়েলার উপকূলে পাঁচটি নৌকায় মার্কিন সামরিক হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই অভিযানে “কমপক্ষে ১ লাখ জীবন বাঁচানো হয়েছে।” কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দাবির কোনো বাস্তব বা পরিসংখ্যানগত প্রমাণ নেই এবং বক্তব্যটি যুক্তিহীন।


ট্রাম্পের বক্তব্য ও যুক্তি

১৫ অক্টোবর তারিখে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘প্রতি নৌকা আমরা ধ্বংস করি মানে ২৫ হাজার আমেরিকানের জীবন বাঁচে। তাই যখনই একটি নৌকা ডুবে যায়, মনে রাখুন, আমরা হাজারো জীবন রক্ষা করছি।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘তিনজন মানুষ হারানোটা কষ্টের, কিন্তু ২৫ হাজারকে বাঁচানো মানবিক কাজ।’

এছাড়া ৭ অক্টোবর কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনি (Mark Carney)-এর সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা জলপথে আসা সব মাদক সরবরাহ বন্ধ করেছি। এখন আর কোনো মাছ ধরার নৌকা বা মাদকবাহী নৌকা নেই। এতে অন্তত ১ লাখ আমেরিকান ও কানাডীয় প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।’


প্রমাণহীন দাবি ও আইনগত প্রশ্ন

পলিটিফ্যাক্ট নামের একটি স্বাধীন যাচাই সংস্থা জানিয়েছে, মার্কিন প্রশাসন কোনো প্রমাণ দেয়নি যে এসব নৌকা মাদক বহন করছিল। আইন বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম হামলাটিই আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক আইন ও মানবাধিকার কনভেনশনসমূহের বিরোধী ছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের ভূমিকা খুবই নগণ্য।


‘ফেন্টানিল’ বিতর্ক

ট্রাম্প দাবি করেন, নৌকাগুলোতে ‘ফেন্টানিল’ ছিল — একটি অত্যন্ত প্রাণঘাতী সিনথেটিক মাদক। তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে দেখা যায়, নৌকা ধ্বংসের পর সমুদ্রে ফেন্টানিলের ব্যাগ ভাসছে।’
কিন্তু তাঁর শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে এমন কোনো ব্যাগ বা মাদক দৃশ্যমান নয়।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অধিকাংশ ফেন্টানিল আসে মেক্সিকো থেকে, প্রধানত দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে, যেখানে পাচারের সঙ্গে জড়িত হন মার্কিন নাগরিকরাই।


বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোনাথন ক্যালকিনস বলেন, ‘যখন মাদক আটক হয়, তখন সরবরাহ শৃঙ্খল দ্রুত সেই ক্ষতি পূরণ করে। তাই সরাসরি “প্রাণরক্ষা” সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়।’

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এলিন কেনেডি-হেনড্রিক্স মন্তব্য করেন, ‘মাদক জব্দের পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কতজনের মৃত্যু রোধ হয়েছে, তা নিরূপণের বৈজ্ঞানিক কোনো পদ্ধতি নেই।’


পরিসংখ্যানের অসঙ্গতি

সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭৩ হাজার মানুষ অতিমাত্রায় মাদক সেবনে মারা গেছেন।
যদি ট্রাম্পের দাবি সত্য হতো, তবে মাত্র পাঁচটি নৌকা ধ্বংসে ১ লাখ ২৫ হাজার জীবন রক্ষা করা সম্ভব হতো, যা বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণের সমান।


ট্রাম্পের দাবি যে, ‘প্রতি নৌকা ধ্বংসে ২৫ হাজার আমেরিকানের জীবন রক্ষা হয়’ — তা কোনো বৈজ্ঞানিক বা তথ্যভিত্তিক প্রমাণে টেকে না। মার্কিন প্রশাসন নৌকাগুলোতে মাদক থাকার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, এবং ভেনেজুয়েলাও মাদক পাচারে বড় ভূমিকা রাখে না।
ফলে এই বক্তব্য পরিসংখ্যানগতভাবে বিভ্রান্তিকর এবং বাস্তবতার সঙ্গে অসঙ্গত।


  • ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভেনেজুয়েলার উপকূলে নৌকা ধ্বংসে ১ লাখেরও বেশি জীবন রক্ষা হয়েছে।
  • বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
  • প্রশাসন নৌকাগুলোতে মাদক থাকার প্রমাণ দেয়নি।
  • মাদক আটক মানেই জীবনরক্ষা নয়—এটি একটি ভুল সমীকরণ।
  • যাচাই সংস্থাগুলো ট্রাম্পের দাবিকে “ভুল” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ট্যাগ: ভেনেজুয়েলা, #মার্কিন_নৌ_অভিযান, #ডোনাল্ড_ট্রাম্প, #মাদক_বিরোধী_যুদ্ধ, #ফেন্টানিল, #পলিটিফ্যাক্ট, #আলজাজিরা, #আন্তর্জাতিক_আইন, #মাদক_সংকট, #সারাক্ষণ