গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর সাময়িক যুদ্ধবিরতি আবার কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আভিভ। হামাসের বিরুদ্ধে আক্রমণের কারণ হিসেবে দুই ইসরায়েলি সেনার মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করা হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি এখনও বহাল রয়েছে এবং হামাস নেতৃত্ব সরাসরি জড়িত নাও থাকতে পারে।
গাজায় নতুন উত্তেজনা
রবিবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানায়, গাজায় হামাসের অবস্থানে হামলার পর যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর হয়েছে। এ হামলায় স্থানীয় সূত্র ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন—যার মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। নুসাইরাত অঞ্চলে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত এক সাবেক বিদ্যালয়ে হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েল জানায়, গাজা থেকে ছোঁড়া একটি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ও গুলিবর্ষণে তাদের দুই সেনা নিহত হন। এর পরই হামাসের টানেল, অস্ত্রভাণ্ডার ও ফিল্ড কমান্ডারদের টার্গেট করে বিমান হামলা চালানো হয়।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক তৎপরতা
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “যুদ্ধবিরতি এখনও কার্যকর আছে, যদিও কিছু লঙ্ঘন দেখা গেছে। হয়তো হামাস নেতৃত্ব এতে জড়িত নয়।” তিনি যোগ করেন, “যেভাবেই হোক, বিষয়টি কঠোর কিন্তু সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি হামলার যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন এবং বিষয়টি যাচাই করে জানাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে সোমবার থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা পুনরায় পাঠানো শুরু হবে বলে জানায় এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা সূত্র। এর আগে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
এদিকে ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জারেড কুশনার সোমবার ইসরায়েল সফরে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছে ওয়াশিংটন ও জেরুজালেমের কর্মকর্তারা।
হামাসের অবস্থান ও মার্কিন মূল্যায়ন
হামাসের সামরিক শাখা জানায়, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং রাফাহ অঞ্চলের সংঘর্ষ সম্পর্কে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।
অন্যদিকে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে. ডি. ভ্যান্স বলেন, হামাসের অন্তত ৪০টি সেল এখনও সক্রিয় রয়েছে, যাদের অনেকেই নিরস্ত্র হয়নি। “কিছু সেল যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে, কিন্তু অনেকেই নয়,” তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, হামাসকে সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র করতে উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণ ও শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন প্রয়োজন।
নেটানিয়াহুর কঠোর অবস্থান
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেটানিয়াহু জানান, হামাসের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীকে “কঠোর জবাব” দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, ইসরায়েল কাটজ বলেন, যুদ্ধবিরতির শর্তে ইসরায়েলি বাহিনী যে সীমানা পর্যন্ত পিছু হটেছে, সেটি “হলুদ রেখা” হিসেবে চিহ্নিত করা হবে এবং সেই রেখা অতিক্রম করলে গুলি চালানো হবে।
গাজায় মানবিক সংকট ও সহায়তার প্রশ্ন
হামাস অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৬ জন নিহত হয়েছেন এবং মৌলিক সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
রাফাহ সীমান্ত, যা গাজা ও মিশরের মধ্যে প্রধান প্রবেশদ্বার, শনিবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ইসরায়েল জানায়, হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত পূরণ না করা পর্যন্ত সীমান্ত পুনরায় খোলা হবে না।
হামাস গত সপ্তাহে জীবিত ২০ জন বন্দিকে মুক্তি দিলেও মৃত ২৮ জনের মধ্যে ১২ জনের দেহ হস্তান্তর করেছে। ইসরায়েল বলছে, এ বিষয়ে হামাস ধীরগতিতে কাজ করছে।
হামাসের দাবি, তারা বাকি মৃত বন্দিদের দেহ ফিরিয়ে দিতে চায়, তবে অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে এবং উদ্ধার সরঞ্জামের অভাবে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পথে অনিশ্চয়তা
অক্টোবরের ১০ তারিখে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতিটি দুই বছরের সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছিল, তবে উভয় পক্ষই একে অপরকে লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করছে।
এ অবস্থা ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়েছে—অনেকে আবার বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে ছুটছে, কেউ কেউ দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা কয়েক লাখে পৌঁছেছে। সহায়তা পুনরায় শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নতুন এই সহিংসতা যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বন্দিদের দেহ ফেরত, মানবিক সহায়তার প্রবাহ, এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণসহ নানা অমীমাংসিত ইস্যু এখনো আলোচনার পথে বাধা হয়ে আছে।
যুদ্ধবিরতির নাজুক ভারসাম্য টিকিয়ে রাখা এখন মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
#গাজা,# ইসরায়েল,# হামাস,# যুদ্ধবিরতি, #ডোনাল্ড_ট্রাম্প,# মধ্যপ্রাচ্য, #মানবিক_সহায়তা,# সারাক্ষণ_রিপোর্ট