রাজনীতি থেরাপির ভেতর ঢুকে পড়েছে। যে জায়গাটি হওয়ার কথা ছিল বিচারহীন নিরাপদ আশ্রয়, সেটিই হয়ে উঠছে বিভাজনের ইনকিউবেটর। নিরপেক্ষ পথপ্রদর্শক হওয়ার বদলে অনেক থেরাপিস্ট এখন রাজনৈতিক মেরুকরণের বাহক—তা নির্ণয় করছেন, উসকাচ্ছেন, ছড়িয়ে দিচ্ছেন। নানা সময়ে রাজনীতিকে রোগ বিবেচনা করে নির্দিষ্ট মতের রোগীদের অস্বাভাবিক বা অসুস্থ হিসেবে দেখানো হয়। আমার ম্যানহাটনের চর্চায় আমি এটি প্রত্যক্ষ করেছি। ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এক রোগী এলেন—তার দম্পতি-পরামর্শদাতা জানিয়েছিলেন, তিনি আলোচনা চালাতে রাজি হবেন কেবল তখনই, যদি রোগী আগে তার রাজনৈতিক মত ত্যাগ করেন। চলতি বছরের শুরুতে একজন এশীয়-আমেরিকান নারী বললেন, তার আগের থেরাপিস্ট কর্মক্ষেত্রের চাপ নিয়ে কথা বলতে চাইলে বারবার আলোচনাকে জাতি ও রাজনীতিতে টেনে নিতেন। দুই ক্ষেত্রেই রাজনীতি ছিল না রোগীর সমস্যা; ছিল থেরাপিস্টের ‘সমাধান’। এটা থেরাপি নয়; চিকিৎসার ছদ্মবেশে সক্রিয়তাবাদ।
শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে থেরাপির ভিত্তি ছিল নিরপেক্ষতা। সিগমুন্ড ফ্রয়েড বিশ্লেষকদের ‘ফাঁকা পর্দা’ হতে বলেছিলেন। কার্ল রজার্স ‘শর্তহীন ইতিবাচক মর্যাদা’র কথা বলেছেন—অর্থাৎ রোগীকে বিচার-বিশ্লেষণ ছাড়াই গ্রহণ করা। সেই নীতি ভেঙে পড়েছে। আজ পেশাজীবী সংগঠনগুলো নির্বাচন-পরবর্তী ‘জরুরি সহায়তা অধিবেশন’ আয়োজন করে। ২০২০ সালে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বর্ণবাদকে ‘সার্বজনীন স্বাস্থ্য সংকট’ ঘোষণা করে এবং মনোবিজ্ঞানীদের সামাজিক ন্যায়বিচারকেন্দ্রিক সক্রিয়তাকে আলিঙ্গন করতে উৎসাহিত করে। স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলো শিক্ষার্থীদের ‘দমনবিরোধী’ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দেয়। কোলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের শেখায় যে আমাদের ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানে কৃষ্ণাঙ্গবিদ্বেষ এবং শ্বেত প্রাধান্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রোথিত। স্নাতকোত্তরের পরও এই আদর্শগত দীক্ষা চলতে থাকে। থেরাপিস্টদের ১,৫০০ ডলারের বর্ণবৈষম্যবিরোধী অবকাশ শিবির ও ‘শ্বেতত্ব থেকে মুক্ত হওয়া’ ধরনের কর্মশালায় যেতে অনুরোধ করা হয়। এসব আয়োজন বিভাজনকে ঘনীভূত করে এবং যাদের সেবা করার কথা—সেই ক্লায়েন্টদেরই দূরে ঠেলে দেয়।
রাজনৈতিক বিভাজনের পরিণতি এখন থেরাপির কক্ষে ধরা পড়ছে। মেরুকরণ উদ্বেগ বা হতাশার উপসর্গের অনুকরণ করে—বিচ্ছিন্নতা, সম্পর্ক ভাঙা, স্থায়ী চাপ। রোগীরা আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন, দলভেদে ডেটিং এড়িয়ে যাচ্ছেন, এমনকি রাজনৈতিক আনুগত্যের শপথও চাইছেন। সাম্প্রতিক এক রয়টার্স/ইপসোস জরিপে দেখা গেছে, ২৭% ডেমোক্র্যাট এবং ১০% রিপাবলিকান বলেছেন—রাজনীতি তাদের বন্ধুত্বকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে। ডেটিং-বিষয়ক জরিপে দেখা যায়, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আমেরিকান রাজনৈতিক সামঞ্জস্যতাকেই অগ্রাধিকার দেন, এবং প্রতি ছয়জনের একজন এ কারণে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
ক্লিনিকাল মানদণ্ডে মেরুকরণ স্বীকৃত নানা ব্যাধির সঙ্গে বহু সূচক ভাগ করে—সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, দীর্ঘস্থায়ী চাপ, বাড়তি উদ্বেগ, অপকারী মোকাবিলা কৌশল। থেরাপিস্টরা এগুলো চিকিৎসা করার বদলে প্রায়ই দলপক্ষের অনমনীয়তাকে বৈধতা দিয়ে মেরুকরণ বাড়িয়ে দেন। এভাবে তারা আর আরোগ্যদাতা নন; এই নতুন ব্যাধির বাহকে পরিণত হন। মেরুকরণ আমাদের সময়ের সংজ্ঞায়ক প্যাথলজি হয়ে উঠছে।
থেরাপিস্টরা যখন নিরপেক্ষতা ছেড়ে দিলেন, তখন মেরুকরণ আর সমাধানযোগ্য অবস্থা রইল না—এটাই হয়ে গেল তাদের দেওয়া ‘ওষুধ’। কেউ বলেন প্রগতিশীলরা ‘ওয়োক কল্পনায়’ আটকে; আবার কেউ রক্ষণশীলদের ‘বিদ্বেষমূলক চিন্তার’ জন্য লজ্জিত করেন। রোগীরা বেরিয়ে আসেন আরও ক্ষুব্ধ, আরও অনমনীয়, প্রতিবেশীদের প্রতি আরও অবিশ্বাসী হয়ে। মতভেদ হয়ে ওঠে ‘ক্ষতি’; দ্বিমত হয়ে ওঠে ‘আঘাত’; ভিন্নতা হয়ে ওঠে ‘বিপদ’। এটা থেরাপি নয়; যত্নের সাজে মতাদর্শচর্চা। আমি ফক্স নিউজে অংশ নিয়েছি শুনে রোগী ও আত্মীয়রা বিভিন্নভাবে জিজ্ঞেস করেছেন: “জোনাথন কীভাবে ফক্সে গেল? সে তো এত ভালো মানুষ!”—তাদের ধারণা ছিল, ‘ভুল’ নেটওয়ার্কে গেলে থেরাপিস্টের মানবিকতা টিকে না। ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রেগানকে অস্ত্রোপচারের জন্য নেওয়া হলে তিনি শল্যদলের উদ্দেশে রসিকতা করে বলেছিলেন, “আশা করি, আপনাদের সবাই রিপাবলিকান।” প্রধান সার্জন, যিনি ডেমোক্র্যাট, উত্তর দিয়েছিলেন, “আজ, মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আমরা সবাই রিপাবলিকান।” ২০২৪ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলার চেষ্টার পর আমার কিছু রোগী ঠাট্টা করে বলেছিলেন, হামলাকারীর লক্ষ্যভেদ আরও সোজা হওয়া উচিত ছিল। অনলাইনে কিছু থেরাপিস্ট ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রকাশ্যেই উল্লাস করেছেন। যে মুহূর্তটি দেশকে এক করতে পারত, তা আবারও অবজ্ঞার প্রদর্শনী হয়ে উঠল—থেরাপিস্টরা যেই মেরুকরণ সারানোর কথা, সেটিই তারা মডেল করে দেখালেন। নিরপেক্ষতা কোনো শিষ্টাচার নয়—এটাই থেরাপির ভিত্তি। এটি না থাকলে রোগীরা নিজেকে লুকিয়ে রাখেন বা থেরাপি ছেড়ে দেন। ‘লাজুক ট্রাম্প-সমর্থক’ কেবল রাজনৈতিক নয়, ক্লিনিক্যাল ঘটনাও বটে। থেরাপি যখন মেরুকরণকে বৈধতা দেয়, রোগীরা শেখেন সাধারণ মতভেদকেও অস্তিত্বগত হুমকি হিসেবে নিতে। এর নাগরিক পরিণতি ভয়াবহ। যারা রাজনীতিকে রোগ বানিয়ে দেখেন, তারা রোগীদের শেখান—প্রতিপক্ষ প্রতিবেশী নয়, বরং রোগনির্ণয়। এটি আরোগ্য নয়; নাগরিক সহাবস্থানের ক্ষতিসাধন।
রোগীরা থেরাপি ছাড়ছেন না; তারা থেরাপিস্টদের ছেড়ে দিচ্ছেন। ক্রমশই তারা ভরসা করছেন টিকটকের প্রভাবক, দলীয় প্রতিধ্বনি-কক্ষ বা চ্যাটবটের ওপর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় গভীরতা ও জবাবদিহি কম থাকতে পারে, কিন্তু সেখানে নিরপেক্ষতার সম্ভাবনা আছে—যা অনেক মানব থেরাপিস্ট আর দিচ্ছেন না। এই প্রবণতা চলতে থাকলে থেরাপি তার উদ্দেশ্য অ্যালগরিদমের হাতে ছেড়ে দেবে এবং রোগীরা বাস্তবতা থেকে আরও বিযুক্ত হয়ে পড়বেন।
মেরুকরণ আর কেবল রাজনৈতিক সমস্যা নয়—এটি আমেরিকার নতুন ব্যাধি। আসক্তি বা ভীতির মতোই এটি জীবনের পরিধি সংকুচিত করে এবং স্থিতিস্থাপকতাকে ক্ষয় করে। থেরাপির কাজ হওয়া উচিত পার্থক্যের মুখোমুখি হতে সহায়তা করা, তা থেকে পালানো নয়।
ভালো থেরাপি বিভাজনকে সামলে রাখে। পরিবার ও দম্পতি-থেরাপিতে নিরপেক্ষতা মানুষকে গভীর মতপার্থক্যের মাঝেও একসঙ্গে থাকতে শেখায়—একাত্মতার জন্য একমত হওয়া নয়, সম্পর্ককে ক্ষয় থেকে রক্ষা করা লক্ষ্য। এখানেও একই নীতি প্রযোজ্য: থেরাপি রোগীদের রাজনৈতিক ভিন্নতা সহ্য করার শক্তি দিতে হবে এবং মেরুকরণে সৃষ্ট ক্ষত থেকে সেরে উঠতে সহায়তা করতে হবে।