প্রতিবছর এসব জায়গা থেকে যারা আসেন সিজন অর্থাৎ নভেম্বরের দিকে।
ধুনিয়া
তুলা পরিষ্কার যারা করে, তাদের বলা হয় ধুনিয়া। আমাদের ছেলেবেলায়ও শীতকালে ধুনিয়াদের দেখেছি। এখন লেপ, তোশক, বালিশের দোকান হওয়াতে ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে পেশাগত সম্প্রদায় হিসেবে ধুনিয়ারা বিলুপ্ত। ওয়াইজ মনে করেন, পেশাটি ছিল হিন্দুদের, পরে তারা ধর্মান্তরিত হলে, মুসলমানেরা ধুনিয়া হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তারা শ্রাবণ মাসে ধনুকের পুজো করে ভোজের আয়োজন করতেন।
সুফিবাদের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন মনসুর আল হাজ্জাজ। বাগদাদে ১০ম শতকে তিনি বসবাস করতেন। বলা হয়ে থাকে স্বর্গের কয়েক ফোঁটা অমৃত পান করে তিনি বলে ওঠেন, আনাল হক বা আমিই খোদা। সে কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রচুর অলৌকিক গল্প আছে। একটি গল্প হলো, তিনি বাগদাদে এক ধুনিয়ার দোকানে বসে গল্প করছেন। ধুনিয়াকে তিনি একটি কাজের জন্য বাইরে পাঠাতে চাইলেন। ধুনিয়া বললেন, তিনি কাজ করছেন যেতে পারবেন না। মনসুর বললেন, তিনি তার কাজ করে দেবেন। ধুনিয় কাজ সেরে ফিরে এসে দেখেন তার সব তুলা খুল হয়ে গেছে। তিনি মুসলমান হয়ে গেলেন। এন্ড নিজেদের প্রচার করতে লাগলেন মনসুরের বংশধর হিসেবে।
ধুনিয়া,ঢাকা, ১৮৬০
১৮৪০ সালে টেইলর জানাচ্ছেন, তুলাকে বীজ থেকে আলাদা করে ধুনিয়া। শহরে কিছু সংখ্যক লোক আছে যারা তুলা ধুনার জন্য ধনুক তৈরি করে থাকে, এটা তাদের স্বতন্ত্র ব্যবসা।
৯০-এর দিকে, জানাচ্ছেন ওয়াইজ, ঢাকায় যে ক’ঘর ধনিয়া আছে তারা বিহার ও ত্রিভুত থেকে এসেছেন। প্রতিবছর এসব জায়গা থেকে যারা আসেন সিজন অর্থাৎ নভেম্বরের দিকে। আবার চলে যান, কিছু স্থায়ী বসতি বেঁধেছিলেন। ঐ সময় ধুনিয়ারা সারাদিনে আট সের করে ধুনতে পারেন। এর জন্য পান আট আনা। শিমুল তুলা ধুনলে পেতেন সের প্রতি দু’পয়সা।’
দু’দশক আগেও ঢাকার রাস্তার ধুনিয়াদের দেখেছি। এখন এসব পেশা লুপ্ত।
(চলবে)
পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১১৪)