০৭:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
অটিজম নিয়ে নতুন বিতর্ক—‘প্রফাউন্ড অটিজম’ কি আলাদা স্বীকৃতি পাওয়ার সময় এসেছে? চ্যাটজিপিটি যুগে অনলাইন খুচরা ব্যবসার চ্যালেঞ্জ—সহজ কেনাকাটার সুবিধার আড়ালে বিপণনকারীদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা লুভ্র মিউজিয়ামে চাঞ্চল্যকর চুরি—মূল লক্ষ্য ছিল না শিল্পকর্ম, বরং মূল্যবান রত্ন ও ধাতু তালেবান শাসনে আফগান গায়িকা নাগমার দৃঢ় কণ্ঠে স্বাধীনতার আহ্বান আমেরিকান তেল কোম্পানি শেভরনের হাত ধরে টিকে আছে ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি বকেয়া বেতন না পেয়ে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ—গাজীপুরে ঘণ্টাব্যাপী যানজট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় পার্টি ও আইআরআই’র বৈঠকঃ জিএম কাদেরের স্পষ্ট বার্তা—‘বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোট সম্ভব নয়’ চাকরি, ঋণ ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় জেনারেশন জেডের আর্থিক লড়াই বিজ্ঞানীদের সামনে অ্যালঝেইমার প্রতিরোধের নতুন দিগন্ত লেরমো দেল তোরোর নতুন ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’—অস্তিত্ব, ঈশ্বর ও সৃষ্টির দ্বন্দ্বে এক মানবিক চলচ্চিত্র

এই বছরের কালীপূজায় কলকাতা— ঐতিহ্য, আধুনিকতা ও সচেতনতায় এক উৎসবের রূপ

এই বছর কলকাতার কালীপূজা (দুই হাজার পঁচিশ) ছিল অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও বৈচিত্র্যময় ও প্রাণবন্ত। ঐতিহ্যের গভীরতা বজায় রেখে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া, সামাজিক বার্তা ও পরিবেশবান্ধব ভাবনা। কুমোরটুলির মাটির গন্ধ থেকে শুরু করে প্যান্ডালের আলো-রঙ— সবকিছুতেই ছিল নতুনত্ব ও সচেতনতার মেলবন্ধন।


প্রস্তুতির উচ্ছ্বাস ও শহরের সাজসজ্জা

কলকাতার কালীপূজার প্রস্তুতি শুরু হয় দুর্গাপূজার পরপরই। কুমোরটুলির শিল্পীরা দুর্গার পুরোনো কাঠামো পুনঃব্যবহার করে কালীমূর্তি তৈরি করেছেন— যা একদিকে ঐতিহ্য রক্ষা করেছে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব মনোভাবও প্রকাশ করেছে।

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্যান্ডালগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আলোকসজ্জায় ব্যবহার হয়েছে বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী সরঞ্জাম, যা প্রদর্শন করেছে শহরের সচেতনতার নতুন দৃষ্টান্ত। ভূত চতুর্দশীর রাত থেকেই শুরু হয় আলপনা, প্রদীপ, নতুন পোশাক ও প্রসাদ প্রস্তুতির রীতিমাফিক আয়োজন।


উপাসনা ও রীতিনীতির গভীরতা

অমাবস্যার নিশিথকালে ঘণ্টাধ্বনি, মন্ত্রোচ্চারণ ও ধূপের সুবাসে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দেবী কালী আরাধনার আবহ। ভক্তরা মিষ্টি, ফুল, চাল-ডাল ও ভোগ নিবেদন করেন। কোথাও কোথাও পুরোনো তান্ত্রিক রীতির আভাস থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় শান্ত, প্রতীকী পূজাই মুখ্য ছিল।

রাতভর জেগে ধূপবাতি, গান, আরতির মাধ্যমে ভক্তরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছেন শক্তি ও সুরক্ষার আশায়। দেবীকে ভয় নয়, বরং শক্তি, সাহস ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করাই ছিল উপাসনার মূল দর্শন।


সামাজিক মিলন ও সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

এই বছর কালীপূজার অন্যতম বিশেষ দিক ছিল পারস্পরিক মিলন। বহু প্যান্ডালে দেখা গেছে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের একসাথে অংশগ্রহণ। মসজিদপাড়া, ব্যস্ত বাজার কিংবা উপকণ্ঠ— সর্বত্রই ছিল মিলনমেলার আবহ।

কলকাতা পুলিশও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বিশেষ পরিকল্পনায়। বাজি ও আকাশলণ্ঠন ব্যবহারে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয় রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত, যাতে উৎসবের আনন্দ বজায় থাকলেও দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।


পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক

এই বছরের প্যান্ডালগুলোর সাজসজ্জায় স্পষ্ট ছিল পরিবেশ সচেতনতা। মাটির মূর্তি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাঠামো, ও সীমিত বাজি ব্যবহারে উৎসব পেয়েছে নতুন রূপ। ছোট-বড় দোকান, আলোকসজ্জা ব্যবসায়ী ও হস্তশিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন— যার ফলে স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

তবে অনেক জায়গায় ঐতিহ্যবাহী বাজি বা উচ্চ শব্দের আয়োজন সীমিত করা হয়েছে, যাতে দূষণ ও শব্দপ্রদূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।


অনুভূতি ও উৎসবের মনোভাব

কালীপূজার এই রাত কলকাতাকে রঙ, আলো, ধূপ ও মন্ত্রে রূপান্তরিত করেছে এক মায়াময় আবহে। ভক্তরা বলছেন— এই পূজার মধ্য দিয়ে তারা আত্মচিন্তা ও আত্মশক্তি অর্জনের এক নতুন উপলব্ধি পেয়েছেন।

যদিও আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল, তবু এবারের উৎসবের বার্তা ছিল দায়িত্বশীলতার। মানুষ আনন্দ করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে পরিবেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের কথাও মনে রেখেছে।


বিশেষ মুহূর্ত ও স্মৃতিচারণ

রাত আটটা থেকে দশটার মধ্যবর্তী সময়ে আকাশ আলোকিত হয়েছে বাজির ঝলকে, আর রাস্তাজুড়ে দেখা গেছে পরিবার, বন্ধু, শিশুদের উচ্ছ্বাস। অনেক পর্যটক ও শহরবাসী যাঁরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন না, তারাও এই বছরের উৎসবে আকৃষ্ট হয়েছেন।

ভোরবেলায় মণ্ডপসমাপ্তি ও মূর্তি-বিসর্জনের আগে ভক্তদের মধ্যে ছিল এক শান্ত, সন্তুষ্ট ও মিলনের আবহ— যেন আনন্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আত্মার প্রশান্তি।


এই বছরের কলকাতার কালীপূজা ছিল এক অনন্য মেলবন্ধন— ঐতিহ্য, আধুনিকতা ও সচেতনতার। মন্দির থেকে প্যান্ডাল, আলো থেকে প্রার্থনা— সর্বত্রই ছিল নতুন ভাবনার ছোঁয়া। শহরজুড়ে উৎসবের রঙ ছিল প্রাণবন্ত, তবে তার ভেতরে লুকিয়ে ছিল দায়িত্ব, একাত্মতা ও পরিবর্তনের বার্তা।


#tকলকাতা, কালীপূজা, কালিঘাট, উৎসব, ঐতিহ্য, পরিবেশবান্ধব, সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

অটিজম নিয়ে নতুন বিতর্ক—‘প্রফাউন্ড অটিজম’ কি আলাদা স্বীকৃতি পাওয়ার সময় এসেছে?

এই বছরের কালীপূজায় কলকাতা— ঐতিহ্য, আধুনিকতা ও সচেতনতায় এক উৎসবের রূপ

০১:২৯:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

এই বছর কলকাতার কালীপূজা (দুই হাজার পঁচিশ) ছিল অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আরও বৈচিত্র্যময় ও প্রাণবন্ত। ঐতিহ্যের গভীরতা বজায় রেখে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া, সামাজিক বার্তা ও পরিবেশবান্ধব ভাবনা। কুমোরটুলির মাটির গন্ধ থেকে শুরু করে প্যান্ডালের আলো-রঙ— সবকিছুতেই ছিল নতুনত্ব ও সচেতনতার মেলবন্ধন।


প্রস্তুতির উচ্ছ্বাস ও শহরের সাজসজ্জা

কলকাতার কালীপূজার প্রস্তুতি শুরু হয় দুর্গাপূজার পরপরই। কুমোরটুলির শিল্পীরা দুর্গার পুরোনো কাঠামো পুনঃব্যবহার করে কালীমূর্তি তৈরি করেছেন— যা একদিকে ঐতিহ্য রক্ষা করেছে, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব মনোভাবও প্রকাশ করেছে।

শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্যান্ডালগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আলোকসজ্জায় ব্যবহার হয়েছে বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী সরঞ্জাম, যা প্রদর্শন করেছে শহরের সচেতনতার নতুন দৃষ্টান্ত। ভূত চতুর্দশীর রাত থেকেই শুরু হয় আলপনা, প্রদীপ, নতুন পোশাক ও প্রসাদ প্রস্তুতির রীতিমাফিক আয়োজন।


উপাসনা ও রীতিনীতির গভীরতা

অমাবস্যার নিশিথকালে ঘণ্টাধ্বনি, মন্ত্রোচ্চারণ ও ধূপের সুবাসে শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দেবী কালী আরাধনার আবহ। ভক্তরা মিষ্টি, ফুল, চাল-ডাল ও ভোগ নিবেদন করেন। কোথাও কোথাও পুরোনো তান্ত্রিক রীতির আভাস থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় শান্ত, প্রতীকী পূজাই মুখ্য ছিল।

রাতভর জেগে ধূপবাতি, গান, আরতির মাধ্যমে ভক্তরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছেন শক্তি ও সুরক্ষার আশায়। দেবীকে ভয় নয়, বরং শক্তি, সাহস ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করাই ছিল উপাসনার মূল দর্শন।


সামাজিক মিলন ও সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

এই বছর কালীপূজার অন্যতম বিশেষ দিক ছিল পারস্পরিক মিলন। বহু প্যান্ডালে দেখা গেছে হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের একসাথে অংশগ্রহণ। মসজিদপাড়া, ব্যস্ত বাজার কিংবা উপকণ্ঠ— সর্বত্রই ছিল মিলনমেলার আবহ।

কলকাতা পুলিশও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে বিশেষ পরিকল্পনায়। বাজি ও আকাশলণ্ঠন ব্যবহারে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয় রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত, যাতে উৎসবের আনন্দ বজায় থাকলেও দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।


পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক

এই বছরের প্যান্ডালগুলোর সাজসজ্জায় স্পষ্ট ছিল পরিবেশ সচেতনতা। মাটির মূর্তি, পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাঠামো, ও সীমিত বাজি ব্যবহারে উৎসব পেয়েছে নতুন রূপ। ছোট-বড় দোকান, আলোকসজ্জা ব্যবসায়ী ও হস্তশিল্পীরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন— যার ফলে স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

তবে অনেক জায়গায় ঐতিহ্যবাহী বাজি বা উচ্চ শব্দের আয়োজন সীমিত করা হয়েছে, যাতে দূষণ ও শব্দপ্রদূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।


অনুভূতি ও উৎসবের মনোভাব

কালীপূজার এই রাত কলকাতাকে রঙ, আলো, ধূপ ও মন্ত্রে রূপান্তরিত করেছে এক মায়াময় আবহে। ভক্তরা বলছেন— এই পূজার মধ্য দিয়ে তারা আত্মচিন্তা ও আত্মশক্তি অর্জনের এক নতুন উপলব্ধি পেয়েছেন।

যদিও আনন্দ সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল, তবু এবারের উৎসবের বার্তা ছিল দায়িত্বশীলতার। মানুষ আনন্দ করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে পরিবেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের কথাও মনে রেখেছে।


বিশেষ মুহূর্ত ও স্মৃতিচারণ

রাত আটটা থেকে দশটার মধ্যবর্তী সময়ে আকাশ আলোকিত হয়েছে বাজির ঝলকে, আর রাস্তাজুড়ে দেখা গেছে পরিবার, বন্ধু, শিশুদের উচ্ছ্বাস। অনেক পর্যটক ও শহরবাসী যাঁরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন না, তারাও এই বছরের উৎসবে আকৃষ্ট হয়েছেন।

ভোরবেলায় মণ্ডপসমাপ্তি ও মূর্তি-বিসর্জনের আগে ভক্তদের মধ্যে ছিল এক শান্ত, সন্তুষ্ট ও মিলনের আবহ— যেন আনন্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আত্মার প্রশান্তি।


এই বছরের কলকাতার কালীপূজা ছিল এক অনন্য মেলবন্ধন— ঐতিহ্য, আধুনিকতা ও সচেতনতার। মন্দির থেকে প্যান্ডাল, আলো থেকে প্রার্থনা— সর্বত্রই ছিল নতুন ভাবনার ছোঁয়া। শহরজুড়ে উৎসবের রঙ ছিল প্রাণবন্ত, তবে তার ভেতরে লুকিয়ে ছিল দায়িত্ব, একাত্মতা ও পরিবর্তনের বার্তা।


#tকলকাতা, কালীপূজা, কালিঘাট, উৎসব, ঐতিহ্য, পরিবেশবান্ধব, সারাক্ষণ_রিপোর্ট