গাড়ি শেষ, ব্যাটারি শেষ নয়
জাপান ও ইউরোপ এখন এমন এক যৌথ ডেটা সিস্টেম বানাচ্ছে যাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির পুরো জীবনপথ ট্র্যাক করা যায় — কোন খনি থেকে ধাতু এসেছে, কোন কারখানায় সেল হয়েছে, গাড়ি স্ক্র্যাপ হলে ব্যাটারি কোথায় গেল, শেষ পর্যন্ত কীভাবে ধাতু উদ্ধার হলো। লক্ষ্য শুধু পরিবেশ রক্ষা নয়; এটা সরাসরি কাঁচামালের নিরাপত্তা। লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্টের মতো ব্যয়বহুল ও কৌশলগত ধাতু যেন দ্বিতীয়বার নিজেদের শিল্পেই ফিরে আসে, অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী সরবরাহকারীর হাতে না যায়। এইভাবে টোকিও ও ব্রাসেলস বলতে চায়, “আমরা শুধু নতুন ব্যাটারি বানাই না, পুরোনোটার ভেতরের ধাতুও নিজেদের ঘরে রাখি।”
ইলেকট্রিক ভেহিকল বা ইভি বিক্রি আগের বিস্ফোরক গতির চেয়ে কিছুটা ধীরে চলছে, কিন্তু ব্যাটারির চাহিদা থামবে না — কারণ ব্যাটারি শুধু গাড়িতে নয়, গ্রিড স্টোরেজ, কারখানার ব্যাকআপ পাওয়ার, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির ভারসাম্য রাখতে দরকার। ইউরোপ ইতিমধ্যে এমন নিয়মের দিকে যাচ্ছে যেখানে রিসাইক্লিং রেট বাধ্যতামূলক হবে এবং সরবরাহ চেইন ট্রেস করা লাগবে। জাপান, যে অনেকদিন হাইব্রিডকে অগ্রাধিকার দিত, এখন বলছে “আমরা ফুল ব্যাটারি ইকোসিস্টেমও সামলাতে পারি।”
সবুজ ভাবমূর্তি থেকে জাতীয় নিরাপত্তা
এই পুনর্ব্যবহার কৌশলকে একধরনের বীমা হিসেবেও দেখা হচ্ছে। নিজেরা যদি পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে ধাতু তুলতে পারে, জাপান ও ইউরোপ তখন কম নির্ভরশীল থাকবে অস্থির বৈশ্বিক খনিজ বাজারের ওপর। একই সঙ্গে তারা দাবি করতে পারবে যে তাদের সবুজ জ্বালানি রূপান্তর শুধুই “আমাদের রাস্তাঘাট পরিষ্কার, কিন্তু অন্য দেশে খনির ক্ষতি” — এমন ভণ্ডামি নয়।
অবশ্য এটা সস্তা কাজ না। মহাদেশ-জুড়ে ব্যাটারি ট্র্যাকিং, লজিস্টিকস আর রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট দাঁড় করাতে বড় বিনিয়োগ লাগবে। ছোট সাপ্লায়াররা চাপ অনুভব করবে। নীতিনির্ধারকেরা জবাব দিচ্ছেন: বিকল্প কী? যদি এখনই লুপ না বানানো হয়, তবে কয়েক বছরের মধ্যে একই লিথিয়াম আবার উঁচু দামে বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। কথাটা পরিষ্কার — ব্যাটারি রিসাইক্লিং এখন শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নয়; এটা জ্বালানি নিরাপত্তা ও শিল্প নীতির মিশ্রণ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















