১০:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
পরবর্তী পাঁচ বছরে ঘরোয়া ভোগব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি চীনের ভয়াবহ এক আত্মজীবনী—যৌন নির্যাতন, ক্ষমতার অন্ধকার এবং এক নারীর করুণ লড়াইয়ের কাহিনি চীনের নারী দর্শকশক্তি বদলে দিচ্ছে দেশটির চলচ্চিত্রজগৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৫) ঢাকার অর্থনীতির ৫৬ শতাংশ উৎপাদন খাতে—ডিসিসিআই প্রতিবেদন শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে ১৮ শতাংশ এশিয়া সফরে ট্রাম্প—চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা ইসলামাবাদ–কাবুল দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে নীতিগত সহায়তা ও ভর্তুকি চায় প্রকাশকরা বাংলাদেশের ৩১৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ উপজেলা শনাক্ত, ১৩৯টি ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’

অন্ধকার পদার্থের অস্তিত্ব প্রমাণে আরও এক ধাপ এগোলেন বিজ্ঞানীরা

মহাবিশ্বে অদৃশ্য পদার্থের খোঁজ

ওয়াশিংটন: বিজ্ঞানীরা অন্ধকার পদার্থের অস্তিত্ব প্রমাণের আরও এক ধাপ কাছাকাছি পৌঁছেছেন। মহাবিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ অংশজুড়ে থাকা এই রহস্যময় পদার্থকে ঘিরে নতুন আশা জাগিয়েছে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কাছাকাছি গামা রশ্মির অস্পষ্ট আলোকচ্ছটা নিয়ে করা গবেষণা।

অন্ধকার পদার্থ কী

আমাদের চারপাশের সব দৃশ্যমান বস্তু—গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এমনকি মানুষ—তৈরি হয়েছে সাধারণ পদার্থ দিয়ে। এটি মহাবিশ্বের মোট উপাদানের মাত্র ৫%। এর বিপরীতে, অন্ধকার পদার্থ (ডার্ক ম্যাটার) দৃশ্যমান নয়, কারণ এটি কোনো আলো প্রতিফলিত, শোষণ বা নির্গত করে না। ধারণা করা হয়, এটি মহাবিশ্বের প্রায় ২৭% তৈরি করে, আর বাকি ৬৮% হলো অজানা এক শক্তি—অন্ধকার শক্তি (ডার্ক এনার্জি)।

গামা রশ্মিতে রহস্যের সূত্র

নাসার ফের্মি গামা-রে স্পেস টেলিস্কোপে পর্যবেক্ষিত অতিরিক্ত গামা রশ্মির আলোকচ্ছটা বিজ্ঞানীদের নতুন ধারণা দিয়েছে। এই রশ্মির উৎস সম্পর্কে দুটি সম্ভাবনা উত্থাপিত হয়েছে—

Scientists move closer to confirming existence of dark matter | KSL.com

১. মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সংঘর্ষরত অন্ধকার পদার্থের কণিকা থেকে এ রশ্মি নির্গত হচ্ছে।

২. অথবা, এটি উৎপন্ন হচ্ছে ‘মিলিসেকেন্ড পালসার’ নামক নিউট্রন তারাগুলোর ঘূর্ণন থেকে। এই তারাগুলো তাদের মৃত্যুর পর অবশিষ্ট থাকা ঘন কেন্দ্র, যা প্রতি সেকেন্ডে শতবার ঘুরে আলো নির্গত করে।

নতুন গবেষণার ফলাফল

সাম্প্রতিক এক বিশদ বিশ্লেষণে দেখা গেছে—উন্নত সিমুলেশনের মাধ্যমে দুটি তত্ত্বই প্রায় সমানভাবে সম্ভব। ফের্মি স্যাটেলাইটে পর্যবেক্ষিত গামা রশ্মির তীব্রতা ও বিন্যাস অন্ধকার পদার্থের কণিকাগুলোর সংঘর্ষজনিত বিকিরণের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।

“অন্ধকার পদার্থের প্রকৃতি বোঝা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম বড় রহস্য,” বলেন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিজ্ঞানী জোসেফ সিল্ক। তাঁর ভাষায়, “আমাদের নতুন ফলাফল দেখায়—অন্ধকার পদার্থের ব্যাখ্যা নিউট্রন তারকা তত্ত্বের মতোই সম্ভাবনাময়। এর অর্থ, আমরা সম্ভবত অন্ধকার পদার্থকে পরোক্ষভাবে সনাক্ত করতে পেরেছি।”

What is dark matter? | Live Science

ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

চিলিতে নির্মাণাধীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্থলভিত্তিক গামা রশ্মি পর্যবেক্ষণাগার—‘চেরেনকভ টেলিস্কোপ অ্যারে’—২০২৬ সালেই চালু হতে পারে। এটি এই দুই উৎসের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

“অন্ধকার পদার্থ আলো নির্গত বা বাধা দেয় না, তাই আমরা কেবল এর মাধ্যাকর্ষণ প্রভাবের মাধ্যমেই এর অস্তিত্ব টের পাই,” বলেন গবেষণার প্রধান লেখক এবং টার্টু বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মুরিটস মিহকেল মুরু।

মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পর্যবেক্ষণ

গামা রশ্মির এই অতিরিক্ত উপস্থিতি দেখা গেছে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় ৭,০০০ আলোকবর্ষজুড়ে এক অঞ্চলে। পৃথিবী থেকে এই অঞ্চল প্রায় ২৬,০০০ আলোকবর্ষ দূরে। এক আলোকবর্ষ হলো আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে—প্রায় ৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার।

Dark matter detected dangling from the cosmic web for 1st time | Space

সংঘর্ষ ও উৎপন্ন শক্তি

গামা রশ্মি হলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের সবচেয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও সর্বাধিক শক্তিশালী রূপ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, অন্ধকার পদার্থের কণিকাগুলো নিজেদের বিপরীত কণিকার সঙ্গে সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে গামা রশ্মি তৈরি করে।

সিল্ক বলেন, “মহাকর্ষের টানে অন্ধকার ও সাধারণ পদার্থের বিশাল মেঘ ধসে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণ পদার্থ কেন্দ্রে নেমে আসার সময় কিছু অন্ধকার পদার্থকেও সঙ্গে টেনে এনেছিল।”

তিনি আরও যোগ করেন, “সবচেয়ে সরল তত্ত্ব অনুযায়ী, অন্ধকার পদার্থের কণিকা নিজেরই অ্যান্টিকণিকা হিসেবে কাজ করে। সংঘর্ষ ঘটলে তারা পুরোপুরি ধ্বংস হয় এবং এর ফলেই গামা রশ্মি তৈরি হয়।”

বিকল্প ব্যাখ্যা

তবে বিজ্ঞানীরা এটাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না যে এই আলো অনেকগুলো অদেখা মিলিসেকেন্ড পালসারের সম্মিলিত বিকিরণ থেকেও আসতে পারে। ফের্মি স্যাটেলাইটের পর্যবেক্ষণ ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে এই তারাগুলো গামা রশ্মির উৎস হতে পারে।

 

#মহাকাশবিজ্ঞান,# অন্ধকার_#পদার্থ, #গামা_#রশ্মি,# মিল্কিওয়ে, #গবেষণা, #পদার্থবিজ্ঞান# সারাক্ষণ রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

পরবর্তী পাঁচ বছরে ঘরোয়া ভোগব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি চীনের

অন্ধকার পদার্থের অস্তিত্ব প্রমাণে আরও এক ধাপ এগোলেন বিজ্ঞানীরা

০৫:০৩:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

মহাবিশ্বে অদৃশ্য পদার্থের খোঁজ

ওয়াশিংটন: বিজ্ঞানীরা অন্ধকার পদার্থের অস্তিত্ব প্রমাণের আরও এক ধাপ কাছাকাছি পৌঁছেছেন। মহাবিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ অংশজুড়ে থাকা এই রহস্যময় পদার্থকে ঘিরে নতুন আশা জাগিয়েছে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের কাছাকাছি গামা রশ্মির অস্পষ্ট আলোকচ্ছটা নিয়ে করা গবেষণা।

অন্ধকার পদার্থ কী

আমাদের চারপাশের সব দৃশ্যমান বস্তু—গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এমনকি মানুষ—তৈরি হয়েছে সাধারণ পদার্থ দিয়ে। এটি মহাবিশ্বের মোট উপাদানের মাত্র ৫%। এর বিপরীতে, অন্ধকার পদার্থ (ডার্ক ম্যাটার) দৃশ্যমান নয়, কারণ এটি কোনো আলো প্রতিফলিত, শোষণ বা নির্গত করে না। ধারণা করা হয়, এটি মহাবিশ্বের প্রায় ২৭% তৈরি করে, আর বাকি ৬৮% হলো অজানা এক শক্তি—অন্ধকার শক্তি (ডার্ক এনার্জি)।

গামা রশ্মিতে রহস্যের সূত্র

নাসার ফের্মি গামা-রে স্পেস টেলিস্কোপে পর্যবেক্ষিত অতিরিক্ত গামা রশ্মির আলোকচ্ছটা বিজ্ঞানীদের নতুন ধারণা দিয়েছে। এই রশ্মির উৎস সম্পর্কে দুটি সম্ভাবনা উত্থাপিত হয়েছে—

Scientists move closer to confirming existence of dark matter | KSL.com

১. মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে সংঘর্ষরত অন্ধকার পদার্থের কণিকা থেকে এ রশ্মি নির্গত হচ্ছে।

২. অথবা, এটি উৎপন্ন হচ্ছে ‘মিলিসেকেন্ড পালসার’ নামক নিউট্রন তারাগুলোর ঘূর্ণন থেকে। এই তারাগুলো তাদের মৃত্যুর পর অবশিষ্ট থাকা ঘন কেন্দ্র, যা প্রতি সেকেন্ডে শতবার ঘুরে আলো নির্গত করে।

নতুন গবেষণার ফলাফল

সাম্প্রতিক এক বিশদ বিশ্লেষণে দেখা গেছে—উন্নত সিমুলেশনের মাধ্যমে দুটি তত্ত্বই প্রায় সমানভাবে সম্ভব। ফের্মি স্যাটেলাইটে পর্যবেক্ষিত গামা রশ্মির তীব্রতা ও বিন্যাস অন্ধকার পদার্থের কণিকাগুলোর সংঘর্ষজনিত বিকিরণের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়।

“অন্ধকার পদার্থের প্রকৃতি বোঝা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম বড় রহস্য,” বলেন জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশবিজ্ঞানী জোসেফ সিল্ক। তাঁর ভাষায়, “আমাদের নতুন ফলাফল দেখায়—অন্ধকার পদার্থের ব্যাখ্যা নিউট্রন তারকা তত্ত্বের মতোই সম্ভাবনাময়। এর অর্থ, আমরা সম্ভবত অন্ধকার পদার্থকে পরোক্ষভাবে সনাক্ত করতে পেরেছি।”

What is dark matter? | Live Science

ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

চিলিতে নির্মাণাধীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী স্থলভিত্তিক গামা রশ্মি পর্যবেক্ষণাগার—‘চেরেনকভ টেলিস্কোপ অ্যারে’—২০২৬ সালেই চালু হতে পারে। এটি এই দুই উৎসের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

“অন্ধকার পদার্থ আলো নির্গত বা বাধা দেয় না, তাই আমরা কেবল এর মাধ্যাকর্ষণ প্রভাবের মাধ্যমেই এর অস্তিত্ব টের পাই,” বলেন গবেষণার প্রধান লেখক এবং টার্টু বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী মুরিটস মিহকেল মুরু।

মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পর্যবেক্ষণ

গামা রশ্মির এই অতিরিক্ত উপস্থিতি দেখা গেছে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় ৭,০০০ আলোকবর্ষজুড়ে এক অঞ্চলে। পৃথিবী থেকে এই অঞ্চল প্রায় ২৬,০০০ আলোকবর্ষ দূরে। এক আলোকবর্ষ হলো আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে—প্রায় ৯.৫ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার।

Dark matter detected dangling from the cosmic web for 1st time | Space

সংঘর্ষ ও উৎপন্ন শক্তি

গামা রশ্মি হলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের সবচেয়ে ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও সর্বাধিক শক্তিশালী রূপ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, অন্ধকার পদার্থের কণিকাগুলো নিজেদের বিপরীত কণিকার সঙ্গে সংঘর্ষে ধ্বংস হয়ে গামা রশ্মি তৈরি করে।

সিল্ক বলেন, “মহাকর্ষের টানে অন্ধকার ও সাধারণ পদার্থের বিশাল মেঘ ধসে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সৃষ্টি হয়েছিল। সাধারণ পদার্থ কেন্দ্রে নেমে আসার সময় কিছু অন্ধকার পদার্থকেও সঙ্গে টেনে এনেছিল।”

তিনি আরও যোগ করেন, “সবচেয়ে সরল তত্ত্ব অনুযায়ী, অন্ধকার পদার্থের কণিকা নিজেরই অ্যান্টিকণিকা হিসেবে কাজ করে। সংঘর্ষ ঘটলে তারা পুরোপুরি ধ্বংস হয় এবং এর ফলেই গামা রশ্মি তৈরি হয়।”

বিকল্প ব্যাখ্যা

তবে বিজ্ঞানীরা এটাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না যে এই আলো অনেকগুলো অদেখা মিলিসেকেন্ড পালসারের সম্মিলিত বিকিরণ থেকেও আসতে পারে। ফের্মি স্যাটেলাইটের পর্যবেক্ষণ ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছে যে এই তারাগুলো গামা রশ্মির উৎস হতে পারে।

 

#মহাকাশবিজ্ঞান,# অন্ধকার_#পদার্থ, #গামা_#রশ্মি,# মিল্কিওয়ে, #গবেষণা, #পদার্থবিজ্ঞান# সারাক্ষণ রিপোর্ট