বই শিল্পে টিকে থাকার লড়াই
দেশে কাগজ ও মুদ্রণ ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বই শিল্পকে গভীর সংকটে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রকাশক ও বই ব্যবসায়ীরা সরকারকে ব্যাংক ঋণে ভর্তুকি ও নীতিগত সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে বই শিল্প টিকে থাকতে পারে এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যে ভূমিকা রাখতে পারে।
এই দাবি জানানো হয় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস)-এর ঢাকা শাখার ৪২তম বার্ষিক সাধারণ সভায়, যা শনিবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকাশকদের সংকট ও সরকারের প্রতি আহ্বান
সভায় বক্তারা জানান, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রকাশনা খাতে উদ্যোক্তারা টিকে থাকার জন্য কঠিন সংগ্রাম করছেন। বক্তারা মনে করেন, সৃজনশীল বই প্রকাশ কেবল বাণিজ্যিক কার্যক্রম নয়, বরং এটি সমাজসেবার অংশ—তাই সরকারের সরাসরি ভর্তুকি প্রয়োজন।
বাংলা একাডেমি মহাপরিচালকের বক্তব্য
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। তিনি বলেন, নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার মানুষের পাঠাভ্যাসে পরিবর্তন আনছে, তবুও বই পড়া জ্ঞান অর্জনের এক শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে টিকে থাকবে। এজন্য মানসম্মত বই প্রকাশ অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশ্বের প্রায় ২০০ ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়—যা প্রমাণ করে বাংলা ভাষার শক্ত অবস্থান। তাঁর মতে, ভালো বই প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে, যদি প্রকাশক ও বিক্রেতারা সততা ও নৈতিকতা বজায় রাখেন।
বিক্রয় বৃদ্ধিতে নতুন প্রস্তাব
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বই বিক্রি বাড়াতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেন—
ছোট প্রকাশকদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্বল্পমূল্যে স্টল বরাদ্দ দেওয়া।
জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে বিনা মূল্যে বইমেলা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া।
তিনি বলেন, বেশি সংখ্যক বইমেলা আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের বই-সংস্পর্শ বাড়বে, নতুন পাঠক তৈরি হবে এবং বিক্রয়ও বাড়বে।
একুশে বইমেলা নিয়ে উদ্বেগ
সভায় প্রকাশকরা একুশে বইমেলার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন এবং এ বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্তের আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্য ও উপস্থিত অতিথিরা
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাপুস ঢাকা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নেছার উদ্দিন হাওলাদার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এস. এম. লুৎফর রহমান ও মাহমুদ হাসান বিপ্লব।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বাপুস কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান, মোহাম্মদ গোলাম এলাহী জাহেদ, মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, মো. আলমগীর, কাজী শাহ আলম, শেখ আজিজুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ আবু সাঈদ।
বক্তারা একমত হন যে, সৃজনশীল বই প্রকাশ ও বিক্রির মাধ্যমে কেবল ব্যবসা নয়, বরং জ্ঞানচর্চা, নৈতিকতা ও সামাজিক অগ্রগতির ভিত্তি গড়ে ওঠে। তাই প্রকাশনা শিল্পে নীতিগত সহায়তা এখন সময়ের দাবি।
#বাংলাদেশ #প্রকাশনা_শিল্প #বইমেলা #বাপুস #বাংলা_একাডেমি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















