প্রাচীন স্থাপত্য গবেষণায় নতুন দিগন্ত
চীনা ও যুক্তরাজ্যের গবেষকরা সম্রাট শীন শি হুয়াংয়ের সমাধি থেকে উদ্ধারকৃত কাঠের স্থাপত্য অবশেষ নিয়ে প্রথম পদ্ধতিগত গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। এই কার্বনকৃত কাঠের নিদর্শনগুলো থেকে জানা গেছে, খ্রিস্টপূর্ব ২২১ থেকে ২০৬ সালের মধ্যে শীন রাজবংশ কীভাবে কাঠের সম্পদ ব্যবহার করেছিল। গবেষণাটি সে সময়ের সম্পদ আহরণ, শ্রম সংগঠন এবং নির্মাণ প্রক্রিয়ার ওপরও আলোকপাত করে—বুধবার সম্রাট শীন শি হুয়াংয়ের সমাধি জাদুঘর থেকে গ্লোবাল টাইমসকে এ তথ্য জানানো হয়।
কাঠের নমুনা ও উৎস
গবেষণায় সমাধির বিভিন্ন সহায়ক গর্ত থেকে সংগৃহীত ৬৫৭টি কার্বনকৃত কাঠের নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে বিখ্যাত টেরাকোটা যোদ্ধাদের গর্ত ১ ও ২, অ্যাক্রোবেট গর্ত এবং পাথরের বর্মের গর্ত অন্তর্ভুক্ত। নমুনাগুলো ছিল বিম, খুঁটি ও মেঝের কাঠসহ নানা ধরনের স্থাপত্য উপাদান, যা একসময়ে সম্রাট শীন শি হুয়াংয়ের বিশাল কাঠের স্থাপত্যকে ধারণ করত।
গবেষকদের মতে, এসব স্থাপনায় ব্যবহৃত কাঠের বেশিরভাগই ছিল গাঢ় রঙের শঙ্কুযুক্ত বৃক্ষ যেমন ফার, স্প্রুস ও হেমলক—যেগুলো পাইন পরিবারের সদস্য। পাশাপাশি অল্প পরিমাণে সাইপ্রেস, পাইন, সিডার ও কর্পূর গাছের কাঠও পাওয়া গেছে। কাঠের প্রজাতির বৈচিত্র্য গর্তভেদে পরিবর্তিত হয়েছে: পাথরের বর্মের গর্তে সাইপ্রেসের ব্যবহার বেশি; অ্যাক্রোবেট গর্তে ফার ও স্প্রুস প্রাধান্য পেয়েছে; আর টেরাকোটা যোদ্ধাদের গর্তে মূলত ফার, স্প্রুস ও হেমলক ব্যবহৃত হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠের ধরন ও স্থাপত্য কাঠামোর মধ্যে কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, কাঠের বৈচিত্র্য নির্মাণগত পার্থক্য বা সংরক্ষণের অবস্থার কারণে নয়, বরং উৎস বা সংগ্রহ প্রক্রিয়ার ভিন্নতার ফল।
কাঠ সংগ্রহের ভূগোল
জাদুঘরের এক গবেষক জানান, এসব গাঢ় শঙ্কুযুক্ত গাছ সাধারণত উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে জন্মে। বিশেষত ফার কাঠের আধিক্য ইঙ্গিত দেয় যে কাঠের একটি বড় অংশ এসেছে উঁচু পর্বতমালা থেকে। তিনি বলেন, “নিকটবর্তী লিশান পর্বত এই প্রজাতির গাছের উপযোগী নয়। পূর্ব শীনলিং পর্বতমালার উচ্চ চূড়াগুলো সম্ভবত কাঠের প্রধান উৎস ছিল। তবে কাঠ পরিবহন মূলত নির্ভর করত যাতায়াত ব্যয় ও লজিস্টিকসের ওপর।”
অন্যদিকে সাইপ্রেস গাছ, যা নিচু ভূমিতে জন্মায়, তা পরবর্তী নির্মাণ পর্যায়ে বেশি দেখা গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ অনুযায়ী, সমাধি কমপ্লেক্সের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে কাঠ সংগ্রহের অঞ্চল ধীরে ধীরে উচ্চতর পাহাড়ি এলাকায় স্থানান্তরিত হয়। এটি বৃহৎ পরিসরে বননিধনের প্রমাণ দেয়, যা পরিবেশ ও উদ্ভিদবিন্যাসে শীন যুগের প্রভাবকে প্রতিফলিত করে।

ঐতিহাসিক ও পরিবেশগত তাৎপর্য
চীনা সাংস্কৃতিক নিদর্শন সমিতির সদস্য লিউ ঝেং বলেন, কাঠ বাছাইয়ের ধরন মূলত আঞ্চলিক প্রাপ্যতাকে প্রতিফলিত করে। তিনি উল্লেখ করেন, পরবর্তী যুগের সাহিত্যকর্ম ওড টু দ্য এপাং প্যালেস কবিতায় শীন রাজবংশের বিলাসবহুল প্রাসাদ নির্মাণ ও শ্রম শোষণের চিত্রায়ণ পাওয়া যায়, যা সেই সময়কার বননিধনের পরোক্ষ সাক্ষ্য হিসেবেও ধরা যেতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে, পরবর্তী সময়ে লোয়েস মালভূমিতে দেখা দেওয়া মাটিক্ষয়ের একটি বড় অংশ শীন আমলের ব্যাপক বননিধনের ফল। এই যৌথ গবেষণা সম্রাটের সমাধি থেকে উদ্ধারযোগ্য সব কাঠের অবশেষের প্রথম বিস্তৃত বিশ্লেষণ। আগের ক্ষুদ্র-নমুনা গবেষণার তুলনায় এটি কাঠ বাছাই ও ব্যবহার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা দেয়।
গবেষকরা বলেন, এই ফলাফল শুধু প্রাচীন চীনের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী স্থাপত্য প্রকল্পগুলোর নির্মাণ কাঠামো ও সম্পদ ব্যবস্থাপনাই নয়, বরং শীন সাম্রাজ্যের পরিবেশ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির গতিশীল সম্পর্ককেও নতুনভাবে ব্যাখ্যা করে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















