শুরুর গল্প: স্পাইস গার্লসের অনুপ্রেরণায় একদল স্কুলছাত্রী
২০০০ সালের গ্রীষ্মে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা রোসায় চারজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিজেদের পছন্দের ব্যান্ড স্পাইস গার্লসের মতো হতে চেয়েছিল। তারা ছোট একটি অতিথিকক্ষকে পরিণত করে ‘স্টুডিও’-তে, এবং সেখানে সৃষ্টি হয় তাদের কল্পিত পপ গ্রুপ—‘এক্স-সেট্রা’। দলের সদস্যরা ছিলেন আয়ডেন মায়েরি, জেসিকা হল, জ্যানেট ওয়াশবার্ন এবং জ্যানেটের ছোট বোন মেরি ওয়াশবার্ন। মেরি বয়সে ছোট হলেও দলের অপরিহার্য অংশ ছিলেন।
জ্যানেট ও মেরির মা, রবিন ও’ব্রায়েন এবং সৎ বাবা ডন ক্যাম্পাউ দুজনেই সঙ্গীতপ্রেমী ছিলেন। ও’ব্রায়েন নিজেও সঙ্গীতশিল্পী এবং আশির দশক থেকেই ‘হোম টেপিং’ আন্দোলনের অংশ ছিলেন—যেখানে স্বতন্ত্র শিল্পীরা নিজেদের গান রেকর্ড করে ডাকযোগে একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন।
প্রথম অ্যালবাম: পরিবারের সহায়তায় ‘স্টারডাস্ট’

বসন্তেই মেয়েরা তাদের মায়ের কাছে এক অদ্ভুত অনুরোধ করে, তাদের লেখা গানগুলোকে একটি আসল অ্যালবামে রূপ দিতে সাহায্য করতে। ও’ব্রায়েন গুরুত্বসহকারে তাদের সাহায্য করেন। আর ক্যাম্পাউ, যিনি কমিউনিটি রেডিও হোস্ট ও আর্কাইভিস্ট, তিনি তার বন্ধু জার্মান কম্পোজার আখিম ট্রয়ের সঙ্গীতে গানগুলো সাজান। ফলাফল হয় আশ্চর্যভাবে শক্তিশালী: স্পাইস গার্লসের চেয়ে অনেক ভারী সুর, তবুও মোহনীয়।
বছর শেষে মেয়েরা শেষ করে তাদের প্রথম অ্যালবাম, স্টারডাস্ট। কিন্তু তখন তারা স্কুল জীবনের নতুন অনিশ্চয়তায় নিমগ্ন। নিজেদের কণ্ঠ শুনে তারা লজ্জা পায়—তাদের গান শিশুসুলভ মনে হয়। তাই অ্যালবামটি চুপচাপ হারিয়ে যায়।
হারানো অ্যালবাম ফিরে আসে অনলাইনে
পরবর্তী দুই দশকে মেয়েরা সান্তা রোসা ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন শহরে। কিন্তু হঠাৎ তারা জানতে পারে, তাদের হারানো অ্যালবাম স্টারডাস্ট ইন্টারনেটে বেঁচে আছে, ইউটিউব ও অনলাইন ফোরামে তা ছড়িয়ে পড়েছে এবং অজানা ভক্তরা সেটিকে ভালোবেসেছে।
আসলে ক্যাম্পাউ নিজের লেবেল Lonely Whistle Music নামে কিছু কপি পাঠিয়েছিলেন সহকর্মীদের কাছে—প্রায় ৫০ থেকে ১০০টি সিডি। তিনি তা নিজের রেডিও অনুষ্ঠানে প্রচারও করেছিলেন। পরে অ্যালবামটি ইন্টারনেট আর্কাইভে আপলোড হয়। সেখান থেকেই, ‘এক্স-সেট্রা’ ধীরে ধীরে এক বিশেষ গোষ্ঠীর প্রিয় হয়ে ওঠে।
২০০৩ সালে স্বাধীন সঙ্গীত ব্লগ WFMU তাদের ৩৬৫ ডেজ প্রজেক্ট-এর অংশ হিসেবে স্টারডাস্ট নিয়ে লিখে, তারা এটিকে “অদ্ভুত অথচ মায়াময়” বলে আখ্যা দেয়। সেই লেখা থেকেই শুরু হয় এক্স-সেট্রা’র কাল্ট জনপ্রিয়তা।

পুনর্মিলন: একসময়কার বন্ধুদের আবার একসাথে
বছর কয়েক পর জ্যানেট অনলাইনে সেই রিভিউ দেখতে পেয়ে, বাকিদের জানায়। তারা চারজন আবার যোগাযোগ করে—দীর্ঘ দুই দশকের ব্যবধান শেষে। একসময় তারা সিনেমা বানাতো, গান লিখত, কিন্তু কৈশোর পেরিয়ে সেসব থেমে গিয়েছিল। এখন তারা কেউ বিয়ে করেছে, কেউ পরিবার শুরু করেছে, কেউ অন্য শহরে ব্যস্ত।
২৫ বছর পর ‘স্টারডাস্ট’ আবার আলোয়
২০২৩ সালে Numero Group-এর সংগীত প্রযোজক ডগলাস ম্যাকগোয়ান প্রস্তাব দেন স্টারডাস্ট-এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে, সেটি পুনঃপ্রকাশ করার। মেয়েরা সম্মতি জানায়। তারা পুরনো ভিডিও খুঁজে একটি তথ্যচিত্র তৈরির কাজ শুরু করে—আয়ডেন সেই ডকুমেন্টারি প্রযোজনা করেন, যা ইতিমধ্যে বড় উৎসবগুলোতে জমা পড়েছে।
তারা আবার ও’ব্রায়েনের পুরনো ঘরোয়া স্টুডিওতে ফিরে যায়, এবং নতুন গান রেকর্ড করে। বহু বছর পর তারা অনুভব করে সেই একই মুক্তি ও আনন্দ।
জেসিকা বলেন: “একসময় মনে হয়, এত কিছুর মানে কী ছিল? তখন আমার ভেতরের ছোট জেসিকার কণ্ঠ বলে ওঠে: ‘এই, মনে আছে? কত আনন্দ করতাম আমরা।’”
শৈশবের সুরের পুনর্জন্ম
একসময় যারা নিজের গান লুকিয়ে রেখেছিল, আজ তারা সেটিকেই ভালোবাসার চোখে দেখছে। স্টারডাস্ট আর কেবল এক হারানো অ্যালবাম নয়—এটি প্রমাণ যে শিশুকালের স্বপ্ন, কল্পনা আর বন্ধুত্ব সময়ের সঙ্গে মুছে যায় না। বরং সঠিক মুহূর্তে, তারা আবার ফিরে আসে নিজেদের আলোতে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















