১১:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫২) পরবর্তী পাঁচ বছরে ঘরোয়া ভোগব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি চীনের ভয়াবহ এক আত্মজীবনী—যৌন নির্যাতন, ক্ষমতার অন্ধকার এবং এক নারীর করুণ লড়াইয়ের কাহিনি চীনের নারী দর্শকশক্তি বদলে দিচ্ছে দেশটির চলচ্চিত্রজগৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৪৫) ঢাকার অর্থনীতির ৫৬ শতাংশ উৎপাদন খাতে—ডিসিসিআই প্রতিবেদন শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে ১৮ শতাংশ এশিয়া সফরে ট্রাম্প—চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তির চেষ্টা ইসলামাবাদ–কাবুল দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে নীতিগত সহায়তা ও ভর্তুকি চায় প্রকাশকরা

পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীতে বাঁধ দেবে আফগানিস্তান

দ্রুত বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা কুনার নদীতে দ্রুততম সময়ে বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তালেবান নেতারা জানিয়েছেন, আখুন্দজাদা আফগান পানিসম্পদ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় আফগান কোম্পানির সঙ্গেই বাঁধ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করতে—বিদেশি সংস্থার অপেক্ষায় না থেকে।

তালেবানের তথ্য উপমন্ত্রী মুজাহিদ ফারাহি বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে এ নির্দেশের ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে, আফগান জ্বালানি ও পানি মন্ত্রী আবদুল লতিফ মানসুর বলেন, “আফগানরা তাদের নিজস্ব পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার অধিকার রাখে।”


সীমান্ত সংঘর্ষের পটভূমিতে নতুন পদক্ষেপ

এই ঘোষণা আসে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষের অল্প কিছুদিন পর। দুই দেশের মধ্যে ১৯ অক্টোবর কাতার ও তুরকিয়ে-সুবিধাভোগে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে শতাধিক সেনার মৃত্যু ঠেকাতে সহায়তা করে।

সংঘর্ষের সূচনা ঘটে ৯ অক্টোবর পাকিস্তানের বিমান হামলার মাধ্যমে, যা আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর লক্ষ্যবস্তুতে চালানো হয়েছিল।


নদীর ভূরাজনীতি ও ভারতের অবস্থান

কুনার নদী পাকিস্তানের চিয়ানতার হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে আফগানিস্তানের কাবুল নদীতে গিয়ে মিশেছে। এরপর নদীটির পানি পাকিস্তানের ইন্দুস নদীতে প্রবাহিত হয়, যা দেশটির কৃষি, পানীয়জল ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উৎস।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সূত্র জানায়, আফগানিস্তানের কুনার নদীর পানি ব্যবহারের উদ্যোগে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। ভারত ২০১৯ সালে কাবুল নদীতে একটি প্রকল্পে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তবে আশরাফ গনি সরকারের পতনের আগেই সে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়।

কুনার নদীতে বাঁধ, পাকিস্তানমুখী পরিকল্পনা আফগানিস্তানের – শেয়ার বিজ

চুক্তি-শূন্য পাকিস্তান ও পানি ভাগাভাগির ঝুঁকি

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের যেমন স্যালমা বাঁধ বা ‘ভারত-আফগান মৈত্রী বাঁধ’-এর মতো সহযোগিতা আছে, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের এমন কোনো পানি-বণ্টন চুক্তি নেই। ফলে সীমান্ত নদীগুলোর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে তালেবানের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বড় কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এ ঘটনাটি ঘটছে এমন সময়ে, যখন ভারত পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইন্দুস ওয়াটারস চুক্তি স্থগিত করেছে। সেই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’-এর হাতে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।


ভারত-আফগান আলোচনায় পানি সহযোগিতা

চলতি মাসের শুরুতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতের সফরে এসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

১০ অক্টোবর দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত হেরাত প্রদেশে স্যালমা বাঁধের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে আফগানিস্তানকে সহায়তা করেছে—এবং উভয় পক্ষ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব স্বীকার করেছে। তারা আরও সম্মত হয় যে, আফগানিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ও কৃষি উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করা হবে।


বিশ্লেষণ: পানিসম্পদ নিয়ন্ত্রণে নতুন ক্ষমতার বার্তা

তালেবান সরকারের এই উদ্যোগ শুধু পানি ব্যবস্থাপনা নয়, বরং আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিষ্ঠার একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর কুনার নদীতে বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা পাকিস্তানের প্রতি কৌশলগত চাপ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। একইসঙ্গে, এটি আফগানিস্তানের সার্বভৌম পানিসম্পদ নিয়ন্ত্রণের দাবিকে শক্তিশালী করছে—যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার পানি-রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য গড়ে তুলতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৩৫২)

পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীতে বাঁধ দেবে আফগানিস্তান

০৭:৩৬:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

দ্রুত বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা কুনার নদীতে দ্রুততম সময়ে বাঁধ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তালেবান নেতারা জানিয়েছেন, আখুন্দজাদা আফগান পানিসম্পদ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় আফগান কোম্পানির সঙ্গেই বাঁধ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করতে—বিদেশি সংস্থার অপেক্ষায় না থেকে।

তালেবানের তথ্য উপমন্ত্রী মুজাহিদ ফারাহি বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যমে এ নির্দেশের ঘোষণা দেন।
অন্যদিকে, আফগান জ্বালানি ও পানি মন্ত্রী আবদুল লতিফ মানসুর বলেন, “আফগানরা তাদের নিজস্ব পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনার অধিকার রাখে।”


সীমান্ত সংঘর্ষের পটভূমিতে নতুন পদক্ষেপ

এই ঘোষণা আসে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষের অল্প কিছুদিন পর। দুই দেশের মধ্যে ১৯ অক্টোবর কাতার ও তুরকিয়ে-সুবিধাভোগে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে শতাধিক সেনার মৃত্যু ঠেকাতে সহায়তা করে।

সংঘর্ষের সূচনা ঘটে ৯ অক্টোবর পাকিস্তানের বিমান হামলার মাধ্যমে, যা আফগান ভূখণ্ডে পাকিস্তানভিত্তিক সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর লক্ষ্যবস্তুতে চালানো হয়েছিল।


নদীর ভূরাজনীতি ও ভারতের অবস্থান

কুনার নদী পাকিস্তানের চিয়ানতার হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে আফগানিস্তানের কাবুল নদীতে গিয়ে মিশেছে। এরপর নদীটির পানি পাকিস্তানের ইন্দুস নদীতে প্রবাহিত হয়, যা দেশটির কৃষি, পানীয়জল ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উৎস।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত সূত্র জানায়, আফগানিস্তানের কুনার নদীর পানি ব্যবহারের উদ্যোগে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। ভারত ২০১৯ সালে কাবুল নদীতে একটি প্রকল্পে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তবে আশরাফ গনি সরকারের পতনের আগেই সে প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়।

কুনার নদীতে বাঁধ, পাকিস্তানমুখী পরিকল্পনা আফগানিস্তানের – শেয়ার বিজ

চুক্তি-শূন্য পাকিস্তান ও পানি ভাগাভাগির ঝুঁকি

ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের যেমন স্যালমা বাঁধ বা ‘ভারত-আফগান মৈত্রী বাঁধ’-এর মতো সহযোগিতা আছে, পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের এমন কোনো পানি-বণ্টন চুক্তি নেই। ফলে সীমান্ত নদীগুলোর পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে তালেবানের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে বড় কূটনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এ ঘটনাটি ঘটছে এমন সময়ে, যখন ভারত পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইন্দুস ওয়াটারস চুক্তি স্থগিত করেছে। সেই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’-এর হাতে ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।


ভারত-আফগান আলোচনায় পানি সহযোগিতা

চলতি মাসের শুরুতে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ভারতের সফরে এসে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে অন্যতম আলোচ্য বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

১০ অক্টোবর দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত হেরাত প্রদেশে স্যালমা বাঁধের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে আফগানিস্তানকে সহায়তা করেছে—এবং উভয় পক্ষ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব স্বীকার করেছে। তারা আরও সম্মত হয় যে, আফগানিস্তানের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ও কৃষি উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করা হবে।


বিশ্লেষণ: পানিসম্পদ নিয়ন্ত্রণে নতুন ক্ষমতার বার্তা

তালেবান সরকারের এই উদ্যোগ শুধু পানি ব্যবস্থাপনা নয়, বরং আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিষ্ঠার একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর কুনার নদীতে বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা পাকিস্তানের প্রতি কৌশলগত চাপ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। একইসঙ্গে, এটি আফগানিস্তানের সার্বভৌম পানিসম্পদ নিয়ন্ত্রণের দাবিকে শক্তিশালী করছে—যা ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ার পানি-রাজনীতিতে নতুন ভারসাম্য গড়ে তুলতে পারে।