০৩:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমমুখী গভীর নিম্নচাপ: ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ সংকট ফার্মগেটে মেট্রোর বেয়ারিং প্যাড পড়ে প্রাণ গেল এক পথচারীর, মেট্রো চলাচলস্থগিত সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ-জামান এখন ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের নবম কর্নেল কমান্ড্যান্ট সরকার গঠন করলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন আহমেদ দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা জং সো মিন: ‘ডাঙ্গাল’, ‘Would You Marry Me’ এবং ভাগ্যের মায়া তানজানিয়া ও আইভরি কোস্টে স্থিতিশীলতার আড়ালে অস্থিরতার আশঙ্কা ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে কাতারের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা কৌশল যুদ্ধোত্তর ইসরায়েলে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি—বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও উৎপাদনে নতুন গতি

কংগ্রেসের নীরবতায় ট্রাম্পের হাতে মৃত্যুর ক্ষমতা

কংগ্রেসের দায়িত্বহীনতা ও বিপজ্জনক উদাহরণ

২০২৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস সংবিধান অনুযায়ী তার সবচেয়ে মৌলিক দায়িত্বগুলোর অনেকটাই এড়িয়ে গেছে—বিশেষত ব্যয়ের অনুমোদন, শুল্কনীতি ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে তদারকি। কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যর্থতা হলো ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক নৌঅভিযানে সন্দেহভাজন মাদক চোরাকারবারিদের হত্যার বিষয়ে কংগ্রেসের নীরবতা।

২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আটটি অভিযানে অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, তারা ছিল সমুদ্রপথে মাদক পাচারকারী। কিন্তু কোনো স্বাধীন তদন্ত বা প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি। সমালোচকদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতের কোনো প্রেসিডেন্ট এই নজির ব্যবহার করে নিজ সিদ্ধান্তেই হত্যার আদেশ দিতে পারেন—যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের মৌলিক নীতির পরিপন্থী।


বেঁচে থাকা দুজন ও প্রশাসনের অস্বস্তি

১৬ অক্টোবরের এক অভিযানে দুজন ব্যক্তি প্রাণে বেঁচে যান এবং মার্কিন নৌবাহিনী তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু পরদিনই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়—একজন ইকুয়েডর ও অন্যজন কলম্বিয়ায়।
এই দ্রুত প্রত্যাবর্তন প্রশাসনের জন্য ছিল সুবিধাজনক, কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো হেবিয়াস করপাস (বিচারিক পুনর্বিবেচনা) মামলা হওয়ার আশঙ্কা দূর হয়।

ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, “দুই জীবিত সন্ত্রাসীকে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হচ্ছে বিচার ও শাস্তির জন্য।” কিন্তু তার বক্তব্য বিতর্কিত, বিশেষত কলম্বিয়াকে নিয়ে—যে দেশকে তার সরকারই একসময় “নার্কো-সন্ত্রাসবাদে আশ্রয়দাতা” হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল।


সন্ত্রাসবিরোধী ভাষার ‘চতুর প্রয়োগ’

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আইনগত ভাষাকে চতুরভাবে মাদকবিরোধী অভিযানে প্রয়োগ করছে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কয়েকটি মাদকচক্রকে “বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে ঘোষণা করে। যদিও, এই ঘোষণায় সামরিক শক্তি ব্যবহারের অনুমতি ছিল না, প্রশাসন পরবর্তীতে কংগ্রেসকে জানায় যে তারা এখন “অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতে” লিপ্ত—যেখানে “অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র দলগুলো” যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “সশস্ত্র আক্রমণ” চালাচ্ছে।

এমন আইনি শব্দচয় স্পষ্টতই একটি বৈধ যুদ্ধ ঘোষণার ছদ্মবেশ তৈরি করেছে—যেখানে প্রেসিডেন্ট সরাসরি হত্যা অনুমোদন করতে পারেন।


আইনি ও নৈতিক সীমারেখার অনুপস্থিতি

আইনবিদ স্টিফেন পম্পারের ভাষায়, “লাভের জন্য মাদক পাচার কোনো যুদ্ধের অস্ত্র নয়; এটি কেবল ভাষাগত রূপকের অপব্যবহার।”
কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণ ও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ক্লান্তিতে অভ্যস্ত আমেরিকান সমাজ এই রূপককেই বাস্তব হিসেবে মেনে নিচ্ছে।
প্রশাসন কোনো প্রমাণ দেয়নি যে নিহতদের নৌকাগুলোতে আসলেই ফেন্টানিল ছিল—যা সাধারণত মেক্সিকো হয়ে স্থলপথে আসে।
কংগ্রেসকেও জানানো হয়নি কোন “অ-রাষ্ট্রীয় দলগুলো” এই কথিত হামলার জন্য দায়ী। এমনকি ট্রিনিদাদ ও কলম্বিয়ার জেলেরা নিহতদের মধ্যে ছিল—এ দাবি পর্যন্ত সরকার খারিজ করেছে।

অবশ্যই, ওবামা প্রশাসনের সময়কার মতো কোনো ‘সীমাবদ্ধ নীতি’ বর্তমানে নেই যা প্রেসিডেন্টকে নির্বিচারে প্রাণঘাতী হামলা থেকে বিরত রাখবে। ফলে আজ মাদক পাচারকারীরা ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষিত হয়েছে; কাল প্রেসিডেন্টের সমালোচকরাও একই পরিণতি ভোগ করতে পারেন।


সেনা নেতৃত্বের পদত্যাগ ও কংগ্রেসের নীরবতা

১৬ অক্টোবরের ঘটনাটির পরপরই ল্যাটিন আমেরিকায় মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল ডিসেম্বরে মধ্যেই অবসরের ঘোষণা দেন—দুই বছর আগেই। কিন্তু কংগ্রেস এই ঘটনায় কোনো প্রশ্ন তোলে না।

ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশারদ পিটার ফিভার বলেন, “আগের প্রেসিডেন্টরাও যুদ্ধক্ষমতা বাড়িয়েছেন, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তা করছে আরও গভীরভাবে এবং অল্প ব্যাখ্যা দিয়েই। কংগ্রেস এখন এমনভাবে নিষ্ক্রিয় যে, তারা এমনকি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও এতটা নীরব ছিল না।”


বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত

যদিও ট্রাম্প কিছু অভিবাসী ও বামপন্থী বিরোধীকেও “সন্ত্রাসী” বলেছেন, এখনো তিনি তাদের বিরুদ্ধে সেনা ব্যবহারের নির্দেশ দেননি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—তার নিজের ইচ্ছা ছাড়া এমন কাজ রোধ করবে কে?

এই নীরবতা কেবল কংগ্রেসের ব্যর্থতা নয়; এটি আমেরিকান গণতন্ত্রের অস্তিত্বের জন্য এক গভীর সতর্ক সংকেত।


#ট্রাম্প #কংগ্রেস #যুক্তরাষ্ট্র #মাদকযুদ্ধ #আন্তর্জাতিক_আইন #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমমুখী গভীর নিম্নচাপ: ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা

কংগ্রেসের নীরবতায় ট্রাম্পের হাতে মৃত্যুর ক্ষমতা

১১:৪৬:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

কংগ্রেসের দায়িত্বহীনতা ও বিপজ্জনক উদাহরণ

২০২৫ সালে মার্কিন কংগ্রেস সংবিধান অনুযায়ী তার সবচেয়ে মৌলিক দায়িত্বগুলোর অনেকটাই এড়িয়ে গেছে—বিশেষত ব্যয়ের অনুমোদন, শুল্কনীতি ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে তদারকি। কিন্তু সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যর্থতা হলো ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক নৌঅভিযানে সন্দেহভাজন মাদক চোরাকারবারিদের হত্যার বিষয়ে কংগ্রেসের নীরবতা।

২ সেপ্টেম্বরের পর থেকে আটটি অভিযানে অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, তারা ছিল সমুদ্রপথে মাদক পাচারকারী। কিন্তু কোনো স্বাধীন তদন্ত বা প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি। সমালোচকদের আশঙ্কা, ভবিষ্যতের কোনো প্রেসিডেন্ট এই নজির ব্যবহার করে নিজ সিদ্ধান্তেই হত্যার আদেশ দিতে পারেন—যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের মৌলিক নীতির পরিপন্থী।


বেঁচে থাকা দুজন ও প্রশাসনের অস্বস্তি

১৬ অক্টোবরের এক অভিযানে দুজন ব্যক্তি প্রাণে বেঁচে যান এবং মার্কিন নৌবাহিনী তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু পরদিনই তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়—একজন ইকুয়েডর ও অন্যজন কলম্বিয়ায়।
এই দ্রুত প্রত্যাবর্তন প্রশাসনের জন্য ছিল সুবিধাজনক, কারণ এতে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো হেবিয়াস করপাস (বিচারিক পুনর্বিবেচনা) মামলা হওয়ার আশঙ্কা দূর হয়।

ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, “দুই জীবিত সন্ত্রাসীকে নিজ নিজ দেশে পাঠানো হচ্ছে বিচার ও শাস্তির জন্য।” কিন্তু তার বক্তব্য বিতর্কিত, বিশেষত কলম্বিয়াকে নিয়ে—যে দেশকে তার সরকারই একসময় “নার্কো-সন্ত্রাসবাদে আশ্রয়দাতা” হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল।


সন্ত্রাসবিরোধী ভাষার ‘চতুর প্রয়োগ’

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের আইনগত ভাষাকে চতুরভাবে মাদকবিরোধী অভিযানে প্রয়োগ করছে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কয়েকটি মাদকচক্রকে “বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন” হিসেবে ঘোষণা করে। যদিও, এই ঘোষণায় সামরিক শক্তি ব্যবহারের অনুমতি ছিল না, প্রশাসন পরবর্তীতে কংগ্রেসকে জানায় যে তারা এখন “অ-আন্তর্জাতিক সশস্ত্র সংঘাতে” লিপ্ত—যেখানে “অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র দলগুলো” যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে “সশস্ত্র আক্রমণ” চালাচ্ছে।

এমন আইনি শব্দচয় স্পষ্টতই একটি বৈধ যুদ্ধ ঘোষণার ছদ্মবেশ তৈরি করেছে—যেখানে প্রেসিডেন্ট সরাসরি হত্যা অনুমোদন করতে পারেন।


আইনি ও নৈতিক সীমারেখার অনুপস্থিতি

আইনবিদ স্টিফেন পম্পারের ভাষায়, “লাভের জন্য মাদক পাচার কোনো যুদ্ধের অস্ত্র নয়; এটি কেবল ভাষাগত রূপকের অপব্যবহার।”
কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণ ও সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের ক্লান্তিতে অভ্যস্ত আমেরিকান সমাজ এই রূপককেই বাস্তব হিসেবে মেনে নিচ্ছে।
প্রশাসন কোনো প্রমাণ দেয়নি যে নিহতদের নৌকাগুলোতে আসলেই ফেন্টানিল ছিল—যা সাধারণত মেক্সিকো হয়ে স্থলপথে আসে।
কংগ্রেসকেও জানানো হয়নি কোন “অ-রাষ্ট্রীয় দলগুলো” এই কথিত হামলার জন্য দায়ী। এমনকি ট্রিনিদাদ ও কলম্বিয়ার জেলেরা নিহতদের মধ্যে ছিল—এ দাবি পর্যন্ত সরকার খারিজ করেছে।

অবশ্যই, ওবামা প্রশাসনের সময়কার মতো কোনো ‘সীমাবদ্ধ নীতি’ বর্তমানে নেই যা প্রেসিডেন্টকে নির্বিচারে প্রাণঘাতী হামলা থেকে বিরত রাখবে। ফলে আজ মাদক পাচারকারীরা ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষিত হয়েছে; কাল প্রেসিডেন্টের সমালোচকরাও একই পরিণতি ভোগ করতে পারেন।


সেনা নেতৃত্বের পদত্যাগ ও কংগ্রেসের নীরবতা

১৬ অক্টোবরের ঘটনাটির পরপরই ল্যাটিন আমেরিকায় মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল ডিসেম্বরে মধ্যেই অবসরের ঘোষণা দেন—দুই বছর আগেই। কিন্তু কংগ্রেস এই ঘটনায় কোনো প্রশ্ন তোলে না।

ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশারদ পিটার ফিভার বলেন, “আগের প্রেসিডেন্টরাও যুদ্ধক্ষমতা বাড়িয়েছেন, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তা করছে আরও গভীরভাবে এবং অল্প ব্যাখ্যা দিয়েই। কংগ্রেস এখন এমনভাবে নিষ্ক্রিয় যে, তারা এমনকি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও এতটা নীরব ছিল না।”


বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত

যদিও ট্রাম্প কিছু অভিবাসী ও বামপন্থী বিরোধীকেও “সন্ত্রাসী” বলেছেন, এখনো তিনি তাদের বিরুদ্ধে সেনা ব্যবহারের নির্দেশ দেননি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—তার নিজের ইচ্ছা ছাড়া এমন কাজ রোধ করবে কে?

এই নীরবতা কেবল কংগ্রেসের ব্যর্থতা নয়; এটি আমেরিকান গণতন্ত্রের অস্তিত্বের জন্য এক গভীর সতর্ক সংকেত।


#ট্রাম্প #কংগ্রেস #যুক্তরাষ্ট্র #মাদকযুদ্ধ #আন্তর্জাতিক_আইন #সারাক্ষণ_রিপোর্ট