উদ্ভাবনের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা
শিগগিরই আমেরিকায় চোরদের শুধু পিছনেই নয়, মাথার ওপরে তাকিয়েও সাবধান থাকতে হতে পারে। “ফ্লক সেফটি” নামে একটি কোম্পানি এমন ড্রোন তৈরি করেছে যা দোকান বা কারখানায় চুরি বা অনধিকার প্রবেশের ঘটনায় অপরাধীদের অনুসরণ করতে পারে। কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল সিধুর মতে, দূরবর্তী নিরাপত্তা কেন্দ্র থেকে মাত্র একটি বোতাম টিপলেই ড্রোনগুলো ঘাঁটি থেকে উড়ে সন্দেহভাজনদের অনুসরণ করতে সক্ষম হবে, যতক্ষণ না পুলিশ পৌঁছায়।
তবে অনেক আমেরিকানের কাছে এটি এখনও একধরনের প্রচারণা হিসেবেই শোনায়। এক দশকেরও বেশি সময় আগে অ্যামাজন “প্রাইম এয়ার” ঘোষণা দিয়েছিল, যা মানুষের ঘরে প্যাকেজ পৌঁছে দেবে ড্রোনের মাধ্যমে। কিন্তু সংস্থাটি মাত্র গত বছরই “বিয়ন্ড ভিজ্যুয়াল লাইন অফ সাইট”—অর্থাৎ অপারেটরের দৃষ্টিসীমার বাইরে উড়তে পারার বিশেষ অনুমোদন পেয়েছে। যদিও এখন তারা দুটি শহরে সর্বোচ্চ ৫ পাউন্ড (২.৩ কেজি) পর্যন্ত ওজনের পার্সেল ড্রোনে পাঠাতে সক্ষম, তবে বাস্তবে অ্যামাজনের নীল-ধূসর বৈদ্যুতিক ভ্যান ও সাইকেলই আমেরিকার রাস্তায় বেশি দেখা যায়।

চীনের তুলনায় পিছিয়ে আমেরিকার ‘লো-অলটিটিউড ইকোনমি’
বহু বছরের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও আমেরিকার স্বল্প-উচ্চতার অর্থনীতি এখনো মূলত ধারণাগত পর্যায়েই আছে, যখন চীন ইতিমধ্যে এ খাতে দ্রুত এগিয়ে গেছে। চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি নমনীয় হলেও, আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) জনমতের প্রতিক্রিয়া এবং ব্যক্তিগত বিমানচালকদের নিরাপত্তা বিবেচনায় অনেক সতর্ক। তাই তারা এখনো দৃষ্টিসীমার বাইরে ড্রোন উড়ানোর নিয়ম সহজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাহী আদেশ ও নতুন প্রস্তাবিত নীতিমালা
২০২৫ সালের জুনে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প FAA-কে এই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে আগস্টে FAA নতুন প্রস্তাব প্রকাশ করে, যেখানে ড্রোনকে দৃষ্টিসীমার বাইরে উড়ানোর বিষয়ে নিয়মকাঠামো তুলে ধরা হয়। এতদিন অ্যামাজনের মতো কোম্পানিগুলোকে এই অনুমতি পেতে আলাদা ফেডারেল ছাড়পত্র নিতে হতো। নতুন ব্যবস্থায়ও অনুমতি প্রয়োজন হবে, তবে নিয়মগুলো হবে একরূপ, পরিষ্কার ও বাস্তবসম্মত।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী:
- জনসমাগমস্থল ও ৪০০ ফুট (১২২ মিটার)-এর বেশি উচ্চতায় ড্রোন উড়ানো নিষিদ্ধ থাকবে।
- অপারেটরদের এমন ড্রোন ব্যবহার করতে হবে যা দৃষ্টিসীমার বাইরে উড়তে সক্ষম।
- প্রতিটি মডেল যদি নির্ধারিত মানদণ্ড পূরণ করে, তাহলে আলাদা এয়ারওয়ার্দিনেস সার্টিফিকেশন প্রয়োজন হবে না—শুধু উৎপাদন পর্যায়ে পরীক্ষা যথেষ্ট।

সম্ভাব্য সুফল: চিকিৎসা থেকে কৃষিক্ষেত্র পর্যন্ত
এই নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে তা নানা ক্ষেত্রে সুবিধা আনতে পারে:
- ক্লিনিকগুলো দ্রুত রক্তের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠাতে পারবে।
- কৃষকরা নির্দিষ্ট অংশে কীটনাশক ও সার ছিটাতে “প্রিসিশন এগ্রিকালচার”-এ উপকৃত হবে।
- সেতু, রেললাইন ও বিদ্যুতের খুঁটির রক্ষণাবেক্ষণ আরও নিরাপদ ও সহজ হবে।
নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক
তবে ড্রোন নির্মাতা থেকে শুরু করে বেলুন চালক সবাই এই পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধ প্রকাশ করেছে। প্রধান বিতর্কের জায়গা হলো—কম উচ্চতার আকাশে সংঘর্ষ ঠেকানো যাবে কীভাবে।
হেলিকপ্টার ও অন্যান্য বিমানচালকরা দাবি করছেন, ড্রোনকে সর্বদা মানবচালিত বিমানের পথ ছেড়ে দিতে হবে। তাদের যুক্তি, “বুরিটো বহনকারী ড্রোন” একটি গরম বেলুনের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুতগতির, কিন্তু সব মানবচালিত বিমানেই “কনস্পিকুইটি ইলেকট্রনিকস” থাকে না—ফলে সাধারণ ড্রোন জানতেও পারে না যে, তাকে এড়িয়ে চলা উচিত।
প্রযুক্তিগত বাধা ও সমাধান প্রস্তাব
ড্রোন শিল্পের প্রতিনিধিরা সতর্ক করে বলছেন, অতিরিক্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম যোগ করার দাবি ড্রোন নির্মাণ ও পরিচালনা আরও জটিল করে তুলবে। তাদের প্রস্তাব—সব ধরনের উড়ন্ত যানবাহনকে বাধ্যতামূলকভাবে এমন অবস্থান সংকেত সম্প্রচার করতে হবে যা ড্রোনকে দূরে থাকতে সতর্ক করবে।
কমার্শিয়াল ড্রোন অ্যালায়েন্সের নীতিনির্দেশক লিজ ফরো বলেন, “যদি সব ড্রোনকে দৃশ্যমান বিমানের জন্য পথ ছেড়ে দেওয়ার নিয়ম করা হয়, এবং ৫০০ ফুটের নিচে উড়ন্ত সব বিমানে অবস্থান শনাক্তকরণ ডিভাইস বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে আকাশ আরও নিরাপদ হবে এবং ড্রোন শিল্পও এগোবে।”

নতুন যুগের সম্ভাবনা
FAA আগামী বছরের শুরুতে এই নিয়মগুলো চূড়ান্ত করবে। যদি তারা ভারসাম্যপূর্ণ নীতি প্রণয়ন করতে পারে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্যের এক নতুন যুগ শুরু হতে পারে—যার প্রতীক হবে মাথার ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়া ড্রোনের মৃদু গুঞ্জন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















