নারী নেতৃত্বে নতুন ইতিহাস
জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন একজন নারী — তাকাইচি সানায়ে। ২১ অক্টোবর সংসদের ভোটে অনুমোদনের মাধ্যমে তিনি জাপানের ১০৪তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে তিনি ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপির) নেতৃত্বে নির্বাচিত হন।
এই ঘটনাটি জাপানের মতো পুরুষ-প্রধান গণতন্ত্রে নারী নেতৃত্বের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে তাকাইচির রাজনৈতিক অবস্থান বেশ রক্ষণশীল — তিনি নিরাপত্তা বিষয়ে কঠোর, সামাজিক নীতিতে ঐতিহ্যবাদী এবং আর্থিক ক্ষেত্রে উদার নীতির পক্ষপাতী। বিশ্লেষকদের মতে, তার নেতৃত্বে জাপানের রাজনীতি আরও ডান দিকে সরে যেতে পারে।
এলডিপির ক্ষমতা পুনর্দখলের কৌশল
গত বছরের নির্বাচনে এলডিপি সংসদের দুই কক্ষে উল্লেখযোগ্য আসন হারিয়েছে। বর্তমানে তারা সংখ্যালঘু সরকার পরিচালনা করছে। তাকাইচি সানায়ে এখন দলটির হারানো জনসমর্থন পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন, বিশেষ করে তরুণ ও ডানপন্থী ভোটারদের মধ্যে, যারা নতুন জনপ্রিয় গোষ্ঠীগুলোর দিকে ঝুঁকেছে।
তার নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বিদেশিদের “অসদাচরণ” নিয়ে কঠোর বক্তব্য দেন এবং বিবাহিত দম্পতির পৃথক পদবী বা রাজপরিবারে নারী উত্তরাধিকারের অনুমোদনের মতো সামাজিক সংস্কারের বিরোধিতা করেন।

রাজনৈতিক জোটে অস্থিরতা ও নতুন সমঝোতা
দলীয় নেতৃত্ব জয়ের পর তাকাইচি বড় এক রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়েন। দীর্ঘদিনের সহযোগী কোমেইতো দল এলডিপির জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। কয়েকদিন ধরে বিরোধী দলগুলো বিকল্প জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়েছিল, যাতে তাকাইচি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন।
শেষ পর্যন্ত তাকাইচি ওসাকা-ভিত্তিক কেন্দ্র-ডানপন্থী জাপান ইনোভেশন পার্টি (ইশিনের) সঙ্গে নতুন জোট গঠন করে পরিস্থিতি সামাল দেন। তবে এলডিপি ও ইশিনের মিলিত আসনসংখ্যা এখনো সংসদের কোনো কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। অর্থাৎ আইন পাস করতে হলে তাকাইচিকে অন্য দলের সমর্থনও প্রয়োজন হবে।
নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নীতিতে গতি
ইশিন এলডিপির তুলনায় অনেক বেশি উপযুক্ত সহযোগী বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ দুটি দলই “শক্তিশালী ও গর্বিত জাপান” গঠনের লক্ষ্য ভাগ করে নেয়। অন্যদিকে কোমেইতো দীর্ঘদিন ধরে এলডিপির সামরিক উচ্চাভিলাষের লাগাম টেনে ধরেছিল।
নতুন জোট নিরাপত্তা খাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে — যেমন অস্ত্র রপ্তানির ওপর থাকা বিধিনিষেধ শিথিল করা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা জোরদার করা এবং ২০২৭ সালের মধ্যে জিডিপির ২ শতাংশ ছাড়িয়ে প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
অর্থনৈতিক নীতি ও ভেতরের টানাপোড়েন
যদিও, উভয় দলই জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের নীতি এক নয়। তাকাইচি চান সরকারি প্রণোদনা বাড়াতে, কিন্তু ইশিন দল চায় “ছোট সরকার” ও ব্যয়সংকোচনমূলক সংস্কার।
ইশিনের শর্ত অনুযায়ী, এলডিপিকে সংসদের আসনসংখ্যা কমানো ও সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে একটি “গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েন্সি ব্যুরো” গঠনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে হবে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম পরীক্ষা
মাসের শেষের দিকে তাকাইচির সামনে আসছে বড় আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ। তিনি অংশ নেবেন মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান সম্মেলন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত এপেক শীর্ষ সম্মেলনে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো অংশ নেবে।
তাকাইচির যুদ্ধকালীন ইতিহাস নিয়ে বিতর্কিত মতামত দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের সাম্প্রতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ
সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা। তার পূর্বসূরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৫৫০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক ও বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা নিয়ে তাকাইচি আপত্তি জানালেও জানেন — জাপান তার প্রধান নিরাপত্তা সহযোগী দেশটিকে বিরক্ত করার ঝুঁকি নিতে পারে না।
তার মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত আছেন সেই চুক্তির প্রধান আলোচক, যা ইঙ্গিত দেয় — চুক্তি বাস্তবায়নে জাপান প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প এপেক বৈঠকের পথে জাপান সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে, আর তাকাইচির আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতির সময় খুবই সীমিত।
#জাপান,# রাজনীতি,# তাকাইচি সানায়ে, #এলডিপি, #ইশিন, #এপেক, #আসিয়ান,# জাপানের নারী প্রধানমন্ত্রী, #ডানপন্থী রাজনীতি,# সারাক্ষণ রিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















