০৬:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
আরপিও সংশোধনে বিএনপির আপত্তি, ইসিকে চিঠি সাবেক প্রধান বিচারপতিকে কেন জামিন নয়, হাইকোটে রুল পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা ঘিরে যুদ্ধের হুমকি বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থবির, উত্তরাঞ্চলে লোডশেডিংয়ে চরম ভোগান্তি বিএসসিআইসি শিল্প এলাকায় রঙ কারখানার বয়লার কক্ষে ভয়াবহ বিস্ফোরণ জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী তাকাইচির প্রথম পদক্ষেপ: ‘ক্যাশ রিলিফ’ আর দ্রুত সামরিক শক্তি সীমান্ত বাণিজ্য থমকে যাওয়ায় নীরব দর্শনা রেলওয়ে স্টেশন কোরিয়ান হিট ‘হাউস অব ডায়নামাইট’: শুধু ড্রামা নয়, সাউন্ডট্র্যাকও হচ্ছে আলাদা ব্যবসা কেনিয়ার মাসাই মারায় একা বেঁচে থাকা চিতা শাবককে ঘিরে তর্ক: বাঁচানো নাকি বশ মানানো? অ্যাপলের আইওএস ফাঁসকাণ্ডে লিকার প্রসরের বিরুদ্ধে ডিফল্ট অর্ডার, এখন ঝুঁকিতে পুরো ‘লিক কালচার

যুদ্ধোত্তর ইসরায়েলে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর

যুদ্ধবিরতির পর ফের পুরনো রাজনৈতিক সংঘাত

গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি টিকে ছিল মাত্র এক সপ্তাহ। ২০ অক্টোবর ইসরায়েলি সংসদ কেনেসেটের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতেই দেশটি আবারও পুরনো রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ফিরে যায়। ক্ষমতাসীন লিকুদ দলের বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন ঘোষণা দেন, সুপ্রিম কোর্ট ও অ্যাটর্নি জেনারেলের ক্ষমতা সীমিত করতে বিতর্কিত আইন প্রণয়নের কাজ পুনরায় শুরু হবে। সংসদের স্পিকার আদালতের সভাপতির পদবি উচ্চারণ করতেও অস্বীকৃতি জানান। এর জবাবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ায়ার লাপিদ তাঁকে তিরস্কার করে বলেন, “আপনি শুধু অর্ধেক সংসদের স্পিকার।”

রাষ্ট্রপতি আইজাক হার্জগ নিজের নির্ধারিত ভাষণ থেকে সরে এসে সংসদ সদস্যদের প্রতি কটাক্ষ করেন—“এই অবমাননাকর আচরণ মানবিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি অসম্মানের প্রতীক।”


নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, নেতৃত্বে আস্থাহীনতা

যুদ্ধ আপাতত শেষ হলেও এখন দৃষ্টি ফের ঘরোয়া রাজনীতির দিকে। ২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া বাধ্যতামূলক। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন নেমে এসেছে এক-তৃতীয়াংশেরও নিচে। তাঁর ডানপন্থী ও ধর্মীয় জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে বলেই পূর্বাভাস দিচ্ছে সাম্প্রতিক জরিপগুলো।

অন্যদিকে বিরোধী শিবিরে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী, ইসলামপন্থী ও আরব বামপন্থী দলগুলোর জটিল সমন্বয়। নেতানিয়াহুকে সরানো ছাড়া তাদের মধ্যে তেমন কোনো আদর্শিক মিল নেই। ফলে নতুন সরকার গঠনের পথও কঠিন হয়ে উঠছে।


যুদ্ধের প্রভাব: নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা নিম্নগামী

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। দুই বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন রিজার্ভ সদস্য। গাজা, ইরান, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে আসা রকেট ও ড্রোন আক্রমণে দেশটির প্রায় প্রতিটি অঞ্চলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই যুদ্ধ নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে আঘাত হেনেছে। বহু ইসরায়েলি তাঁকে অভিযুক্ত করছেন হামলার আগাম পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়া এবং যুদ্ধ দ্রুত শেষ না করার জন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডালিয়া শেইন্ডলিন বলেন: “জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব ভঙ্গের অনুভূতি ভোটে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।”


ধর্মীয় সম্প্রদায় নিয়ে ক্ষোভ ও নতুন জোটের সম্ভাবনা

ইসরায়েলের ১ কোটি নাগরিকের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ অতি-রক্ষণশীল অর্থডক্স সম্প্রদায়ের সদস্য, যারা ধর্মীয় কারণে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সুপ্রিম কোর্ট এই ছাড়কে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেও নেতানিয়াহুর জোটের অংশ হওয়ায় সরকার এখনো রায় কার্যকর করেনি। বরং এই গোষ্ঠী সরকারি তহবিল থেকেও অতিরিক্ত বরাদ্দ পাচ্ছে। ফলে জনঅসন্তোষ বেড়ে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।


জনমত ও নতুন রাজনৈতিক পরিচয়

যুদ্ধ ইসরায়েলিদের রাজনৈতিক পরিচয়েও নতুন পরিবর্তন এনেছে। থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ‘এজিএএম ল্যাবস’-এর সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, এখন ৬৫ শতাংশ ইসরায়েলি নিজেদের ডানপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করেন, তিন বছর আগে এই হার ছিল ৫৬ শতাংশ। বামপন্থী হিসেবে নিজেদের দেখেন মাত্র ১৩ শতাংশ।

তবে যুদ্ধ বন্ধে ৭৯ শতাংশ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে। সৌদি আরবসহ আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ও পশ্চিম তীর সংযুক্তির প্রশ্নে মাত্র ৩২ শতাংশ সংযুক্তির পক্ষে। ধর্মীয় পরিচয়কে বেশি গুরুত্ব দিলেও মাত্র এক-চতুর্থাংশ নাগরিক চান যে দেশটি ধর্মীয় আইনে পরিচালিত হোক।


সামনে কী?

হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশ্লেষক গেইল তলশিরের মতে, “আগামী নির্বাচন ইসরায়েলিরা নিজেদের পরিচয় ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের ধরণ নির্ধারণে একটি বড় পরীক্ষা হবে।”

#ইসরায়েল #নেতানিয়াহু #গাজাযুদ্ধ #ইসরায়েলনির্বাচন #মধ্যপ্রাচ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

আরপিও সংশোধনে বিএনপির আপত্তি, ইসিকে চিঠি

যুদ্ধোত্তর ইসরায়েলে রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর

০২:৪০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

যুদ্ধবিরতির পর ফের পুরনো রাজনৈতিক সংঘাত

গাজায় নাজুক যুদ্ধবিরতি টিকে ছিল মাত্র এক সপ্তাহ। ২০ অক্টোবর ইসরায়েলি সংসদ কেনেসেটের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতেই দেশটি আবারও পুরনো রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ফিরে যায়। ক্ষমতাসীন লিকুদ দলের বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন ঘোষণা দেন, সুপ্রিম কোর্ট ও অ্যাটর্নি জেনারেলের ক্ষমতা সীমিত করতে বিতর্কিত আইন প্রণয়নের কাজ পুনরায় শুরু হবে। সংসদের স্পিকার আদালতের সভাপতির পদবি উচ্চারণ করতেও অস্বীকৃতি জানান। এর জবাবে বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ায়ার লাপিদ তাঁকে তিরস্কার করে বলেন, “আপনি শুধু অর্ধেক সংসদের স্পিকার।”

রাষ্ট্রপতি আইজাক হার্জগ নিজের নির্ধারিত ভাষণ থেকে সরে এসে সংসদ সদস্যদের প্রতি কটাক্ষ করেন—“এই অবমাননাকর আচরণ মানবিক মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি অসম্মানের প্রতীক।”


নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, নেতৃত্বে আস্থাহীনতা

যুদ্ধ আপাতত শেষ হলেও এখন দৃষ্টি ফের ঘরোয়া রাজনীতির দিকে। ২০২৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া বাধ্যতামূলক। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থন নেমে এসেছে এক-তৃতীয়াংশেরও নিচে। তাঁর ডানপন্থী ও ধর্মীয় জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে বলেই পূর্বাভাস দিচ্ছে সাম্প্রতিক জরিপগুলো।

অন্যদিকে বিরোধী শিবিরে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী, ইসলামপন্থী ও আরব বামপন্থী দলগুলোর জটিল সমন্বয়। নেতানিয়াহুকে সরানো ছাড়া তাদের মধ্যে তেমন কোনো আদর্শিক মিল নেই। ফলে নতুন সরকার গঠনের পথও কঠিন হয়ে উঠছে।


যুদ্ধের প্রভাব: নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা নিম্নগামী

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর ইসরায়েল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। দুই বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন রিজার্ভ সদস্য। গাজা, ইরান, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেন থেকে আসা রকেট ও ড্রোন আক্রমণে দেশটির প্রায় প্রতিটি অঞ্চলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই যুদ্ধ নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে আঘাত হেনেছে। বহু ইসরায়েলি তাঁকে অভিযুক্ত করছেন হামলার আগাম পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হওয়া এবং যুদ্ধ দ্রুত শেষ না করার জন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডালিয়া শেইন্ডলিন বলেন: “জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব ভঙ্গের অনুভূতি ভোটে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।”


ধর্মীয় সম্প্রদায় নিয়ে ক্ষোভ ও নতুন জোটের সম্ভাবনা

ইসরায়েলের ১ কোটি নাগরিকের মধ্যে প্রায় ১৪ শতাংশ অতি-রক্ষণশীল অর্থডক্স সম্প্রদায়ের সদস্য, যারা ধর্মীয় কারণে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সুপ্রিম কোর্ট এই ছাড়কে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেও নেতানিয়াহুর জোটের অংশ হওয়ায় সরকার এখনো রায় কার্যকর করেনি। বরং এই গোষ্ঠী সরকারি তহবিল থেকেও অতিরিক্ত বরাদ্দ পাচ্ছে। ফলে জনঅসন্তোষ বেড়ে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।


জনমত ও নতুন রাজনৈতিক পরিচয়

যুদ্ধ ইসরায়েলিদের রাজনৈতিক পরিচয়েও নতুন পরিবর্তন এনেছে। থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ‘এজিএএম ল্যাবস’-এর সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, এখন ৬৫ শতাংশ ইসরায়েলি নিজেদের ডানপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করেন, তিন বছর আগে এই হার ছিল ৫৬ শতাংশ। বামপন্থী হিসেবে নিজেদের দেখেন মাত্র ১৩ শতাংশ।

তবে যুদ্ধ বন্ধে ৭৯ শতাংশ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে। সৌদি আরবসহ আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ও পশ্চিম তীর সংযুক্তির প্রশ্নে মাত্র ৩২ শতাংশ সংযুক্তির পক্ষে। ধর্মীয় পরিচয়কে বেশি গুরুত্ব দিলেও মাত্র এক-চতুর্থাংশ নাগরিক চান যে দেশটি ধর্মীয় আইনে পরিচালিত হোক।


সামনে কী?

হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিশ্লেষক গেইল তলশিরের মতে, “আগামী নির্বাচন ইসরায়েলিরা নিজেদের পরিচয় ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের ধরণ নির্ধারণে একটি বড় পরীক্ষা হবে।”

#ইসরায়েল #নেতানিয়াহু #গাজাযুদ্ধ #ইসরায়েলনির্বাচন #মধ্যপ্রাচ্য