০৭:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
দোস্ত যেন দুশমন হয়ে না যায়: পন্থা আবিষ্কার করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল জয় ঢাকা-দিল্লির রাতও এখন গরম: ঘুম ভাঙা ক্লাইমেট ক্রাইসিস জ্বালানি রূপান্তর ও ভূরাজনীতি এখন এক জিনিস: ব্যাটারির খনিজের জন্য নতুন মার্কিন চাপ এআই ডেটা সেন্টার এত বিদ্যুৎ খাচ্ছে যে গ্রিড কাঁপছে — সমাধান কি ‘কার্বন-অওয়্যার’ ট্রেনিং ট্রাম্পের এশিয়া সফরের মাঝেই উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া, জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার সতর্কতা জোরালো টেকক্রাঞ্চ ডিসরাপ্ট ২০২৫: শুধু এআই বললেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না” মারিনল্যান্ডের বেলুগা তিমিদের বাঁচাতে কানাডার প্রাদেশিক সরকারের আহ্বান ট্রাম্পের আগমনে আসিয়ান শীর্ষ বৈঠক হয়ে গেল মার্কিন মঞ্চ ১৪ বছর না হওয়া পর্যন্ত সন্তানদের ফোন না দেওয়ার অঙ্গীকারে বাড়ছে সচেতনতা যুদ্ধোত্তর অনিশ্চয়তার মধ্যে ইসরায়েলের পর্যটন খাতে পুনর্জাগরণের আশা

ভারতে এআই–সৃষ্ট কনটেন্টে বাধ্যতামূলক লেবেলিংয়ের প্রস্তাব—ডিপফেক ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ঝুঁকি মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ

ভারত সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য নতুন কঠোর নীতিমালা প্রস্তাব করেছে, যার লক্ষ্য ডিপফেক, ভুয়ো খবর এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের বিস্তার রোধ করা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের অনুরূপ উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ভারতও এবার ‘এআই–সৃষ্ট কনটেন্টে বাধ্যতামূলক লেবেলিং’ প্রবর্তনের দিকে এগোচ্ছে।

প্রেক্ষাপট: এক বিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দেশ

ভারতের মতো বিশাল জনবহুল ও বৈচিত্র্যময় দেশে, যেখানে জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য গভীর, সেখানে ভুয়ো খবর ও ডিপফেক ভিডিও সামাজিক অস্থিরতা বা সহিংসতা উসকে দিতে পারে। নির্বাচনী মৌসুমে এসব ভুয়ো ভিডিও ইতিমধ্যেই কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

নতুন প্রস্তাবের মূল নির্দেশনা

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে —

  • • যেকোনো এআই–সৃষ্ট ভিজ্যুয়াল কনটেন্টে অন্তত ১০ শতাংশ অংশে দৃশ্যমান লেবেল থাকতে হবে,
  • • অডিও ক্লিপের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ১০ শতাংশ সময়ে সেই লেবেল প্রদর্শিত হবে।

এই পদক্ষেপ মূলত OpenAI, Meta, Google, X (পূর্বে টুইটার)-এর মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর বেশি দায়িত্ব আরোপ করবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি নয় কি?

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ঘোষণা নিতে হবে যে, তারা যে তথ্য বা কনটেন্ট আপলোড করছেন, তা এআই–সৃষ্ট কি না। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত যাচাই–বাছাই ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এআই–সৃষ্ট কনটেন্ট শনাক্ত করা যায়।

সরকারের বক্তব্য: ‘দৃশ্যমানতা, স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি’ নিশ্চিত

সরকার জানিয়েছে, নতুন নিয়মগুলো সব এআই–সৃষ্ট প্রকাশ্য কনটেন্টে দৃশ্যমান লেবেল, মেটাডেটা ট্রেসেবিলিটি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত, জনমত ও শিল্পখাতের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে।

ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও সরকারের উদ্বেগ

সরকারের ভাষায়, “জেনারেটিভ এআই–এর অপব্যবহারের সম্ভাবনা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে — যা ব্যবহারকারীর ক্ষতি, ভুয়ো তথ্য প্রচার, নির্বাচনী প্রভাব বা ব্যক্তিকে নকল করার মতো গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে।”

এই উদ্বেগের কারণেই সরকার কঠোরভাবে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে চাইছে।

DEEPFAKE PROOF IN INDIAN CRIMINAL TRIALS: A CHALLENGE TO INDIAN COURTS -  Jus Corpus

আদালতে ডিপফেক মামলা

ভারতের আদালতগুলোতেও এখন উচ্চ–প্রোফাইল ডিপফেক মামলা চলছে। বলিউড তারকা অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন দিল্লির একটি আদালতে মামলা করেছেন—তাদের মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনকারী এআই–ভিডিও অপসারণ ও তৈরিতে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে, তাঁরা ইউটিউবের এআই–ট্রেনিং নীতিমালাকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন।

‘১০ শতাংশ লেবেলিং’—বিশ্বে প্রথম পরিমাপযোগ্য মানদণ্ড

পাবলিক পলিসি রিসার্চ সংস্থা ইন্ডিয়ান গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি প্রজেক্ট-এর সহ–প্রতিষ্ঠাতা ধ্রুব গর্গ বলেছেন, এই প্রস্তাবিত নিয়ম “বিশ্বে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান লেবেলিংয়ের একটি পরিমাণযোগ্য মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে।”

তিনি যোগ করেন, আইন কার্যকর হলে ভারতে এআই–প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্বয়ংক্রিয় লেবেলিং সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা কনটেন্ট সৃষ্টির সময়ই এআই–সৃষ্ট উপাদান চিহ্নিত করবে।

OpenAI plans to cut Microsoft revenue share after restructuring, The  Information reports | Reuters

ভারতের ক্রমবর্ধমান এআই বাজার

ভারত এখন দ্রুত একটি গুরুত্বপূর্ণ এআই বাজারে পরিণত হচ্ছে।

OpenAI–এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেন, ভারত তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবহারকারী বাজার, এবং গত এক বছরে ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতের এই প্রস্তাব বিশ্বব্যাপী এআই–নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডিপফেক ও মিথ্যা তথ্যের বিপজ্জনক প্রসার রোধে এই পদক্ষেপ শুধু ভারতের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি নীতিতেও একটি নতুন মান নির্ধারণ করতে পারে।

জনপ্রিয় সংবাদ

দোস্ত যেন দুশমন হয়ে না যায়: পন্থা আবিষ্কার করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল জয়

ভারতে এআই–সৃষ্ট কনটেন্টে বাধ্যতামূলক লেবেলিংয়ের প্রস্তাব—ডিপফেক ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের ঝুঁকি মোকাবিলায় কঠোর পদক্ষেপ

০৪:০৬:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

ভারত সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য নতুন কঠোর নীতিমালা প্রস্তাব করেছে, যার লক্ষ্য ডিপফেক, ভুয়ো খবর এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্যের বিস্তার রোধ করা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীনের অনুরূপ উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় ভারতও এবার ‘এআই–সৃষ্ট কনটেন্টে বাধ্যতামূলক লেবেলিং’ প্রবর্তনের দিকে এগোচ্ছে।

প্রেক্ষাপট: এক বিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দেশ

ভারতের মতো বিশাল জনবহুল ও বৈচিত্র্যময় দেশে, যেখানে জাতিগত ও ধর্মীয় বৈচিত্র্য গভীর, সেখানে ভুয়ো খবর ও ডিপফেক ভিডিও সামাজিক অস্থিরতা বা সহিংসতা উসকে দিতে পারে। নির্বাচনী মৌসুমে এসব ভুয়ো ভিডিও ইতিমধ্যেই কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

নতুন প্রস্তাবের মূল নির্দেশনা

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে —

  • • যেকোনো এআই–সৃষ্ট ভিজ্যুয়াল কনটেন্টে অন্তত ১০ শতাংশ অংশে দৃশ্যমান লেবেল থাকতে হবে,
  • • অডিও ক্লিপের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ১০ শতাংশ সময়ে সেই লেবেল প্রদর্শিত হবে।

এই পদক্ষেপ মূলত OpenAI, Meta, Google, X (পূর্বে টুইটার)-এর মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর বেশি দায়িত্ব আরোপ করবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি নয় কি?

এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোকে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ঘোষণা নিতে হবে যে, তারা যে তথ্য বা কনটেন্ট আপলোড করছেন, তা এআই–সৃষ্ট কি না। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত যাচাই–বাছাই ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এআই–সৃষ্ট কনটেন্ট শনাক্ত করা যায়।

সরকারের বক্তব্য: ‘দৃশ্যমানতা, স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি’ নিশ্চিত

সরকার জানিয়েছে, নতুন নিয়মগুলো সব এআই–সৃষ্ট প্রকাশ্য কনটেন্টে দৃশ্যমান লেবেল, মেটাডেটা ট্রেসেবিলিটি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত, জনমত ও শিল্পখাতের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে।

ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও সরকারের উদ্বেগ

সরকারের ভাষায়, “জেনারেটিভ এআই–এর অপব্যবহারের সম্ভাবনা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে — যা ব্যবহারকারীর ক্ষতি, ভুয়ো তথ্য প্রচার, নির্বাচনী প্রভাব বা ব্যক্তিকে নকল করার মতো গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে।”

এই উদ্বেগের কারণেই সরকার কঠোরভাবে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে চাইছে।

DEEPFAKE PROOF IN INDIAN CRIMINAL TRIALS: A CHALLENGE TO INDIAN COURTS -  Jus Corpus

আদালতে ডিপফেক মামলা

ভারতের আদালতগুলোতেও এখন উচ্চ–প্রোফাইল ডিপফেক মামলা চলছে। বলিউড তারকা অভিষেক বচ্চন ও ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন দিল্লির একটি আদালতে মামলা করেছেন—তাদের মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনকারী এআই–ভিডিও অপসারণ ও তৈরিতে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়ে, তাঁরা ইউটিউবের এআই–ট্রেনিং নীতিমালাকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন।

‘১০ শতাংশ লেবেলিং’—বিশ্বে প্রথম পরিমাপযোগ্য মানদণ্ড

পাবলিক পলিসি রিসার্চ সংস্থা ইন্ডিয়ান গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি প্রজেক্ট-এর সহ–প্রতিষ্ঠাতা ধ্রুব গর্গ বলেছেন, এই প্রস্তাবিত নিয়ম “বিশ্বে প্রথমবারের মতো দৃশ্যমান লেবেলিংয়ের একটি পরিমাণযোগ্য মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে।”

তিনি যোগ করেন, আইন কার্যকর হলে ভারতে এআই–প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্বয়ংক্রিয় লেবেলিং সিস্টেম তৈরি করতে হবে, যা কনটেন্ট সৃষ্টির সময়ই এআই–সৃষ্ট উপাদান চিহ্নিত করবে।

OpenAI plans to cut Microsoft revenue share after restructuring, The  Information reports | Reuters

ভারতের ক্রমবর্ধমান এআই বাজার

ভারত এখন দ্রুত একটি গুরুত্বপূর্ণ এআই বাজারে পরিণত হচ্ছে।

OpenAI–এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বলেন, ভারত তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যবহারকারী বাজার, এবং গত এক বছরে ব্যবহারকারীর সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারতের এই প্রস্তাব বিশ্বব্যাপী এআই–নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। ডিপফেক ও মিথ্যা তথ্যের বিপজ্জনক প্রসার রোধে এই পদক্ষেপ শুধু ভারতের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি নীতিতেও একটি নতুন মান নির্ধারণ করতে পারে।