০৮:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
মার্কিন-চীন শুল্ক নরম হলো, তেলের দাম উঠল — আর রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়ল গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে, কিন্তু ইসরায়েলি ‘টার্গেটেড স্ট্রাইক’ প্রথম বড় চাপ তৈরি করল আহত শিউলি দোস্ত যেন দুশমন হয়ে না যায়: পন্থা আবিষ্কার করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল জয় ঢাকা-দিল্লির রাতও এখন গরম: ঘুম ভাঙা ক্লাইমেট ক্রাইসিস জ্বালানি রূপান্তর ও ভূরাজনীতি এখন এক জিনিস: ব্যাটারির খনিজের জন্য নতুন মার্কিন চাপ এআই ডেটা সেন্টার এত বিদ্যুৎ খাচ্ছে যে গ্রিড কাঁপছে — সমাধান কি ‘কার্বন-অওয়্যার’ ট্রেনিং ট্রাম্পের এশিয়া সফরের মাঝেই উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া, জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার সতর্কতা জোরালো টেকক্রাঞ্চ ডিসরাপ্ট ২০২৫: শুধু এআই বললেই টাকা পাওয়া যাচ্ছে না” মারিনল্যান্ডের বেলুগা তিমিদের বাঁচাতে কানাডার প্রাদেশিক সরকারের আহ্বান

ট্রাম্পের বার্তা আসিয়ান নেতাদের প্রতি—“আমরা থাকব শক্তিশালী বন্ধু বহু প্রজন্ম ধরে”

কুয়ালালামপুরে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন: “আমরা থাকব আপনার পাশে—একটি মুক্ত, উন্মুক্ত এবং সমৃদ্ধশালী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

২০১৭ সালের পর প্রথমবার কোনো আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ আপনার পাশে রয়েছে। আমরা বহু প্রজন্ম ধরে শক্তিশালী অংশীদার ও বন্ধু হিসেবে থাকতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা একসাথে প্রশান্ত মহাসাগরের দুই তীরের দেশগুলোর জন্য অবিশ্বাস্য সমৃদ্ধি তৈরি করব, এবং আমাদের জনগণের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করব।”

যুক্তরাষ্ট্র—চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে বার্তা

এই ঘোষণা এমন সময়ে এলো, যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী কার্যক্রম অঞ্চলটির অন্যতম নিরাপত্তা উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।

Trump says US is 100% with Southeast Asia

বাণিজ্য ইস্যু ও আসিয়ানের প্রত্যাশা

যুক্তরাষ্ট্র আসিয়ানের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হওয়ায় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আগস্ট থেকে ট্রাম্প প্রশাসন ১০% থেকে ৪০% পর্যন্ত ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপ করেছে, যা অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় চাপ সৃষ্টি করেছে।

তবুও সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতাগুলোতে বাণিজ্য নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। বরং গভীর সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ পায়।

অনোয়ার ইব্রাহিমের আশাবাদ ও কৃতজ্ঞতা

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী অনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্যমী অর্থনীতি আমাদের সবার জন্য এক সোনালি যুগ আনতে পারে।”
তিনি আরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “গাজা যুদ্ধ বন্ধে আপনার সমন্বিত পরিকল্পনা বিশ্বকে নতুন আশার আলো দিয়েছে—যা প্রমাণ করে, কূটনীতি ও দৃঢ়তা দিয়েও সবচেয়ে জটিল সংঘাতের সমাধান সম্ভব।”

গুরুত্বপূর্ণ খনিজে যুক্তরাষ্ট্র—মালয়েশিয়া চুক্তি

সম্মেলনের আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও রেয়ার আর্থস বিষয়ে—একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায়।

চীন যখন রেয়ার আর্থ রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে, তখন মালয়েশিয়া, যেখানে চীনের বাইরে একটি বড় রেয়ার আর্থ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র রয়েছে, বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করছে।

Vietnam-US friendship thrives after a quarter of a century – Mega Story

যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, ‘Agreement on Reciprocal Trade’ শিরোনামের এই চুক্তিতে মালয়েশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ বা রেয়ার আর্থ রপ্তানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা কোটা আরোপ করবে না।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে মালয়েশিয়া দ্রুত এই খাতে উন্নয়ন ঘটাবে, উৎপাদন বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি লাইসেন্স দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট বিক্রয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা রাখবে না।

যুক্তরাষ্ট্র—ভিয়েতনাম বাণিজ্য কাঠামো

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম একটি নতুন “ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ পারস্পরিক বাণিজ্য কাঠামো” নিয়ে একমত হয়েছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ভিয়েতনাম “যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শিল্প ও কৃষিপণ্যের” জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার দেবে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্যে ২০% শুল্ক বজায় রাখবে, তবে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পরে ঘোষণা করা হবে।

আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

আসিয়ান সম্মেলনের এই ঘোষণা স্পষ্ট করে যে, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শুধু বাণিজ্য নয়, বরং কৌশলগত সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান নিতে চায়।

চীন যখন তার প্রভাব আরও দৃঢ় করছে, তখন ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আবারও অঞ্চলে নিজস্ব অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে।

 

#আন্তর্জাতিকসম্পর্ক #আসিয়ানসম্মেলন #ট্রাম্প #যুক্তরাষ্ট্রচীন #মালয়েশিয়া #ভিয়েতনাম #রেয়ারআর্থচুক্তি #ইন্দোপ্যাসিফিক

জনপ্রিয় সংবাদ

মার্কিন-চীন শুল্ক নরম হলো, তেলের দাম উঠল — আর রাশিয়ার ওপর চাপ আরও বাড়ল

ট্রাম্পের বার্তা আসিয়ান নেতাদের প্রতি—“আমরা থাকব শক্তিশালী বন্ধু বহু প্রজন্ম ধরে”

০৪:৪৪:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

কুয়ালালামপুরে ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন: “আমরা থাকব আপনার পাশে—একটি মুক্ত, উন্মুক্ত এবং সমৃদ্ধশালী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

২০১৭ সালের পর প্রথমবার কোনো আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিয়ে ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ আপনার পাশে রয়েছে। আমরা বহু প্রজন্ম ধরে শক্তিশালী অংশীদার ও বন্ধু হিসেবে থাকতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা একসাথে প্রশান্ত মহাসাগরের দুই তীরের দেশগুলোর জন্য অবিশ্বাস্য সমৃদ্ধি তৈরি করব, এবং আমাদের জনগণের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করব।”

যুক্তরাষ্ট্র—চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে বার্তা

এই ঘোষণা এমন সময়ে এলো, যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা ক্রমেই বাড়ছে। দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আগ্রাসী কার্যক্রম অঞ্চলটির অন্যতম নিরাপত্তা উদ্বেগে পরিণত হয়েছে।

Trump says US is 100% with Southeast Asia

বাণিজ্য ইস্যু ও আসিয়ানের প্রত্যাশা

যুক্তরাষ্ট্র আসিয়ানের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হওয়ায় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আগস্ট থেকে ট্রাম্প প্রশাসন ১০% থেকে ৪০% পর্যন্ত ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপ করেছে, যা অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় চাপ সৃষ্টি করেছে।

তবুও সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তৃতাগুলোতে বাণিজ্য নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। বরং গভীর সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ পায়।

অনোয়ার ইব্রাহিমের আশাবাদ ও কৃতজ্ঞতা

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী অনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্যমী অর্থনীতি আমাদের সবার জন্য এক সোনালি যুগ আনতে পারে।”
তিনি আরও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “গাজা যুদ্ধ বন্ধে আপনার সমন্বিত পরিকল্পনা বিশ্বকে নতুন আশার আলো দিয়েছে—যা প্রমাণ করে, কূটনীতি ও দৃঢ়তা দিয়েও সবচেয়ে জটিল সংঘাতের সমাধান সম্ভব।”

গুরুত্বপূর্ণ খনিজে যুক্তরাষ্ট্র—মালয়েশিয়া চুক্তি

সম্মেলনের আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও রেয়ার আর্থস বিষয়ে—একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায়।

চীন যখন রেয়ার আর্থ রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে, তখন মালয়েশিয়া, যেখানে চীনের বাইরে একটি বড় রেয়ার আর্থ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র রয়েছে, বেশ মনোযোগ আকর্ষণ করছে।

Vietnam-US friendship thrives after a quarter of a century – Mega Story

যৌথ বিবৃতি অনুযায়ী, ‘Agreement on Reciprocal Trade’ শিরোনামের এই চুক্তিতে মালয়েশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ বা রেয়ার আর্থ রপ্তানিতে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা কোটা আরোপ করবে না।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে মালয়েশিয়া দ্রুত এই খাতে উন্নয়ন ঘটাবে, উৎপাদন বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি লাইসেন্স দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রে রেয়ার আর্থ ম্যাগনেট বিক্রয়ে কোনো সীমাবদ্ধতা রাখবে না।

যুক্তরাষ্ট্র—ভিয়েতনাম বাণিজ্য কাঠামো

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম একটি নতুন “ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ পারস্পরিক বাণিজ্য কাঠামো” নিয়ে একমত হয়েছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ভিয়েতনাম “যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শিল্প ও কৃষিপণ্যের” জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার দেবে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের পণ্যে ২০% শুল্ক বজায় রাখবে, তবে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পরে ঘোষণা করা হবে।

আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত

আসিয়ান সম্মেলনের এই ঘোষণা স্পষ্ট করে যে, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শুধু বাণিজ্য নয়, বরং কৌশলগত সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান নিতে চায়।

চীন যখন তার প্রভাব আরও দৃঢ় করছে, তখন ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আবারও অঞ্চলে নিজস্ব অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে।

 

#আন্তর্জাতিকসম্পর্ক #আসিয়ানসম্মেলন #ট্রাম্প #যুক্তরাষ্ট্রচীন #মালয়েশিয়া #ভিয়েতনাম #রেয়ারআর্থচুক্তি #ইন্দোপ্যাসিফিক