রবিবার থেকে থাইল্যান্ডে শুরু হয়েছে প্রাক্তন রানী সিরিকিটের বছরব্যাপী শেষকৃত্য অনুষ্ঠান। ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেসে তাঁর মরদেহ এক বছর শায়িত থাকবে, এরপর সম্পন্ন হবে দাহক্রিয়া। শোকাবিষ্ট থাই নাগরিকেরা রাজকীয় শোভাযাত্রায় শেষ শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীতে সমবেত হয়েছেন।
ব্যাংককে আনুষ্ঠানিক শেষযাত্রার সূচনা
রাজধানীর গ্র্যান্ড প্যালেসে রবিবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রানী সিরিকিটের শেষযাত্রা। দেশজুড়ে শোকের আবহ বিরাজ করছে। সর্বত্র ঝুলছে সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো রাজদম্পতির প্রতিকৃতি, আর গণমাধ্যমে চলছে প্রশংসায় ভরা প্রতিবেদন।
জাতির মাতৃমূর্তির প্রস্থান
৯৩ বছর বয়সে শুক্রবার গভীর রাতে প্রয়াত হন প্রাক্তন রানী সিরিকিট—বর্তমান রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মা এবং থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম শাসক রাজা ভূমিবল আদুল্যাদেজের স্ত্রী।

রানী সিরিকিটের প্রয়াণে গোটা দেশ শোকে স্তব্ধ। কালো-সাদা ফুলে সজ্জিত বিলবোর্ড, সুপারমার্কেটের টেলিভিশন ও ব্যাংকিং অ্যাপে ফুটে উঠছে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা।
২৪ বছর বয়সী থানাবুর্দি শ্রীমুয়াং বলেন, “আমি ক্লান্ত নই, বরং গর্বিত যে শেষবারের মতো রানীর বিদায়ের অংশ হতে পারছি।”
শোকের পরিবেশে থাইল্যান্ড
রবিবার বিকেলে রানী সিরিকিটের মরদেহ চুলালংকর্ন হাসপাতাল থেকে সংক্ষিপ্ত শোভাযাত্রায় গ্র্যান্ড প্যালেসে পৌঁছায়। সেখানে তিনি এক বছর শায়িত থাকবেন।
দেশজুড়ে নাগরিকদের কালো বা ম্লান রঙের পোশাক পরার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়াও ৯০ দিনের জন্য উল্লাসপূর্ণ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। টেলিভিশন উপস্থাপকরা কালো পোশাকে সংবাদ দিচ্ছেন, অনলাইন সংবাদমাধ্যমও পরিবর্তন করেছে রঙসজ্জা।
রাজধানীর দোকান ও রাস্তায় দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ঐতিহ্যবাহী শোকরঙের পোশাক পরেছেন। এমনকি ব্যাংককের রাজামঙ্গল স্টেডিয়ামে কে–পপ ব্যান্ড ব্ল্যাকপিঙ্কের কনসার্টেও দর্শকদের কালো পোশাক পরার আহ্বান জানানো হয়।
‘মাদার অব দ্য নেশন’—এক ঐতিহ্যের প্রতীক
রবিবার সকাল থেকেই শত শত শোকাহত নাগরিক গ্র্যান্ড প্যালেসে প্রবেশ করে রাজমাতার প্রতিকৃতির সামনে শ্রদ্ধা নিবেদন করছিলেন।
৫২ বছর বয়সী তাকসিনা পুত্তিসান বলেন, “এই দিনটি একদিন আসবেই জানতাম, তবুও আজ গভীর শোক অনুভব করছি। থাই জনগণের প্রতি তাঁর দয়া ও সহানুভূতি চিরকাল মনে থাকবে।”

৬৬ বছরের দাম্পত্য জীবনে রানী সিরিকিট নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন দুই ভূমিকায়—রাজসঙ্গিনী হিসেবে আভিজাত্যপূর্ণ ফ্যাশন আইকন এবং মাতৃমূর্তি হিসেবে জনদরদী নারীতে। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম তাঁকে প্রায়ই তুলনা করত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি জ্যাকলিন কেনেডির সঙ্গে।
কূটনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
রানীর প্রয়াণের দিন প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চারনভিরাকুল আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নিতে মালয়েশিয়া যাত্রা বিলম্বিত করেন। যদিও পরে তিনি চুক্তি স্বাক্ষরে যোগ দেন—যেখানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “থাইল্যান্ডের মহান জনগণের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।”
রাজা ভূমিবল আদুল্যাদেজের রাজত্বকাল (১৯৪৬—২০১৬) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু হয়ে ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। যদিও প্রায় নয় বছর আগে তাঁর পুত্র সিংহাসনে আসীন হন, অনেক থাই নাগরিক আজও তাঁকে এবং রানী সিরিকিটকে জাতির স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে দেখেন।
রাজপরিবারের নীরব অধ্যায়
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রানী সিরিকিট জনসমক্ষে আসা বন্ধ করেছিলেন। রাজপরিবারকে নিয়ে কড়া লেস-মাজেস্টি আইনের কারণে তাঁর ব্যক্তিগত অবস্থা সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ সীমিত ছিল।

রাজপ্রাসাদের বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০১৯ সাল থেকে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালে তিনি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন এবং এ মাসে রক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত হন।
তবে ১৯৬০-এর দশকে তাঁর উজ্জ্বল দিনগুলোয় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও তারকাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, এমনকি এলভিস প্রেসলির সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। একইসঙ্গে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামীণ নারীদের জীবিকা উন্নয়নে কাজ করেন।
তাঁকে বলা হতো ‘জাতির জননী’, এবং তাঁর জন্মদিনকে ঘোষণা করা হয়েছিল থাইল্যান্ডের জাতীয় মা দিবস হিসেবে।
#থাইল্যান্ড #রানী_সিরিকিট #ব্যাংকক #রাজপরিবার #আন্তর্জাতিক_সংবাদ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















