০৯:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী হত্যায় যাবজ্জীবন হালাল পণ্যের মান ও স্বীকৃতিতে বাংলাদেশ–পাকিস্তান এমওইউ স্বাক্ষর নিরপেক্ষতা হারিয়েছে উইকিপিডিয়া—ল্যারি স্যাঙ্গারের নেতৃত্বে রক্ষণশীল অভিযাত্রা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় শিল্প ও সেবা খাতে পরিবর্তন, প্রয়োজন শিক্ষিত, দক্ষ মানবসম্পদ ঢাকার সব উড়ালসড়ক ও মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাডের নিরাপত্তা যাচাইয়ে হাইকোর্টে আবেদন হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে ওয়ার্কওভার কাজ শুরু—১৫ এমএমসিএফডি গ্যাস যোগের আশা ২৪ ঘণ্টায় আরও ৬ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৮৩ জন শারিয়তপুরে চিরনিদ্রায় আবুল কালাম—ফার্মগেটে মেট্রো পিলার থেকে পড়ে নিহত বিকাশ ব্যবহারকারীদের জন্য বিদেশ ভ্রমণ জেতার সুযোগ ও সর্বোচ্চ ৪০০০ টাকার ছাড় রাজসাহীর ইতিহাস (পর্ব -৪৫)

চীনে বেইজিউ বাজারে নতুন মোড়—অর্থনৈতিক মন্দা ও কঠোরতা নীতিতে নিম্ন-অ্যালকোহল পানীয়ের দিকে ঝোঁক

অর্থনৈতিক মন্দা ও পরিবর্তিত সংস্কৃতি

চীনের ঐতিহ্যবাহী মদ বেইজিউ দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক সম্পর্ক ও আনুষ্ঠানিক আয়োজনে অপরিহার্য উপাদান ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক পানীয় সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ও সরকারি ব্যয়ের ওপর কঠোরতা নীতির কারণে এর চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।

অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে চীনা সরকার ব্যয়সংযম ও দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ আরও জোরদার করেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সরকারি ভোজসভা ও করপোরেট অতিথেয়তায় ব্যবহৃত উচ্চমাত্রার অ্যালকোহলিক পানীয়ের ওপর।


নিম্ন-অ্যালকোহল পানীয়ের দিকে উৎপাদকদের ঝোঁক

চীনের অন্যতম শীর্ষ বেইজিউ উৎপাদক উলিয়াংয়ে ইবিন সম্প্রতি ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ নামে একটি নতুন নিম্ন-অ্যালকোহল বেইজিউ বাজারে এনেছে। আগস্টের শেষ দিকে উন্মোচিত এই পানীয়ের অ্যালকোহল মাত্রা ২৯%, যেখানে তাদের মূল পণ্যগুলো সাধারণত ৫২% এ. বি. ভি.।

নীল রঙের বিলাসবহুল প্যাকেজিংয়ে বাজারজাত এই পণ্যের দাম ৩৯৯ ইউয়ান (প্রায় ৫৬ ডলার)। এটি গলার জ্বালাভাবহীন হালকা স্বাদের জন্য তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

দালিয়ানের ৩৪ বছর বয়সী এক ভোক্তা বলেন, “এই নতুন বেইজিউ নারীদের সঙ্গে ডিনারের জন্য উপযুক্ত—সহজে পান করা যায় এবং বোতলটিও আধুনিক।”


প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিক্রিয়া

বেইজিউ শিল্পে নিম্ন-অ্যালকোহল সংস্করণের প্রবণতা বাড়ছে। প্রাচীনতম উৎপাদকদের একজন লুঝো লাওজিয়াও জুন মাসে ঘোষণা করেছে, তারা ২৮% এ. বি. ভি. পণ্য তৈরি করছে। তাদের বিখ্যাত ব্র্যান্ড গুওজিয়াও ১৫৭৩-এর অধীনেই এটি বাজারে আসবে।

এছাড়া, জিয়াংসু ইয়াংহে ব্রুয়ারি এবং জিউগুই লিকারও নিম্ন-অ্যালকোহল বেইজিউ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে।


রাজনৈতিক নীতিতে বাজারে মন্দা

২০০০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময় বেইজিউর বিক্রি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সরকারি কর্মকর্তা ও পার্টি নেতাদের মধ্যে “মিতব্যয়ী নীতি” অনুসরণের নির্দেশে বিক্রির হার কমতে থাকে।

চলতি বছরের মে মাসে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ব্যয়বহুল খাবার ও অ্যালকোহল নিষিদ্ধের নতুন আদেশ বাজারে আরও ধাক্কা দেয়। এর ফলে, পার্টি ও সরকারি কর্মকর্তারা বেইজিউ পরিবেশন থেকে বিরত থাকছেন রাজনৈতিক জটিলতার আশঙ্কায়।


মজার কৌশল ও ভয়ের সংস্কৃতি

চীনে নিযুক্ত এক জাপানি ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভোজে অংশ নিতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, ‘নংফু স্প্রিং’ নামের পানির বোতলে আসলে বেইজিউ ঢালা ছিল—যাতে বাইরের কেউ বুঝতে না পারে।

আরেক ব্যবসায়ী জানান, এক সরকারি অনুষ্ঠানে অ্যালকোহল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, এমনকি ফলের রস হাতে নিয়ে ছবি তোলাও নিষেধ করা হয়েছিল, যাতে কেউ ভুলভাবে তা মদ্যপান হিসেবে ব্যাখ্যা না করে।


প্রচার ও জনমতের ভারসাম্য

চীনা সরকারি গণমাধ্যমগুলো সম্প্রতি “সব ধরনের খাবার ও পানীয় নিষিদ্ধ নয়” শিরোনামে প্রচারণা চালাচ্ছে, যাতে অতিরিক্ত ভয় বা ভুল ব্যাখ্যা কমে। তবে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, মিতব্যয়ী নীতির প্রভাব সহজে কাটছে না।


তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে নতুন ব্র্যান্ডিং

সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উলিয়াংয়ে ইবিনের ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ তরুণদের জন্য নিজস্ব উপভোগের পানীয় হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে—যা বেইজিউর ঐতিহ্যবাহী “অফিস ডিনার” ভাবমূর্তিকে বদলে দিয়েছে।

সবচেয়ে বড় উৎপাদক কুইচো মাওতাই ইতিমধ্যেই তরুণ গ্রাহকদের আকর্ষণে আইসক্রিম ও ক্যাফে লাটের মতো পণ্য বাজারে এনেছে। ২০২৪ সালে তারা ৬% অ্যালকোহলযুক্ত ফলের লিকারও চালু করে। তবে এখনো পর্যন্ত তারা মূল বেইজিউর নিম্ন-অ্যালকোহল সংস্করণ আনেনি।


বাজারে নতুন মোড়ের সম্ভাবনা

কুইচো মাওতাইয়ের প্রধান বেইজিউ ‘ফ্লাইং ফেয়ারি’-এর দাম একসময় ছিল ৩,০০০ ইউয়ান। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ১,৮০০ ইউয়ানে। মে মাসের পর থেকে দাম কমার হার আরও বেড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি মাওতাই নিম্ন-অ্যালকোহল সংস্করণ তৈরিতে নামে, তবে তা চীনের বেইজিউ সংস্কৃতিতে এক বড় মোড় আনবে—যেখানে ঐতিহ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবর্তন মিলেমিশে এক নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।


ট্যাগ:

#চীন #বেইজিউ #অ্যালকোহল #অর্থনীতি #মিতব্যয়নীতি #উলিয়াংয়ে #মাওতাই #চীনা_সংস্কৃতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী হত্যায় যাবজ্জীবন

চীনে বেইজিউ বাজারে নতুন মোড়—অর্থনৈতিক মন্দা ও কঠোরতা নীতিতে নিম্ন-অ্যালকোহল পানীয়ের দিকে ঝোঁক

০৬:২৪:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

অর্থনৈতিক মন্দা ও পরিবর্তিত সংস্কৃতি

চীনের ঐতিহ্যবাহী মদ বেইজিউ দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক সম্পর্ক ও আনুষ্ঠানিক আয়োজনে অপরিহার্য উপাদান ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক পানীয় সংস্কৃতিতে পরিবর্তন ও সরকারি ব্যয়ের ওপর কঠোরতা নীতির কারণে এর চাহিদা হ্রাস পেয়েছে।

অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে চীনা সরকার ব্যয়সংযম ও দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ আরও জোরদার করেছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে সরকারি ভোজসভা ও করপোরেট অতিথেয়তায় ব্যবহৃত উচ্চমাত্রার অ্যালকোহলিক পানীয়ের ওপর।


নিম্ন-অ্যালকোহল পানীয়ের দিকে উৎপাদকদের ঝোঁক

চীনের অন্যতম শীর্ষ বেইজিউ উৎপাদক উলিয়াংয়ে ইবিন সম্প্রতি ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ নামে একটি নতুন নিম্ন-অ্যালকোহল বেইজিউ বাজারে এনেছে। আগস্টের শেষ দিকে উন্মোচিত এই পানীয়ের অ্যালকোহল মাত্রা ২৯%, যেখানে তাদের মূল পণ্যগুলো সাধারণত ৫২% এ. বি. ভি.।

নীল রঙের বিলাসবহুল প্যাকেজিংয়ে বাজারজাত এই পণ্যের দাম ৩৯৯ ইউয়ান (প্রায় ৫৬ ডলার)। এটি গলার জ্বালাভাবহীন হালকা স্বাদের জন্য তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

দালিয়ানের ৩৪ বছর বয়সী এক ভোক্তা বলেন, “এই নতুন বেইজিউ নারীদের সঙ্গে ডিনারের জন্য উপযুক্ত—সহজে পান করা যায় এবং বোতলটিও আধুনিক।”


প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিক্রিয়া

বেইজিউ শিল্পে নিম্ন-অ্যালকোহল সংস্করণের প্রবণতা বাড়ছে। প্রাচীনতম উৎপাদকদের একজন লুঝো লাওজিয়াও জুন মাসে ঘোষণা করেছে, তারা ২৮% এ. বি. ভি. পণ্য তৈরি করছে। তাদের বিখ্যাত ব্র্যান্ড গুওজিয়াও ১৫৭৩-এর অধীনেই এটি বাজারে আসবে।

এছাড়া, জিয়াংসু ইয়াংহে ব্রুয়ারি এবং জিউগুই লিকারও নিম্ন-অ্যালকোহল বেইজিউ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছে।


রাজনৈতিক নীতিতে বাজারে মন্দা

২০০০-এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সময় বেইজিউর বিক্রি ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সরকারি কর্মকর্তা ও পার্টি নেতাদের মধ্যে “মিতব্যয়ী নীতি” অনুসরণের নির্দেশে বিক্রির হার কমতে থাকে।

চলতি বছরের মে মাসে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ব্যয়বহুল খাবার ও অ্যালকোহল নিষিদ্ধের নতুন আদেশ বাজারে আরও ধাক্কা দেয়। এর ফলে, পার্টি ও সরকারি কর্মকর্তারা বেইজিউ পরিবেশন থেকে বিরত থাকছেন রাজনৈতিক জটিলতার আশঙ্কায়।


মজার কৌশল ও ভয়ের সংস্কৃতি

চীনে নিযুক্ত এক জাপানি ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভোজে অংশ নিতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, ‘নংফু স্প্রিং’ নামের পানির বোতলে আসলে বেইজিউ ঢালা ছিল—যাতে বাইরের কেউ বুঝতে না পারে।

আরেক ব্যবসায়ী জানান, এক সরকারি অনুষ্ঠানে অ্যালকোহল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, এমনকি ফলের রস হাতে নিয়ে ছবি তোলাও নিষেধ করা হয়েছিল, যাতে কেউ ভুলভাবে তা মদ্যপান হিসেবে ব্যাখ্যা না করে।


প্রচার ও জনমতের ভারসাম্য

চীনা সরকারি গণমাধ্যমগুলো সম্প্রতি “সব ধরনের খাবার ও পানীয় নিষিদ্ধ নয়” শিরোনামে প্রচারণা চালাচ্ছে, যাতে অতিরিক্ত ভয় বা ভুল ব্যাখ্যা কমে। তবে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, মিতব্যয়ী নীতির প্রভাব সহজে কাটছে না।


তরুণ প্রজন্মকে লক্ষ্য করে নতুন ব্র্যান্ডিং

সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উলিয়াংয়ে ইবিনের ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’ তরুণদের জন্য নিজস্ব উপভোগের পানীয় হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে—যা বেইজিউর ঐতিহ্যবাহী “অফিস ডিনার” ভাবমূর্তিকে বদলে দিয়েছে।

সবচেয়ে বড় উৎপাদক কুইচো মাওতাই ইতিমধ্যেই তরুণ গ্রাহকদের আকর্ষণে আইসক্রিম ও ক্যাফে লাটের মতো পণ্য বাজারে এনেছে। ২০২৪ সালে তারা ৬% অ্যালকোহলযুক্ত ফলের লিকারও চালু করে। তবে এখনো পর্যন্ত তারা মূল বেইজিউর নিম্ন-অ্যালকোহল সংস্করণ আনেনি।


বাজারে নতুন মোড়ের সম্ভাবনা

কুইচো মাওতাইয়ের প্রধান বেইজিউ ‘ফ্লাইং ফেয়ারি’-এর দাম একসময় ছিল ৩,০০০ ইউয়ান। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ১,৮০০ ইউয়ানে। মে মাসের পর থেকে দাম কমার হার আরও বেড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি মাওতাই নিম্ন-অ্যালকোহল সংস্করণ তৈরিতে নামে, তবে তা চীনের বেইজিউ সংস্কৃতিতে এক বড় মোড় আনবে—যেখানে ঐতিহ্য, অর্থনীতি ও সামাজিক পরিবর্তন মিলেমিশে এক নতুন ভারসাম্য তৈরি করতে পারে।


ট্যাগ:

#চীন #বেইজিউ #অ্যালকোহল #অর্থনীতি #মিতব্যয়নীতি #উলিয়াংয়ে #মাওতাই #চীনা_সংস্কৃতি #সারাক্ষণ_রিপোর্ট