এআই হাইপ থেকে টিকে থাকার হিসাব
সান ফ্রান্সিসকোতে শুরু হয়েছে টেকক্রাঞ্চ ডিসরাপ্ট ২০২৫, যেখানে প্রায় দশ হাজার অংশগ্রহণকারী—স্টার্টআপ ফাউন্ডার, ভিসি, এবং টেক কর্মী—একটি খুব সোজা বার্তা শুনছে: এআই শুধু শব্দ নয়, এখন প্রমাণ চাই। আয়োজকদের ভাষ্য অনুযায়ী, আগের বছরের ‘সব কিছুর সমাধান চ্যাটবট’ মুড অনেকটাই নেমে এসেছে। তার জায়গায় এসেছে খুব ব্যবহারিক প্রস্তাব: লজিস্টিকস, স্বাস্থ্যসেবা, কমপ্লায়েন্স, আর প্রতিরক্ষা খাতে এআইকে ব্যাকএন্ড অপারেটর বানানো, যাতে কোম্পানি কম লোকেও চলতে পারে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এখন যে স্টার্টআপ ফান্ড পায় তারা সাধারণত এমন প্রোডাক্ট দেখায় যেটার জন্য ইতিমধ্যে টাকা দেওয়া ক্লায়েন্ট আছে, পুনরাবৃত্ত আয় আছে, আর স্পষ্ট ব্যয়-সাশ্রয় দেখানো যায়। শুধু সম্ভাবনা আর পাওয়ারপয়েন্ট দিয়ে আর চলবে না।
সাইবার সিকিউরিটি ও এআই সেফটি নিয়ে প্রথম দিকের আলোচনাগুলো খুব সরাসরি ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ উভয় জায়গায় স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত ব্যবস্থার ওপর রেগুলেটরি নজর বাড়ছে বলে সতর্ক করা হয়। লিগ্যাল, ফিন্যান্স বা কোড রিভিউর জন্য এআই ‘কোপাইলট’ বেচা কোম্পানিগুলোকে জানানো হয়েছে, তাদের এখন থেকেই মডেল কীভাবে ট্রেইন হয়েছে, কোন ডেটা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়—এসব নথিভুক্ত করতে হবে। এটা এখন ডেমো নয়, লাইসেন্স টু অপারেট।
রোবট শ্রমিক, গ্লোবাল টিম
অন্য বড় সুর ছিল রোবোটিক্স। ওয়্যারহাউস বট থেকে মোবাইল ইন্সপেকশন ড্রোন—সবকিছু এখন বিক্রি হচ্ছে ‘নাইট শিফট ছাড়াই নাইট শিফট’ যুক্তিতে। মানে, একই কাজের জন্য রাতভর অতিরিক্ত বেতন দিতে হবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মজুরি চাপ আর দক্ষ জনবলের ঘাটতির পরিপ্রেক্ষিতে এই যুক্তি বড় কর্পোরেট ক্রেতাদের টানছে। হলরুমে করতালির মাঝে আবার কিছু অস্বস্তিও ছিল, কারণ সেই হলরুমেই বসে আছে সম্প্রতি চাকরি হারানো বড় টেককর্মীরা।
আরেকটি স্পষ্ট ট্রেন্ড হলো “ডিফল্ট গ্লোবাল”। নতুন ফাউন্ডাররা বলছেন, তারা শুরু থেকেই টিম ছড়িয়ে দিচ্ছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত, যেন বেতন ব্যয় কমে, সময়সীমা বাড়ে, আর মার্কিন রাজনৈতিক ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা থাকে। বিনিয়োগকারীরা একে এখন বুদ্ধিমান ঝুঁকি-পরিচালনা বলছেন, বিলাসিতা নয়।
ডিসরাপ্টের মুড তাই চকচকে নয়, শৃঙ্খলাপূর্ণ। বার্তাটা পরিষ্কার: শুধু ‘আমাদের এআই আছে’ বলা যথেষ্ট নয়। দেখাতে হবে এআই কীভাবে খরচ কমাবে, রেগুলেশন সামলাবে, আর সীমান্তের বাইরে কত দ্রুত বাড়তে পারবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















