মার্কিন কৌশল: শান্তি চুক্তি মানে খনিজ চুক্তি
ওয়াশিংটন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যে নতুন অর্থনৈতিক সমঝোতা এগিয়ে দিচ্ছে তা শুধু শুল্ক ছাড় বা বিমান কেনাবেচা নয়। এখন মূল কথা ‘ক্রিটিক্যাল মিনারেলস’—কোবাল্ট, গ্রাফাইট, ভ্যানাডিয়াম, রেয়ার আর্থ উপাদান—যেগুলো দিয়ে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি, শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থা, এমনকি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি চলে। যুক্তরাষ্ট্র থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে এমন কাঠামো সাজাচ্ছে যেখানে সীমান্ত সংঘাত থামানো, ক্রস-বর্ডার অপরাধ দমন ও মাইন পরিষ্কারকরণ একসঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে মার্কিন বিনিয়োগ এবং বাজারে প্রাধান্যের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে। বার্তাটা সোজা: আপনি এলাকা শান্ত রাখবেন এবং সাপ্লাই চেইনকে চীনের বদলে আমাদের দিকে ঘুরিয়ে দেবেন, আমরা টাকাও দেব আর বাজারও খুলব।
এটি শুধু কাগুজে প্রতিশ্রুতি নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে যে মিলিয়ে প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন ডলারের খনিজপ্রকল্প ‘আনলক’ করা হবে, যার জন্য দুই পক্ষ থেকেই অন্তত এক বিলিয়ন ডলার ছয় মাসের মধ্যে নামবে বলে বলা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ভাষ্য, উত্তর-পশ্চিম কুইন্সল্যান্ডে ভ্যানাডিয়াম ও অন্যান্য কৌশলগত খনিজের বিশাল মজুদ পড়ে আছে, যা দ্রুত উন্নয়নের অপেক্ষায়। মূল লক্ষ্য হলো ইলেকট্রিক গাড়ি, ব্যাটারি স্টোরেজ ও প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য কাঁচামাল এমন উৎস থেকে নেওয়া যেখানে চীনের একচেটিয়া প্রভাব কম। দীর্ঘমেয়াদে এর মানে হচ্ছে ব্যাটারি ও রেয়ার আর্থ প্রসেসিংয়ে চীনের প্রাধান্য ভাঙা।
সবুজ জ্বালানি বনাম স্থানীয় ঝুঁকি
এই মুহূর্তে এটিকে জলবায়ু ইস্যু হিসেবেও মার্কিন প্রশাসন তুলে ধরছে। বলা হচ্ছে, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ও ব্যাটারি সাপ্লাই সুরক্ষিত করতে গেলে “বিশ্বস্ত অংশীদারদের” ওপর নির্ভর করতে হবে, প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির ওপর নয়। তবে স্থানীয় বাস্তবতা এত সরল নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ার কমিউনিটিরা বহুদিন ধরে বলে আসছে যে রেয়ার আর্থ ও ভ্যানাডিয়াম উত্তোলন মানে পানি দূষণ, বর্জ্য ঝুঁকি ও জমি দখলের অভিযোগ বাড়া। পরিবেশবাদীরা মনে করেন “সবুজ সাপ্লাই চেইন” কথাটা তখনই সৎ শোনাবে যখন উত্তোলনপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকবে, শুধু লেবেল পাল্টালেই হবে না।
একই সঙ্গে আসিয়ান দেশগুলোও এই খনিজকে এখন কূটনৈতিক মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করছে। থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া বলছে—তাদের সীমান্ত স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা, মাইন অপসারণ ও সীমান্ত ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের বিনিময়ে তারা চায় শুল্ক ছাড় ও শিল্প বিনিয়োগ। কম্বোডিয়া, যে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের চাপে যুদ্ধবিরতির কাগজে সই করেছে, এখন নিজেকে তুলে ধরছে “নিরাপদ জোন” হিসেবে, যেখানে মার্কিন সাপ্লাই চেইন ঢুকতে পারে। ফলাফল হলো—শান্তি, বাজারে প্রবেশাধিকার ও জলবায়ু রূপান্তর আর আলাদা দর-কষাকষি নয়, এক প্যাকেজ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















