যুদ্ধবিরতির ভেতরেই হামলা নিয়ে তর্ক
মার্কিন-মধ্যস্থ যুদ্ধবিরতির পর গাজায় বড় মাপের লড়াই থেমেছে, কিন্তু উত্তেজনা থামেনি। ইসরায়েল জানায়, তারা সপ্তাহান্তে এক ইসলামিক জিহাদ সদস্যকে লক্ষ্য করে “টার্গেটেড স্ট্রাইক” চালিয়েছে; ওই ব্যক্তিকে ভবিষ্যৎ হামলার পরিকল্পনাকারী বলে দাবি করা হয়েছে। গাজার চিকিৎসাকর্মীরা বলেন, এতে শুধু অভিযুক্ত যোদ্ধা নয়, আরও লোকজন হতাহত হয়েছে। ঘটনাটি দ্রুত ক্ষোভ ছড়ায় গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে, যেখানে জানাজা ও কবরের পাশে মানুষ বলছে—যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ওয়াশিংটন এটিকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন বলে দেখছে না। তার ব্যাখ্যা, যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও ইসরায়েল “তাৎক্ষণিক আত্মরক্ষা”-র ক্ষেত্রে সীমিত অ্যাকশন নিতে পারে। রুবিও দাবি করেন, মূল লক্ষ্য এখনো একই—সহায়তা ঢোকানো, অবিস্ফোরিত বোমা ও মাইন সরানো, বন্দি ও মরদেহ বিনিময় এগিয়ে নেওয়া, এবং ইসরায়েলি সেনা ও ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলোর বড় ধরনের সংঘর্ষ ঠেকানো। ট্রাম্প প্রশাসন এটিকেই তাদের গাজা পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে তুলে ধরছে, যেখানে জিম্মি বিনিময়, ধাপে ধাপে সেনা সরে যাওয়া এবং পুনর্গঠনের টাকার প্রতিশ্রুতি একসঙ্গে বাঁধা।
অমীমাংসিত ভবিষ্যৎ
এ যুদ্ধবিরতি এসেছে এমন এক যুদ্ধে যার দুই বছরে গাজার উত্তরাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, লক্ষাধিক মানুষ বারবার ঘর হারিয়েছে, আর ফিলিস্তিনি প্রাণহানির সংখ্যা কয়েক দশকে পৌঁছেছে। এখন হাজার হাজার বাসিন্দা ধ্বংস হওয়া এলাকায় ফিরছেন। অনেকের বাড়ি নেই, পানির লাইন নেই, জ্বালানি নেই—কিন্তু রাস্তার ফাটল আর ভাঙা দেয়ালে এখনো লুকিয়ে আছে অবিস্ফোরিত বোমা। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধবিরতি জারি থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল এখনো জ্বালানি ও সহায়তা ট্রাকের প্রবেশ কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে।
ইসরায়েল চায় হামাস সম্পূর্ণভাবে নিরস্ত্র হোক এবং যেসব ইসরায়েলি বন্দি অবস্থায় মারা গেছে তাদের দেহাবশেষ হস্তান্তর করুক। হামাস বলছে, নিরস্ত্রীকরণের আগে তাকে গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো ও নিরাপত্তা গ্যারান্টি জানতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা হলো এক পর্যায়ে কোনো আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা উপস্থিতি আনা—তবে মার্কিন সেনা নয়। আরব কূটনীতিকেরা সতর্ক করছেন, এই বড় প্রশ্নগুলো যদি ঝুলে থাকে, তাহলে “যুদ্ধবিরতি” খুব দ্রুতই ড্রোন হামলা, প্রতিশোধমূলক গ্রেপ্তার আর অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী সংঘর্ষে গলে যেতে পারে। আপাতত কাগজে শান্তি আছে, মাটিতে টানটান স্নায়ু যুদ্ধও আছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















