জ্বালানি বাজারকে কূটনৈতিক অস্ত্র করা
রয়টার্স জানাচ্ছে, সপ্তাহের শুরুতে ব্রেন্ট ক্রুড প্রায় ৬৬ ডলার আর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) ৬১ ডলারের ওপরে লেনদেন হয়েছে। কারণ দুটি। প্রথমত, ওয়াশিংটন ও বেইজিং বলছে তারা এমন এক বাণিজ্যিক ফ্রেমওয়ার্কে একমত হয়েছে, যাতে নতুন সর্বাত্মক মার্কিন শুল্ক আপাতত ঠেকানো যাবে এবং চীনের পক্ষ থেকে ‘রেয়ার আর্থ’ বা বিরল খনিজের রপ্তানি সীমিত করার হুমকিও সাময়িকভাবে গুটি যাবে। বিনিয়োগকারীরা এটিকে বৈশ্বিক চাহিদার জন্য স্বস্তির সংকেত হিসেবে নিয়েছে, কারণ যখন সরবরাহ শৃঙ্খল শান্ত থাকে তখন জ্বালানির চাহিদা হঠাৎ ভেঙে পড়ে না।
দ্বিতীয় কারণ রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ রসনেফট ও লুকঅয়েলের মতো বড় রুশ জ্বালানি কোম্পানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে। এটি শুধু মস্কোর যুদ্ধতহবিল চেপে ধরার কৌশল নয়; এটাও একটি বার্তা যে পশ্চিমা জোট এখন জ্বালানি বাজারকেই ভূরাজনৈতিক চাপ হিসেবে ব্যবহার করতে রাজি। নিষেধাজ্ঞার পর তেলের দামে যে লাফ দেখা গেছে, তা দেখাচ্ছে জ্বালানি এখন সরাসরি পররাষ্ট্র নীতির টুল।
ভবিষ্যৎ শীত, ভবিষ্যৎ বিল
তবে এই দামকাঠামো স্থির নয়। যদি রাশিয়া ঘুরপথে তার তেল বিক্রি চালিয়ে যায়, অতিরিক্ত সরবরাহ আবার বাজারে ঢুকে যেতে পারে এবং দাম নেমে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে ভোক্তারা—এশিয়া, ইউরোপ, এমনকি বাংলাদেশ পর্যন্ত—কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে, কিন্তু ওয়াশিংটনের রাশিয়া-চাপ কৌশল দুর্বল হবে।
এদিকে মার্কিন ট্রেজারি বলছে, বেইজিংয়ের সঙ্গে এই নতুন বোঝাপড়ার আরেকটি লক্ষ্য হলো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের প্রবাহ সচল রাখা—কোবাল্ট, গ্রাফাইট, রেয়ার আর্থ—যেগুলো ছাড়া ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারি, গ্রিড ব্যাকআপ স্টোরেজ এবং হাই-এন্ড চিপস বানানো যায় না। মানে, জলবায়ু রূপান্তর (পরিষ্কার জ্বালানি দিকে সরে যাওয়া), সাপ্লাই চেইন সিকিউরিটি এবং রাশিয়ার ওপর চাপ—সব একটিমাত্র চুক্তির ছায়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। শীতকালীন জ্বালানি বিল কত বাড়বে, ব্যাটারি কারখানা কোথায় গড়ে উঠবে, এমনকি সামরিক সরঞ্জামের কাঁচামাল কোন ব্লক নিয়ন্ত্রণ করবে—সেটা এখন নির্ভর করছে এই তেল-খনিজ-কূটনীতি ত্রিভুজের ওপর।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















