০৬:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
১,৭১১ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা—দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য কূটনীতিতে অগ্রগতি ট্রাম্প–তাকাইচির নতুন যুগের অঙ্গীকার আধুনিক শিল্পের দুই পথপ্রদর্শকের নতুন ব্যাখ্য – – -এক যুগল সংলাপের পুনর্নির্মাণ তাকাইচির সঙ্গে ট্রাম্পের বার্তা—চীনের আগ্রাসনের মুখে জোটের পুনর্জাগরণ ইউরোপের দুর্বলতা, মার্কিন বিশ্বাসযোগ্যতা ও নাতাশা পির্চ মুসারের কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য আশার মাঝেই রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পর্যবেক্ষণ যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য আশায় স্বর্ণের চাহিদা কমেছে চলচ্চিত্রের স্মৃতিতে জাগ্রত উপকূল শহর , সমুদ্র ও নস্টালজিয়া ভাস্কর্যগুলো বর্ণবাদের প্রতীক নয় ,আমেরিকার নতুন আত্মজিজ্ঞাসার আয়না। প্রযুক্তি শেয়ারে উত্থানের পর এশীয় বাজারে স্থিতি, সোনার দাম ছুঁয়েছে রেকর্ড

ভারত–চীন সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু—বাণিজ্য ও কূটনীতিতে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথ

পাঁচ বছর পর পুনরায় উড়ান

পাঁচ বছরের বিরতির পর ভারত ও চীনের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়েছে। এই পদক্ষেপকে দুই এশীয় পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্কের এক প্রতীকী অগ্রগতি এবং বাস্তবিকভাবে বাণিজ্য, পর্যটন ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রবিবার কলকাতা থেকে গুয়াংজু পর্যন্ত প্রথম ফ্লাইট উড্ডয়ন করেছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের বিমান সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার সূচনা করে। কোভিড–১৯ মহামারি এবং ২০২০ সালের মে–জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর এই রুট স্থগিত ছিল।

শাংহাই–নয়াদিল্লি রুটে ফ্লাইট চালু হবে ৯ নভেম্বর থেকে, সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “এখন চীন ও ভারতের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বাস্তবে পরিণত হয়েছে।” ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জানিয়েছে, এটি দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়াবে এবং দ্বিপাক্ষিক বিনিময় স্বাভাবিকীকরণে সহায়ক হবে।

Image of IndiGo flight used for representational purposes.

ইন্ডিগোর নেতৃত্বে নতুন আকাশপথ

ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বিমানসংস্থা ইন্ডিগোর প্রথমবারের মতো চীনে দৈনিক সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করেছে। কলকাতা–গুয়াংজু রুটে প্রতিদিন এয়ারবাস A320neo মডেলের বিমান চলবে। এছাড়া ১০ নভেম্বর থেকে নয়াদিল্লি–গুয়াংজু রুটেও ফ্লাইট চালু হবে।

ইন্ডিগোর বিবৃতিতে বলা হয়, এই রুটগুলো ভারত–চীন বাণিজ্য ও পর্যটনের বন্ধন পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। সংস্থাটি ভবিষ্যতে দিল্লি–শাংহাই সংযোগ চালুরও পরিকল্পনা করছে, যা নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ভারতীয় চেম্বার অব কমার্সের প্রধান রাজীব সিং বলেন, “সরাসরি বিমান সংযোগ লজিস্টিক ও পরিবহন সময় কমিয়ে দেবে, বিশেষ করে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি বড় সুবিধা হবে।”

সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক অগ্রগতি

গালওয়ান সংঘর্ষের পর ধীরে ধীরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করে। দীর্ঘ দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সেই সীমান্ত সংঘাতের পরও, ভারত ও চীন উভয়েই সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে সতর্কভাবে এগোচ্ছে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে দুই দেশ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (LAC) বরাবর যৌথ টহল সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, যা পারস্পরিক আস্থা পুনর্গঠনের একটি মোড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়।

India, China to resume direct flights after 5 years as relations thaw | Aviation News | Al Jazeera

বাণিজ্যে ইতিবাচক ইঙ্গিত

ফ্লাইট পুনরায় চালুর এই পদক্ষেপ আসে এমন এক সময়ে, যখন দুই দেশের নেতারা—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং—রাশিয়া ও চীনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের চীন থেকে আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। অপরদিকে, চীনে ভারতের রপ্তানি ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় — বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী।

কলকাতার চায়নাটাউনে এই সিদ্ধান্তকে আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানানো হয়েছে। ট্যাংরা এলাকার কমিউনিটি নেতা চেন খোই কুই বলেন, “আমাদের মতো যারা চীনে আত্মীয়স্বজন রাখে, তাদের জন্য এটি দারুণ সুখবর।”

নতুন আস্থা ও সহযোগিতার অধ্যায়

বিশ্লেষকদের মতে, আকাশপথ পুনরায় চালু হওয়া শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, বরং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের নতুন আস্থার প্রতীক। এটি দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

# ভারতচীনসম্পর্ক,ফ্লাইটপুনরায়চালু,# গালওয়ানসংঘর্ষ, #ইন্ডিগো,# দ্বিপাক্ষিকবাণিজ্য,# কূটনীতি, #এশিয়ারআন্তর্জাতিকসম্পর্ক

জনপ্রিয় সংবাদ

১,৭১১ পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা—দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য কূটনীতিতে অগ্রগতি

ভারত–চীন সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু—বাণিজ্য ও কূটনীতিতে সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথ

০২:৫৩:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

পাঁচ বছর পর পুনরায় উড়ান

পাঁচ বছরের বিরতির পর ভারত ও চীনের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়েছে। এই পদক্ষেপকে দুই এশীয় পরাশক্তির মধ্যে সম্পর্কের এক প্রতীকী অগ্রগতি এবং বাস্তবিকভাবে বাণিজ্য, পর্যটন ও কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

রবিবার কলকাতা থেকে গুয়াংজু পর্যন্ত প্রথম ফ্লাইট উড্ডয়ন করেছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দেশের বিমান সংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার সূচনা করে। কোভিড–১৯ মহামারি এবং ২০২০ সালের মে–জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর এই রুট স্থগিত ছিল।

শাংহাই–নয়াদিল্লি রুটে ফ্লাইট চালু হবে ৯ নভেম্বর থেকে, সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “এখন চীন ও ভারতের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বাস্তবে পরিণত হয়েছে।” ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জানিয়েছে, এটি দুই দেশের মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ বাড়াবে এবং দ্বিপাক্ষিক বিনিময় স্বাভাবিকীকরণে সহায়ক হবে।

Image of IndiGo flight used for representational purposes.

ইন্ডিগোর নেতৃত্বে নতুন আকাশপথ

ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বিমানসংস্থা ইন্ডিগোর প্রথমবারের মতো চীনে দৈনিক সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করেছে। কলকাতা–গুয়াংজু রুটে প্রতিদিন এয়ারবাস A320neo মডেলের বিমান চলবে। এছাড়া ১০ নভেম্বর থেকে নয়াদিল্লি–গুয়াংজু রুটেও ফ্লাইট চালু হবে।

ইন্ডিগোর বিবৃতিতে বলা হয়, এই রুটগুলো ভারত–চীন বাণিজ্য ও পর্যটনের বন্ধন পুনর্গঠনে সহায়তা করবে। সংস্থাটি ভবিষ্যতে দিল্লি–শাংহাই সংযোগ চালুরও পরিকল্পনা করছে, যা নিয়ন্ত্রক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

ভারতীয় চেম্বার অব কমার্সের প্রধান রাজীব সিং বলেন, “সরাসরি বিমান সংযোগ লজিস্টিক ও পরিবহন সময় কমিয়ে দেবে, বিশেষ করে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের জন্য এটি বড় সুবিধা হবে।”

সীমান্ত উত্তেজনা প্রশমনে কূটনৈতিক অগ্রগতি

গালওয়ান সংঘর্ষের পর ধীরে ধীরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করে। দীর্ঘ দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সেই সীমান্ত সংঘাতের পরও, ভারত ও চীন উভয়েই সম্পর্ক স্থিতিশীল রাখতে সতর্কভাবে এগোচ্ছে।

২০২৪ সালের অক্টোবরে দুই দেশ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (LAC) বরাবর যৌথ টহল সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছায়, যা পারস্পরিক আস্থা পুনর্গঠনের একটি মোড় পরিবর্তন হিসেবে দেখা হয়।

India, China to resume direct flights after 5 years as relations thaw | Aviation News | Al Jazeera

বাণিজ্যে ইতিবাচক ইঙ্গিত

ফ্লাইট পুনরায় চালুর এই পদক্ষেপ আসে এমন এক সময়ে, যখন দুই দেশের নেতারা—ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং—রাশিয়া ও চীনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন।

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের চীন থেকে আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি। অপরদিকে, চীনে ভারতের রপ্তানি ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায় — বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী।

কলকাতার চায়নাটাউনে এই সিদ্ধান্তকে আনন্দের সঙ্গে স্বাগত জানানো হয়েছে। ট্যাংরা এলাকার কমিউনিটি নেতা চেন খোই কুই বলেন, “আমাদের মতো যারা চীনে আত্মীয়স্বজন রাখে, তাদের জন্য এটি দারুণ সুখবর।”

নতুন আস্থা ও সহযোগিতার অধ্যায়

বিশ্লেষকদের মতে, আকাশপথ পুনরায় চালু হওয়া শুধু যাত্রী পরিবহন নয়, বরং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের নতুন আস্থার প্রতীক। এটি দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

# ভারতচীনসম্পর্ক,ফ্লাইটপুনরায়চালু,# গালওয়ানসংঘর্ষ, #ইন্ডিগো,# দ্বিপাক্ষিকবাণিজ্য,# কূটনীতি, #এশিয়ারআন্তর্জাতিকসম্পর্ক